Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

কার্তিক ১১ ১৪৩১, রোববার ২৭ অক্টোবর ২০২৪

বঙ্গবন্ধু টানেল উদ্বোধন ২৮ অক্টোবর

প্রকাশিত: ২০:২০, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৩

আপডেট: ২০:২৩, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৩

প্রিন্ট:

বঙ্গবন্ধু টানেল উদ্বোধন ২৮ অক্টোবর

ছবি- সংগৃহীত

আগামী ২৮ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজে চট্টগ্রামে উপস্থিত থেকে বঙ্গবন্ধু টানেলের উদ্বোধন করবেন।

আগামী অক্টোবরের ২৮ তারিখ খুলছে দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম টানেল। উদ্বােধনী অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি নিয়ে মঙ্গলবার এক টেবিলে বসেছিলেন চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসের সম্মেলন কক্ষে বাস্তবায়নকারী সংস্থা ও চট্টগ্রামের প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক নেতারা। ওইদিন জনসভার পাশাপাশি টানেল উদ্বােধন ঘিরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে প্রশাসনের পক্ষ থেকেও।

তারা বললেন, দেশের অগ্রযাত্রা ও সক্ষমতার পালকে যুক্ত হতে যাচ্ছে আরেকটি মাত্রা। উদ্বােধনের পরে টানেলে যানবাহনের চলাচলের সীমাবদ্ধতা, গতি নির্ধারণসহ ব্যবস্থাপনার নানা বিষয় উঠে আসে বৈঠকে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের প্রকল্প পরিচালক হারুনুর রশীদ জানালেন, টানেলে এর মধ্যে কয়েক দফা ট্রায়াল রান সম্পন্ন করা হয়েছে। উদ্বােধনের আগেই আরেকবার ফাইনাল ট্রায়াল দিতে চান তারা। ২৮ তারিখ প্রধানমন্ত্রীর উদ্বােধনের পর ২৯ তারিখ সাধারণ মানুষের জন্য খুলে দেয়া হবে এই টানেল। উদ্বোধন অনুষ্ঠানে পদ্মা সেতুর অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগাতে চায় প্রশাসন। সে অনুযায়ী চলছে প্রস্তুতি।

এমনটাই বললেন, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রনালয়ের সেতু বিভাগের সচিব মনজুর হোসেন। কর্ণফুলী টানেলের আনোয়ারা প্রান্ত পড়েছে চট্টগ্রাম জেলার আনোয়ারা উপজেলায় এবং সেখানকার নিরাপত্তার দায়িত্ব জেলা পুলিশের। বৈঠকে উপস্থিত জেলা পুলিশ সুপার এস এম শফিউল্লাহ। আনোয়ারা প্রান্তে এপ্রোচ সড়কে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় পুলিশ ক্যাম্প করার পাশাপাশি নেয়া হয়েছে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা এমনটাই জানান তিনি।

আগামী ২৮ অক্টোবর আনোয়ারা প্রান্তে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে জনসভারও আয়োজন করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্টদের মতে এটি অনেকটা আগাম নির্বাচনী জনসভাও হতে যাচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে। সে অনুযায়ী প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের পক্ষ থেকেও।

মঙ্গলবার চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজের সম্মেলন কক্ষে বঙ্গবন্ধু টানেলের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের প্রস্তুতিসভার পর সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সচিব মনজুর হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব টানেল শুধুমাত্র চট্টগ্রামবাসীর জন্য গর্ব নয়, জাতির জন্যও অনেক গর্বের বিষয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় টানেল এখন প্রায়ই প্রস্তুত হয়েছে আমরা বলতে পারি।

তিনি আরও বলেন, এটার প্রি-কমিশনিং থেকে শুরু করে নিরাপত্তার ব্যবস্থা সবগুলো দেখা হয়েছে। তবে টানেল উদ্বোধনের পরও আমাদের কার্যক্রম চলবে। পুলিশের পক্ষ থেকে ফাঁড়ি, ডাম্পিং, স্টেশনের কথা বলা হয়েছে সেটা আমরা করতে পারব। সে জায়গা রয়েছে। অপারেশনের যারা রয়েছে, মেইটেনেন্স যারা করবে তাদের নিজস্ব ভেহিকেল থাকবে। প্রথমদিকে আমরা চেষ্টা করবো এই জিনিসটা অন্যদের সাপোর্ট নিয়ে সবার সমন্বয়ে কাজগুলো এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার।

