ছবি: সংগৃহীত
-‘প্রাণিবন্ধু’ কর্পোরাল মোঃ আবদুর রউফ (১৯৭৯-২০১৮)
মানুষটিকে আমি কখনো দেখিনি সরাসরি। তাঁর কথা শুনেছি, গল্প শুনেছি অনেক। যে গল্প আলোকিত পথ দেখাতো। যে গল্পে স্বপ্ন ছিল। স্বপ্ন বাস্তবায়নের তাগিদ ছিল। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম `ফেইসবুক` এ ভার্চুয়াল বন্ধু হিসেবেও পেয়েছি কিছুদিন তাঁকে। যার কথা বলছি, তিনি আমার প্রিয়ভাজন বহুমাত্রিক ডট কম এর প্রধান সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম এর অগ্রজ। তিনি মুহাম্মদ আব্দুর রউফ। সেনাবাহিনীর কর্পোরাল মুহাম্মদ আব্দুর রউফ।
হঠাৎ একদিন আশরাফ ভাই জানালেন তাঁর অগ্রজ হাসপাতালে। ঈদের ময়দানে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে আছেন। গুরুতর অসুস্থ। নিজের ভেতরটা কেমন যেনো মোচড় দিয়ে উঠলো। দিন কয়েক পেরিয়ে গেলো। প্রতিদিন উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা। লাইফ সাপোর্ট এ আছেন তিনি। সিএমএইচ-এ জীবন যুদ্ধে লড়েছেন। ফেসবুকে আপডেট আসতো। আশরাফ ভাইয়ের সর্বশেষ স্ট্যাটাস ‘বাতি নিভে গেছে’। বড় কষ্টের তিনটি শব্দ। আর বুঝতে বাকি নেই। রউফ ভাই নেই। চলে গেলেন সব বাধন ছিঁড়ে। ২৮ জুন ২০১৮ তারিখে চলে গেলেন সেনাবাহিনীর কর্পোরাল মুহাম্মদ আব্দুর রউফ। দূরে, অনেক দূরে। ফিরবেন না আর কোনো দিনই।
মানুষটিকে সরাসরি না দেখলেও তাঁর কর্ম গুনের গল্প শুনে বড্ড কাছের মনে হতে শুরু করলো। হয়েছিলও তাই। আমার সাথে রউফ ভাইয়ের কোনো স্মৃতি নেই। স্বল্প কিংবা দীর্ঘ মেয়াদী। তবু কেন যেন মনে হয় স্মৃতির পাহাড় আমাকে ঘিরে রেখেছে চারিদিক। তাঁর কর্ম গুণের গল্প, দুই সহোদয়ের চর্বিত স্মৃতি গুলোই যেন আমার স্মৃতি। যেগুলো আমার মানসপটে গেঁথে আছে, জায়গা করে নিয়েছে অনন্তকালের জন্যে।
মৃত্যুর কিছু দিন পূর্বে তিনি ফেসবুকে লিখেছিলেন, ‘শুরু হলো কাউন্ট -ডাউন। বছর নয়, এখন শুধু মাস’।কী ছিল সেই কাউন্ট-ডাউন? তিনি কী জানতেন, তিনি অচিরেই চলে যাবেন না ফেরার দেশে?
রউফ ভাইয়ের আকস্মিক মৃত্যু ছিল বজ্রপাতের আঘাত। অকাল মৃত্যু সকলকে শোক সাগরে ভাসিয়ে দিলো। রউফ ভাই নেই। তবু রউফ ভাইয়ের সংবেদী স্মৃতি আঁকড়ে আছে আমাকে। তিনি অনুপস্থিত নন। তিনি আমাদের মাঝেই আছেন। থাকবেন।
তিনি ছিলেন অনেকটা বটবৃক্ষের মতো। জড়িয়ে রেখেছিলেন গোটা পরিবারকে। বেঁচে থাকলে আরো কিছু স্বপ্নময় জগৎ খুলে দিতে পারতো পরিবারের জন্যে, দেশের জন্যে। কিন্তু সে সুযোগ আর হয়ে উঠেনি। তিনি চলে গেলেন চিরতরে। রেখে গেলেন কিছু স্মৃতি। কিছু কর্ম। বড় কষ্টের স্মৃতি।
লেখক : সম্পাদক, বহুমাত্রিক ডটকম
বহুমাত্রিক.কম