ছবি- ইউ.এন.বি
ঢাকা : যশোরের মণিরামপুরে কৃষিভিত্তিক অনুষ্ঠান দেখে মাল্টা চাষ করে সফল হয়েছেন কৃষক আব্দুল করিম।
তিনি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের দ্বিতীয় শস্য বহুমুখীকরণ প্রকল্পের আওতায় ২০১৪ সালে একবিঘা জমিতে পরীক্ষামূলকভাবে বারি মাল্টা-১ জাতের চারা রোপন করেন। এরপর নীবিড় পরিচর্যা ও জৈব প্রযুক্তি ব্যবহার করে মাত্র দেড় বছরের মাথায় গাছে ফলন আসে। ইতোমধ্যে বাজারে কয়েক চালান তুলে ভালো ব্যবসা হয়েছে। এছাড়া বাগানের গাছ থেকে কলম তৈরি ও বিক্রি করে বছরে বাড়তি টাকাও আয় করছেন।
কৃষি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশের অনেক এলাকার মাটি মাল্টা চাষের উপযোগী। পরিকল্পিতভাবে এর চাষ করলে একদিকে দেশের মানুষের পুষ্টি চাহিদা মিটবে অন্যদিকে কৃষকরা অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হবেন।
মনিরামপুর উপজেলার চিনেটোলা বাজার থেকে পূর্বদিকে দূর্বাডাঙ্গা সড়কে কিছুদূর যেতেই মুজগুন্নী গ্রাম।
এ গ্রামের কৃষক আব্দুল করিম, লেখাপড়া শেষে টেলিভিশনে কৃষি অনুষ্ঠান দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে মাল্টা চাষ শুরু করেন। ২০১৪ সালে তার নিজ গ্রামে তিনি পরীক্ষামূলকভাবে বারি মাল্টা-১ জাতের ১৪৫টি চারা রোপন করেন। এরপর নীবিড় পরিচর্যা ও জৈব প্রযুক্তি (ভার্মি কম্পোস্ট/কেঁচো সার) ব্যবহার করে মাত্র দেড় বছরের মাথায় গাছে কিছু ফলন হয়। তবে পরের বছর (চলতি মৌসুমে) প্রায় প্রতিটি গাছে প্রচুর পরিমাণে ফল ধরেছে। এ ছাড়া আব্দুল করিম কলম তৈরির ওপর প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। সেই অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে তিনি তার বাগানের মাতৃগাছ থেকে হাজার হাজার কলম তৈরি করে তা বিক্রি করছেন।
কৃষক আব্দুল করিম বলেন, সম্পূর্ণ জৈব পদ্ধতি ব্যবহার করে গাছের খাদ্য ও পোকা-মাকড় দমনসহ এর যাবতীয় পরিচর্যা করছেন। এ পর্যন্ত তার বাগানে সব মিলিয়ে খরচ হয়েছে প্রায় এক লাখ টাকা। প্রথমে তিনি কিছুটা দুশ্চিন্তায় ছিলেন। কারণ এ অঞ্চলে মাল্টা চাষ যেহেতু নতুন তাই গাছে কাঙ্খিত ফল পাবেন কিনা? কিন্তু তিন বছরের মাথায় বাগানের প্রতিটা গাছে প্রচুর পরিমাণে ফল ধরেছে। মাল্টার রঙ গাঢ় কমলা, খেতেও খুব মিষ্টি।
তিনি আরও জানান, তার বাগানের মাতৃগাছের কলমের বেশ চাহিদা রয়েছে। বাগানে প্রায় ৫-৬ হাজার কলম তৈরি আছে। প্রতিটা কলম তিনি ১০০ থেকে ১৫০ টাকায় বিক্রি করেন। সে হিসেবে এ বছর কলম বিক্রি করে তিনি প্রায় সাত লাখ টাকা আয় করেছেন। আর মাল্টা বিক্রি থেকে দেড় লাখ টাকাসহ মোট আয় হয়েছে সাড়ে আট লাখ টাকা।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা সুশান্ত কুমার তরফদার বলেন, এ অঞ্চলে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে মাল্টা লেবুর চাষ হচ্ছে। বিশেষ করে মণিরামপুর উপজেলার মুজগুন্নী গ্রামের আব্দুল করীম বারী মাল্টা-১ জাতের লেবুর চাষ করে সাফল্য পেয়েছেন। তিনি আমাদের দপ্তরের পরামর্শ নিয়ে সম্পূর্ণ জৈব প্রযুক্তি ব্যবহার করে মাল্টা চাষে সফল হয়েছেন। বাণিজ্যিকভাবে লাভজনক হওয়ায় আব্দুল করিমের দেখাদেখি এলাকার অনেকেই মাল্টা চাষে আগ্রহী হচ্ছেন।
দেশে মাল্টা চাষের সম্ভাবনা সম্পর্কে জানতে চাইলে বংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইন্সিটিটিউটের উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্র ফল বিভাগের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. আজমাত উল্লাহ বলেন, মাল্টা দেশের একটি সম্ভাবনাময় ফসল, দেশে এর ব্যাপক চাহিদা। বিশেষ করে দেশের মধ্যে তিন পার্বত্য জেলা, সিলেট, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, যশোর, পিরোজপুরসহ অনেক জেলায় কৃষক মাল্টা চাষে সফলতা পেয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, এ ফলের চাষ হতে হবে অবশ্যই প্রযুক্তি নির্ভর। না হলে দীর্ঘ মেয়াদী কাঙ্খিত ফলন পাওয়া যাবে না। সে জন্যে যারা বারী মাল্টা-১ জাতের বাগান করবেন তাদেরকে আগে অবশ্যই প্রশিক্ষিত হতে হবে। এ জন্যে দেশের প্রতিটি উপলোয় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা রয়েছে।
ইউ.এন.বি নিউজ