Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

বৈশাখ ১২ ১৪৩১, শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪

অন্যরকম শারদীয় দুর্গোৎসব

ড. মো. হুমায়ুন কবীর

প্রকাশিত: ১৪:৩৩, ২৫ অক্টোবর ২০২০

প্রিন্ট:

অন্যরকম শারদীয় দুর্গোৎসব

বাঙাালি হলো উৎসব প্রিয় জাতি। এসব উৎসব যে শুধু ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদিতেই আটকে থাকে তাই নয়। ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদির বাইরে পহেলা বৈশাখ, ভালোবাসা দিবস, চৈত্র সংক্রান্তি, পিঠা উৎসব ইত্যাদি কোন কিছুই বাদ যায় না। দুর্গাপূজা সনাতন হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের জন্য সবচেয়ে বড় উৎসব। কিন্তু বাংলাদেশের ধর্মীয় চরিত্রটি এখন এমন পর্যায়ে এসে ঠেকেছে যেখানে সকল ধর্মের রীতিনীতি পালনই যেন সার্বজনীনতা লাভ করেছে। মুসলমানদের দুটি ঈদ, খ্রিস্টানদের বড়দিন, ইস্টার সানডে, বৌদ্ধদের বৌদ্ধ পূর্ণিমা, হিন্দুদের শ্রী শ্রী শারদীয় দুর্গাপূজাসহ আরো অনেক পূজাপার্বণ উদযাপন এখন এতটাই সার্বজনীনতা পেয়েছে যেখানে প্রত্যেকে প্রত্যেকের ধর্মীয় দিবসগুলোতেও অন্য ধর্মের মানুষদের দাওয়াত করে তাদের আনন্দে শরিক করে নিচ্ছেন। কিন্তু এবছরটি সম্পূর্ণ অন্যরকম। আর কী জন্য অন্যরকম তা আমরা সকলেই জানি। করোনা মহামারি সবকিছুকেই কেমন যেন প্রাণহীন করে দিয়েছে। 


এভাবেই ধর্মে ধর্মে মানুষে মানুষে সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতি বৃদ্ধি পায়। কিন্তু করোনা মহামারির জন্য প্রতিবছরের মতো এবারে আর দুর্গাপূজা সেভাবে পালন করা সম্ভব হচ্ছে না। এবারের সিদ্ধান্ত হলো- পূজার আনুষ্ঠানিকতা সবই হবে কিন্তু তা হবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে এবং কড়া নিরাপত্তায়। আমরা জানি মহালয়ার মাধ্যমে পূজার আনূষ্ঠানিকতা শুরু হয়। সেই শুরুর প্রথম দিকে প্রথমা, দ্বিতীয়া... এভাবে যেতে যেতে মহাষষ্ঠীর মাধ্যমে দুর্গাপূজা আরম্ভ হয়ে থাকে। সেভাবেই ২২ অক্টোবর ২০২০ থেকে মহাষষ্ঠীর যাত্রা শুরু হয়েছে। তারপর একে একে মহাসপ্তমী ও মহাঅষ্টমীর দিকে অগ্রসর হয়ে প্রতিটিতেই নতুন নতুন আরাধনা ও অঞ্জলির দ্বারা বরণ করা হয়েছে মা দুর্গাকে।