টানেল চালু হলে ট্রাফিক জট হতে পারে কিনা সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ট্রাফিকের যেমন এই বিষয়ে প্ল্যান আছে, পুলিশেরও নির্দিষ্ট প্ল্যান থাকতে পারে। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (চউক) পক্ষ থেকে কিছু প্রস্তাব আছে। তারাও কিছু প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। টানেলের যে আরও একটি বড় লক্ষ্য আছে সেটা হলো, কক্সবাজারে কিছু বড় প্রকল্প হচ্ছে।
ভবিষ্যতে আগামী দুই চার বছরের মধ্যে সেই প্রকল্পে যাতায়াতের জন্য টানেলটি ব্যবহার করা হবে। সেক্ষেত্রে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা পুলিশের আলাদা প্ল্যান আছে, পরিকল্পনাও আছে। তাদের সাথে সমন্বয় করে আমরা সব কাজ করতে চাই।

তিন চাকার গাড়ি চলাচলের বিষয়ে জানতে চাইলে সচিব মনজুর হোসেন বলেন, এখন পর্যন্ত যে সিদ্ধান্ত হয়েছে আপনারা জানেন যে কোন কোন যানবাহন চলবে টানেলে সেটা নির্ধারিত করা হয়েছে। টোলও নির্ধারণ করা হয়ে গেছে। টানেলের যে ডিজাইন করা হয়েছে ৮০ কিলোমিটার বেগে প্রতি ঘন্টায় গাড়ি চলতে পারবে। টানেলের কনসেপ্টটা আমাদের কাছে নতুন। সেজন্য এটার কিছু চ্যালেঞ্জ আছে।

ভেতরে যদি কোনো দুর্ঘটনা ঘটে সে জন্য রেসকিউ কিভাবে হবে সেটা অন্য ব্রিজ বা সড়ক থেকে আলাদা। সেক্ষেত্রে আমাদেরকে এই জিনিসটা নিশ্চিত করতে হচ্ছে টানেলও নিরাপদ থাকবে এবং যারা ব্যবহার করবে তারাও নিরাপদ থাকবে। সেই ধারনা থেকে এই মূহুর্তে দুই বা তিন চাকার গাড়ির জন্য এটা নিরাপদ হবে না বলে আমি মনে করি।

দর্শনার্থীদের সুবিধার জন্য ট্যাক্সি ক্যাব চালুর প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মনজুর হোসেন বলেন, ট্যাক্সি ক্যাবটা যে কেউ চালু করতে পারে। সেজন্য সেতু বিভাগ থেকে আলাদাভাবে প্রকল্প নেওয়ার দরকার নেই। জেলা প্রশাসন উদ্যেগ নিতে পারে। এতে আমাদের কোনো আপত্তি থাকবে না। টানেলে গতকয়েক মাস ধরে ট্রায়াল হচ্ছে। ইলেকট্রিক মেকানিক্যাল কাজ হয়ে যাওয়ার পর প্রি কমিশনিং, সেইফটি এসবই ট্রায়ালের অংশ।

এর আগে টানেলের উদ্বোধনীর প্রস্তুতিমুলক সভায় এই কর্মকর্তা বলেন, ডিসেম্বর পর্যন্ত আমাদের টানেলের কাজ সমাপ্তি করার কথা থাকলেও তার আগেই আমরা কাজ শেষ করেছি। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (চউক) এখানে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব রয়েছে। দিনশেষে আমরা সবাই কাজ করছি দেশের জন্য, জাতির জন্য। সবাই মিলে কাজ করলে কোনো সমস্যা হবে না।

এখানে একটি মজার বিষয় হচ্ছে টানেলে ঢুকার আগে যেসব গাড়ি এফএম রেডিও চালু করবে তখন টানেল ব্যবহারের নীতিমালা অটোমেটিক চলতে থাকবে। অধিকাংশ রেডিও স্টেশনে এই নীতিমালা রয়েছে। টানেলের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত রেডিওতে এই নীতিমালাগুলো পড়ে শুনানো হবে।

মনজুর হোসেন আরও বলেন, ২৯ অক্টোবরের আগে টানেলে সাধারণ মানুষ কেউ যেতে পারবে না। ২৮ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টানেল উদ্বোধনের করার পরদিন ২৯ অক্টোবর সকাল ১০টার পর টানেল সাধারণ মানুষের জন্য উম্মুক্ত করে দেয়া হবে। ইমার্জেন্সী গাড়ি ও প্রশাসনের অন-ডিউটিরত গাড়িকে টোলের আওতায় আনা হবে না। আর সবাইকে টোল দিতে হবে। প্রধানমন্ত্রীও টোল দেন। যেসব জায়গায় যেতে উনাকে সেতু ব্যবহার করতে হয়েছে সব জায়গায় উনাকে পুরো গাড়ির বহরের জন্য টোল দিতে হয়েছে।

২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও চীনের রাষ্ট্রপতি শি জিন পিং প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল নির্মাণের কাজ আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন। প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছিল ১০ হাজার ৬৮৯ কোটি টাকা। সর্বশেষ সংশোধিত বাজেটে, প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৩ সালের ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়। এছাড়া, নির্মাণ ব্যয়ও ১৬৪ কোটি টাকা বৃদ্ধি করা হয়।

Walton Refrigerator Freezer
Walton Refrigerator Freezer