Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

বৈশাখ ১২ ১৪৩১, শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪

ঈদের আনন্দ নেই তাহিরপুরের ৩টি শুল্ক বন্দরে

জাহাঙ্গীর আলম ভুঁইয়া, সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ২৩:৫২, ২৩ জুন ২০১৭

আপডেট: ০০:০০, ৩১ ডিসেম্বর ১৯৯৯

প্রিন্ট:

ঈদের আনন্দ নেই তাহিরপুরের ৩টি শুল্ক বন্দরে

ছবি: বহুমাত্রিক.কম

সুনামগঞ্জ : সুনামগঞ্জের হাওরাঞ্চলের নেই ঈদের আনন্দ নেই। হাওরবাসীর জীবন-জীবিকার একমাত্র এক ফসলী বোরো ধান সর্ম্পূন পানিতে ডুবে যাওয়ায় সর্বত্র হাহাকার বিরাজ করছে। এখন হাওরে নেই মাছ, নেই কোন কাজ। বিকল্প কাজের ব্যবস্থা না থাকায় হাহাকার বিরাজ করছে জেলার তাহিরপুর, জামালগঞ্জ, ধর্মপাশা, দিরাই, শাল্লা, বিশ্বম্ভরপুর সহ ১১টি উপজেলায়।

জেলার তাহিরপুর উপজেলা সীমান্তের অর্থনৈতিক জোন খ্যাত দেশের উত্তর-পূর্ব সীমান্তের মেঘালয় পাহাড়ের পাশে অবস্থিত ব্যস্ততম ৩টি শুল্ক বন্দর (বড়ছড়া,চারাগাঁও,বাগলী) বন্দরগুলো গত বুধবার (৩১ মে, ২০১৭) থেকে বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কর্মহীন হয়ে বিরান ভুমিতে পরিণত হয়েছে সীমান্ত এলাকার চারপাশ। আর সরকার হারাচ্ছে বিপুল পরিমান রাজস্ব।

এই ৩টি শুল্ক বন্দর বন্ধ হওয়ায় এর সাথে জরিত ৫ শতাধিক আমদানিকারক, বন্দরের পাশে অবস্থিত ৩ শতাধিক স্থানীয় ছোট বড় শাড়ী, কাপড়সহ বিভিন্ন ব্যবসায়ী ও কর্মরত ৫০হাজারের অধিক শ্রমিকরা আশা-নিরাশার ধুম্রজালে সময় পার করছেন। ফলে বোরো ধান হারিয়ে যারা এই শুল্ক বন্দরে এসে কাজ করে কোন রখমে জীবন পার করছিল। তারা এখন বেকার সময় পার করছে। ৩টি বন্দর বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এলাকা ছেড়ে শহরমুখি হচ্ছে হাজার হাজার শ্রমিকরা ও হাওর পাড়ের কৃষকগন।

জানা গেছে, গত বছরের ২৩ নভেম্বর থেকে কয়লা আমাদানি শুরু হলেও ভারতের কেন্দ্রিয় সরকারের নোট বাতিলের সিদ্ধান্তের কারণে বন্দরগুলো আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম কোন রকমে চলছিল। এই বছরের ৫ জানুয়ারি থেকে আবারও পুরোদমে চলে কার্যক্রম।

৬ মাস চালুর পর বুধবার (৩১মে, ২০১৭) থেকে সকল কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ৫ শতাধিক আমাদানি কারণে তাদের কর্মচারী ও কর্মরত শ্রমিকরা হতাশায় ভুগছে। ভারতের মেঘালয়ের পরিবেশবাদী সংগটন ডিমাহাসাও জেলা ছাত্র ইউনিয়নের আবেদনের ভিত্তিতে ২০১৪ সালে ১৭ এপ্রিল ভারতীয় আদালতে একটি মামলা দায়ের করে ন্যাশনাল গ্রিন ট্রাইবুনাল (এনটিজি) মেঘালয় সরকারের অবৈধ কয়লা খনন ও পরিবহন বন্ধের নির্দেশ দেয়।

২০১৪ সালে ১৩ মে থেকে মেঘালয় সীমান্তে জেলাগুলোয় ১৪৪ ধারা জারি করার পর কয়লা পরিবহণ নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। বন্ধ থাকার কারণে সরকারের রাজস্ব আদায়ে ধস নেমেছিল তিনটি শুল্ক বন্দরের কার্যক্রমে। এর পর কয়েক দফা কয়লা আমদানি কার্যক্রম চালু হলেও গত বছরের ১৬মে আবারও বন্ধ হয়ে যায়। বর্তমানে বন্দর সংশ্লিষ্ট ৫শতাধিক আমদানিকারক নতুন কোন এলসি খোলে কয়লা-চুনাপাথর আমদানি করতে না পারায় মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন। আর বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার।