মহাঅষ্টমীতে কুমারীপূজার মাধ্যমে ঈশ্বরের নৈকট্য লাভের চেষ্টা করা হয়েছে। নবমীতে আরতি নৃত্য, পূজা অঞ্জলি, ম-পে ম-পে পূজারি ও সকল বয়সের ছেলে-মেয়েদের প্রতিযোগিতার আয়োজন সার্বজনীন মানুষের ঢল ইত্যাদি সবারই এক মঞ্চে এনে দাঁড় করায়। দেখা গেছে, একটি শহরে প্রতি পাড়ায় কিংবা প্রতি মহল্লায় প্রতিষ্ঠিত পূজাম-পগুলো দেখার জন্য সকল ধর্মের মানুষের ঢল নামে। এ সময় পূজার কারণে শহরের নির্দিষ্ট কিছু রাস্তা-ঘাটে এমন তীব্র যানজট হয় যে, এর জন্য স্বাভাবিক চলাফেলা বেশ কঠিন হয়ে পড়ে। কিন্তু এবার এসব কর্মযজ্ঞে বাধ সেধেছে করোনা মহামারি। তারপরেও কারো তেমন কোন অভিযোগ থাকেনা। কারণ তখন পূজারিগণ তাদের দামী গাড়ি ছেড়ে হয় পায়ে হেটে, নয়তো মামুলি রিক্সা কিংবা অটোবাইক নিয়ে এক পূজা থেকে অন্য পূজাম-পে ম-পে ঘুরে বেড়ান। আর এবারে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সবাই স্বাস্থ্যবিধি মেনেই তা পালন করছেন। নিরাপত্তা কর্মীবৃন্দ এবং পূজা উপলক্ষে পাড়ায় মহল্লায় গঠিত স্বেচ্ছাসেবকবৃন্দ সেগুলো কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

এখানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি সময়োপযোগী শ্লোগান রয়েছে, ‘ধর্ম যার যার, উৎসব সবার’ যা আমাদের সম্প্রীতির বন্ধনকে আরো সুদৃঢ় করে তোলে। করোনাকালে এবারের পূজা নিয়ে অন্য বছরগুলোর তুলনায় একটু বেশি সতর্কতামূলক ব্যবস্থা রাখতে হচ্ছে। এর অনেক যুক্তিসঙ্গত কারণ থাকাটাও অত্যন্ত স্বাভাবিক। কারণ যেখানে জনসমাগম, জনসমাবেশ সেখানেই করোনা সংক্রমণের আশঙ্কা। বিগত কয়েক বছর যেকোন ধরনের ধর্মীয় অনুষ্ঠান আচারাদিতে ছিল জঙ্গি আতঙ্ক। কিন্তু সরকারের জঙ্গিবাদ বিরোধী জিরো টলারেন্স নীতির কারণে সেই আতঙ্ক না থাকলেও নতুনভাবে যুক্ত হয়েছে করোনা ভাইরাস আতঙ্ক। তবে সেটা শুধু আমাদের দেশের অভ্যন্তরীণ কোন সমস্যা নয়। এখন এটি বৈশ্বিক সমস্যা।

তবুও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নির্বিঘ্নে দুর্গোৎসব পালনের জন্য যেকোন ধরনের নাশকতা নস্যৎ করে দেওয়ার জন্য তৎপর রয়েছে। কাজেই বিজয়া দশমীতে মা দুর্গার দশ হাত দিয়ে যেকোন ধরনের অসুরীয় শক্তি বিনাশ করে সত্য ও সুন্দরের জন্য বিজয় নিশ্চিত করবেন এটাই সবাার প্রত্যাশা। সেক্ষেত্রে নিরাপত্তার স্বার্থে সরকার নির্দেশিত স্বাস্থ্যবিধি মেনে এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নির্দেশিত নিরাপত্তা ব্যবস্থায় নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই সবাই তাদের প্রতিমা সঅলভাবে বিসর্জন করবেন বলে আমাদের সকলের বিশ্বাস। তাতে হয়তো অনেক অনাকাঙ্খিত ঘটনার এড়ানো যেতে পারে। করোনাকালে যেমন মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় দুটি ঈদ সীমিত আকারে স্বাস্থ্যবিধি মেনে পালন করা হয়েছে। তেমনি স্বাস্থ্যবিধি মেনেই নিরাপদভাবেই সফলতার সাথে পালিত হবে হিন্দু ধর্মীয় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সর্বজনীন শারদীয় দুর্গোৎসব।

লেখক: ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়

email: [email protected] 

বহুমাত্রিক.কম

Walton Refrigerator Freezer
Walton Refrigerator Freezer