
ছবি- সংগৃহীত
মার্কিন ফেডারেল প্রসিকিউটররা দুই চীনা গবেষকের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রে একটি বিষাক্ত ছত্রাক পাচারের অভিযোগ এনেছেন। কর্তৃপক্ষের দাবি, ‘এই বিষাক্ত ছত্রাক চাষ-আবাদের ক্ষেত্রে ‘জৈব-সন্ত্রাস’ ছড়ানোর কাজে লাগানো হতে পারে বলে তাদের অনুমান।’
মঙ্গলবার মিশিগানের পূর্বাঞ্চলীয় জেলার মার্কিন অ্যাটর্নি অফিস চীনের দুই গবেষক জিয়ান ইউনকিং (৩৩) এবং লিউ জুনিয়ং (৩৪) এর বিরুদ্ধে এই অভিযোগ এনেছে। এই গবেষকদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র, ভিসা জালিয়াতি এবং তদন্তকারীদের কাছে মিথ্যা বিবৃতি প্রদানের অতিরিক্ত অভিযোগ আনা হয়েছে।
প্রসিকিউটরদের অভিযোগ, গবেষক লিউ ফুসারিয়াম গ্রামিনিয়ারাম (Fusarium graminearum) নামক ছত্রাকটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পাচার করতে চেয়েছিলেন যাতে তিনি মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষণাগারে গবেষণা চালাতে পারেন, যেখানে তার বান্ধবী জিয়ানও কাজ করতেন। ফুসারিয়াম গ্রামিনিয়ারাম ‘হেড ব্লাইট’ সৃষ্টি করে, যা গম, বার্লি, ভুট্টা এবং ধানের মতো ফসলে একটি রোগ। প্রতি বছর বিশ্বব্যাপী কোটি কোটি ডলারের অর্থনৈতিক ক্ষতির জন্য দায়ী এই ছত্রাক। এই ছত্রাক মানুষ এবং গবাদি পশুর জন্যও বিপদ ডেকে আনে। বমি, লিভারের ক্ষতি এবং প্রজনন ত্রুটি সৃষ্টি করতে পারে। তদন্তটি মার্কিন কাস্টমস, সীমান্ত সুরক্ষা এবং এফবিআই দ্বারা পরিচালিত হয়েছিল। যাদের কার্যভারের মধ্যে রয়েছে বিদেশি ও অর্থনৈতিক গুপ্তচরবৃত্তির পাশাপাশি সন্ত্রাসবাদ বিরোধী তদন্ত করা।
জিয়ানকে এর আগে এফবিআই গ্রেপ্তার করেছিল এবং এই সপ্তাহে তাকে ফেডারেল আদালতে হাজির করার কথা রয়েছে। চীনা সরকারের সাথে তার সম্পর্কের বিষয়টিও তদন্তের আওতায় রয়েছে, বিশেষ করে এমন এক সময়ে যখন যুক্তরাষ্ট্রে সম্ভাব্য চীনা অনুপ্রবেশ নিয়ে উদ্বেগ বৃদ্ধি পাচ্ছে। অভিযোগ অনুসারে, জিয়ান চীনে একই বিষাক্ত ছত্রাকের উপর গবেষণা চালানোর জন্য চীনা সরকারের কাছ থেকে তহবিল পেয়েছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
এফবিআইয়ের বরাত দিয়ে অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস সংবাদ সংস্থা জানিয়েছে, বিমানবন্দর শুল্ক কর্তৃপক্ষ লিউর ব্যাকপ্যাকে ছত্রাক পাওয়ার পর ২০২৪ সালের জুলাই মাসে তাকে ডেট্রয়েট থেকে চীনে ফেরত পাঠানো হয়।
এপি জানিয়েছে, পরে তিনি স্বীকার করেন যে তিনি মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণার জন্য এই উপাদানটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এনেছিলেন। তদন্তের সময়, এফবিআই লিউর ফোনে ‘Plant-Pathogen Warfare under Changing Climate Conditions’ শিরোনামে একটি নিবন্ধ খুঁজে পায়। ২ গবেষকের ফোনে আসা বার্তাগুলোও ও ইঙ্গিত দেয় যে, জিয়ান চোরাচালান পরিকল্পনা সম্পর্কে অবগত ছিলেন এবং পরে তদন্তকারীদের কাছে মিথ্যা বলেছিলেন। চীনের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যর্পণ চুক্তি না থাকায় লিউর প্রত্যর্পণের সম্ভাবনা কম। এফবিআই পরিচালক কাশ প্যাটেল এক্স-এ দাবি করেছেন যে, ‘চীন আমেরিকান প্রতিষ্ঠানগুলোতে অনুপ্রবেশ করতে এবং আমাদের খাদ্য সরবরাহকে টার্গেট করার জন্য অপারেটিভ এবং গবেষকদের মোতায়েন করার জন্য দিনরাত কাজ করছে, যার পরিণতি মারাত্মক।’
ওয়াশিংটন ডিসিতে অবস্থিত চীনা দূতাবাস তাৎক্ষণিকভাবে কোনো মন্তব্য করতে চায়নি। মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয় একটি সংক্ষিপ্ত বিবৃতি জারি করে -জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ অথবা বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্যকে দুর্বল করার চেষ্টা করে এমন যেকোনো কর্মকাণ্ডের নিন্দা জানিয়েছে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও জাতীয় নিরাপত্তার কারণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চীনা শিক্ষার্থীদের ভিসা বাতিল করার প্রতিশ্রুতি দেওয়ার মাত্র এক সপ্তাহ পরে এই মামলাটি সামনে এল। ভিসা ক্র্যাকডাউনের খবরের পর চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিদেশে অধ্যয়নরত তার শিক্ষার্থীদের বৈধ অধিকার এবং স্বার্থ দৃঢ়ভাবে রক্ষা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।