বড়ছড়া কাষ্টমস সূত্রে জানা যায়-গত ২০১২-২০১৩ অর্থ বছরে কয়লা আমদানির রাজস্ব আদায় প্রায় ১১৮ কোটি টাকা। ২০১৩-২০১৪ অর্থ বছরে রাজস্ব আদায় করা হয়েছে-১৪৩ কোটি ৮৮ লাখ ৬৪ হাজার ৭২৮ টাকা। দেশের রাজনৈতিক পরিবেশ বিবেচনা করে ২০১৪-১৫ অর্থ বছরে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য মাত্রা ছিল ১০৫ কোটি ৯৮ লাখ ৫০ হাজার টাকা। প্রায় ১১মাস বন্ধ থাকার পর ২০১৪-১৫ অর্থ বছরে ৩০ জুন পর্যন্ত রাজস্ব আদায় হয়েছে-৮কোটি টাকা।

প্রায় ১১ মাস বন্ধ থাকায় চলতি বছরের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় ৯৭ কোটি টাকা রাজস্ব ও গত বছরের তুলনায় প্রায় ১২৭ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় থেকে বঞ্চিত সরকার। ১৫-১৬ ও ১৬-১৭ বছরের রাজস্ব আদায়ে তেমন লাভবান হতে পারেনি সরকার।

৩টি শুল্ক ষ্টেশনের শ্রমিকরা বলেন, আমরার কথা কেউ শুনে না, কেউ ভাবে না, আমরা কাম ছাড়া চলমু কেমনে ? এখন একবারেই বেকার সময় পার করতাছি। ঘরে টাকা নাই, চাল নাই। খেয়ে না খেয়ে চলতাছি। সমানে ঈদে ছেলে-মেয়ের নতুন কাপড় কিনে দিতা পারতাছি না। মামলা টামলা বুঝি না আমরা শ্রমিকরা চাই ৩ ডা বন্দর চাল থাকুক সব সময়।

ব্যবসায়ী সুমন দাস ও শংকর দাস বলেন, কয়লার দাম বেশি থাকায় ও ভারত সরকারে নানান স্বার্থের কারণে আমরা আমাদের ব্যবসায় বাব বার ক্ষতির শিকার হচ্ছি ফাটা বাঁশের চিপায় পড়ে আছি। এর সমাধান খুবই প্রয়োজন। এভাবে বার বার শুল্ক বন্দর বন্ধ থাকলে একবারেই ত শেষ হয়ে যাব।

কয়লা আমদানিকারক সমিতির নেতৃবৃন্দ ও বিভিন্ন কয়লা আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারীরা জানান, শুল্ক বন্দর আবার বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অসহায় হয়ে পড়েছি। আমদানি চালু হবে তা কেউই সঠিক ভাবে বলতে পারছি না। যার ফলে এর সাথে জড়িত শ্রমিকরা এলাকা ছেড়ে শহরমুখী হচ্ছে কাজের সন্ধানে। তবে ভারতীয় কয়লা রপ্তানিকারকরা আইনী লড়াই করছে। গুরুত্বপূর্ন ৩টি শুল্ক বন্দরের আমদানি কার্যক্রম চালুর জন্য সংশ্লিষ্ট প্রশাসন সহ বাংলাদেশ সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করছে তাহিরপুর উপজেলাবাসী।

তাহিরপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কারুজ্জামান কামরুল জানান, এমনিতেই এবার ফসল হারিরে হাওর পাড়ে হাহাকার বিরাজ করছে। এখন হাওরে কাজ-কর্ম কিছুই নাই। এর মধ্যে উপজেলার ৩টি বন্দর বন্ধ হয়ে গেছে। এখানে বোরো ফসল হারা অনেক কৃষক কাজ করে কোন রকমে চলছিল তাও শেষ। ব্যস্ততম ৩টি শুল্ক বন্দর (বড়ছড়া, চারাগাঁও, বাগলী) বার বার কোন না কোন বন্ধ হয়ে যায় এই বিষয়টি গুরুত্বের সাথে নিয়ে দ্রুত চালুর জন্য সরকারের হস্তক্ষেপ করা প্রয়োজন।

 

বহুমাত্রিক.কম

Walton Refrigerator Freezer
Walton Refrigerator Freezer