Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

বৈশাখ ১৩ ১৪৩১, শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪

অর্ধাহার-অনাহারে রোজা রাখছেন দূর্গত হাওরবাসী

জাহাঙ্গীর আলম ভূঁইয়া, সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১০:৪৩, ৭ জুন ২০১৭

আপডেট: ০০:০০, ৩১ ডিসেম্বর ১৯৯৯

প্রিন্ট:

অর্ধাহার-অনাহারে রোজা রাখছেন দূর্গত হাওরবাসী

ছবি: বহুমাত্রিক.কম

দূর্গত হাওরাঞ্চল ঘুরে এসে: সুনামগঞ্জে এক ফসলী বোরো ধান হারিয়ে হাওরপাড়ের হাজার হাজার কৃষক পরিবারে নেই রমজান মাসের উৎসাহ-উদ্দীপনা। আছে উদ্বেগ উৎকণ্ঠা আর বুকভরা দ্বীর্ঘশ্বাস। রমজান মাসকে সামনে রেখে সরকারিভাবে সহযোগীতার কোন পরিকল্পনা না থাকায় অভাবী এই হাওরবাসীর সমস্যা রয়েই গেল।

বেশির ভাগ হাওরবাসী অর্ধহারে, অনাহারে, অভাব-অনটনকে সঙ্গী করে রমজান মাসে রোজা রাখছেন। ফসলহারা মানুষগুলো খেয়ে না খেয়ে অতি কষ্টে সেহেরী ও ইফতারিতে পানি ভাত আর রুটি, শাক পাতা আর যা পাচ্ছেন তা দিয়ে কোন রখমে রোজা পালন করছেন।

যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন দ্বীপসদৃশ্য গ্রামগুলো টাকার অভাবে অনেকেই ‘বাজারসদাই’ করতেও পারছে না। এ অবস্থায় দু-মুটো খাবার জোগানো কঠিন হয়ে পড়েছে। প্রতি বছর বাজারে যারা রমজান মাসকে সামনে রেখে বিভিন্ন প্রকার দ্রব্যসামগ্রী নিয়ে বাজার জমিয়ে তুলত ও জমকালো আয়োজন ইফতার সামগ্রী নিয়ে হাজির হত শত শত ভ্রামমান্য দোকানি এবার সেই সব দোকান গুলোতে জমকালো কোন আয়োজন নেই নেই কোন ভিড়। সাদা মাটা ভাবেই কোন রখমে চলছে সব।

এবার জেলার ছোট-বড় বিভিন্ন হাওর পানিতে ভড়ে কানায় কানায় পরিপূর্ন হলেও হাওরে মাছের দেখা নেই। যার উপর হাওরবাসী বর্ষার ৬মাস জীবন-জীবিকা পরিচালিত করত বংশ পরমপরায় তাও শেষ। ফলে অভাব অনটনের কারণে এবার সর্বত্রই হাহাকার যার জন্য অন্যান্য বছরের মত এবার রমজান মাসে নেই হাওরবাসীর মাঝে কোন আনন্দ আছে শুধুই বুকভরা র্দীঘশ্বাস।

জেলার দিরাই, শাল্লা, জগন্নাথপুর, ধর্মপাশা, জামালগঞ্জ, দোয়ারা বাজার, বিশ্বম্ভরপুর ও তাহিরপুর উপজেলার অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ী ঢলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের দূর্নীতির কারণে ১৪২টি হাওর রক্ষা বাঁধ ভেঙ্গে অকালে হাওরের ৯০ভাগ এক ফসলী বোরো ধান পানিতে তলিয়ে যায়। ফলে স্মরণকালের সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে জেলার হাজার হাজার কৃষক পরিবার।

শুধু সুনামগঞ্জ জেলা নয় মৌলভীবাজার, নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ ও হবিগঞ্জ জেলাও এবার অকাল বন্যায় চরম ক্ষতির শিকার হয়েছে। হাওর ডুবে যাওয়ার পর থেকে সরকারি-বেসরকারি ও ব্যাক্তিগত উদ্যোগে ক্ষতি গ্রস্থদের সহায়তার চেষ্টা চলছে প্রতিটি উপজেলায় কিন্তু সহযোগীতা পেলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় কম।

এদিকে সরকারি ফেয়ার প্রাইজ, টিসিবির পণ্য বন্ধ, ভিজিএফ কার্ডে অনিয়ম ও ওএমএস চাল সঠিক ভাবে না পাওয়ায় সুনামগঞ্জের ১১টি উপজেলার বিভিন্ন উপজেলার প্রত্যান্ত এলাকার দ্বীপ গ্রামের বেশির ভাগ হাওরবাসী অর্ধহারে-অনাহারে আছেন।

বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা না থাকায় হাওরবাসী চরম দূভোর্গের মধ্যে আছে। বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা ও সরকারের সু-নজর না থাকায় এই মানব সম্পদ এখন দিন দিন সমাজের ভোজা হচ্ছে। যার জন্যে এই অনুন্নত অবহেলিত হাওরবাসীর কণ্ঠে কেবলেই শুধু বাচাঁর আকুতি।

জেলার বিভিন্ন হাওরপাড়ের ক্ষতিগ্রস্থ লোকজন বলেন, ‘কি কইমু ভাই এবার বোরো ধান হারিয়ে এক বারেই নিঃস্ব হয়ে গেছি। পানি ভাত, শাক রুটি যা জোগাড় করতা পারি তাই খাইয়া রোজা রাখি। রমাজান মাসে প্রতি বছর আলাদা কিছু কইরা ভাল ভাল খাবার তৈয়ার কইরা খাইবার লাগি বাজার থেইকা জিনিস আনতাম। পরিবার তৈয়ার কইরা দিত খাইতাম এইবার ত জান যায় ভাল খাইমু কই থ্যাইকা।’

‘সামনে ঈদ পোলা মাইয়ারে কি ভাবে নতুন কাপড় কিনা দিমু আর জীব চালাইমু বুজতা পারতাছিনা।’

স্থানীয়দের অভিযোগ, হাওর উন্নয়নে সরকার হাওরবাসীর যোগাযোগ ব্যবস্থা, মিল-কলখারকানা,বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ সহ আর্থসামাজিক উন্নয়নে কাজ করলেও সুনামগঞ্জের হাওরাঞ্চলের ব্যাপারে উদাসীন।

তারা মনে করেন, এই বেকার জনগোষ্টীকে সম্পদে পরিণত করার জন্য মিল-কলখারকানা স্থাপন, কুটির শিল্পের সাথে যুক্ত করলে নারী সমাজ স্বাবলম্বী হওয়ার পাশা পাশি অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা রাখবে। অভাব অনটন থাকবে না।

তাহিরপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কারুজ্জামান কামরুল জানান, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, যোগাযোগ ব্যবস্থার প্রয়োজনী ও যুগপযুগী পদক্ষেপের মাধ্যমে অবহেলিত সুনামগঞ্জ জেলার হাওরবাসীর উন্নয়নের স্বার্থে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিলে হাওরবাসীরা তাদের জীবন মানের উন্নয়ন ঘটাতে সক্ষম হবে। না হলে এই অসহায় হাওরবাসীর দু:খের শেষ থাকবে না।

বহুমাত্রিক.কম

Walton Refrigerator Freezer
Walton Refrigerator Freezer