করোনাকালে চলে গেল রমজানের ঈদ। আসছে কোরবানির ঈদ। এমন ঈদ আর কখনো পালিত হয়েছে কিনা ইতিহাসই তার সাক্ষ দিতে পারে। খুব সাদাসিধে প্রকৃতির ঈদ উদযাপিত হচ্ছে এখন। তবে বিশ্বজুড়ে যে অবস্থা চলছে সেটাও একেবারে অনুমানেরও বাইরে।
মুসলমানদের ধর্মীয় এ দুটি উৎসবে কতই না আনন্দ বিরাজ করে। দুটি ঈদকে কেন্দ্র করে ঘরে ঘরে আনন্দের বন্যা বয়ে চলে। সবার ঘরে থাকে নির্ধারিত আয় রোজগারের ব্যবস্থা। যে যাই আয় করুক না কেন নিজের আয়ে নিজের মতো করে সংসার চালিয়ে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া অনেক আত্মসম্মানের। কিন্তু এখন এই করোনা মহামারিতে প্রত্যেকের আয় রোজগারে দেখা দিয়েছে শৈথিল্য। অনেকে তাদের কাজ হারিয়েছে। অনেকে হারিয়েছে তাদের জীবিকা।
তার কারণ হলো অজানা এক শত্রুর বিরুদ্ধে যুদ্ধ। আমরা জানি প্রতিবছর রমজানের পরে পবিত্র ঈদুল ফিতরে প্রত্যেকে তাদের সঙ্গতি মোতাবেক নতুন নতুন জামা-কাপড়, পাজামা-পাঞ্জাবি, শাড়ি-লুঙ্গি, জুতা পড়ে ঈদগাহের মাঠে ঈদের নামাজ আদায় করতে যায়। এতে যেমন এসব জিনিস কেনাবেচার জন্য অনেক ব্যবসা-বাণিজ্য হয়, ঠিক তেমনি প্রত্যেকে তাদের নিজ নিজ কর্ম থেকে বেতন-বোনাস, দান-অনুদান, যাকাত-সাদকাহ ইত্যাদি থেকে অর্থ পায় যা দিয়ে তাদের অনেক ঈদ আনন্দ যোগ হয়। অনেকে দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসে গ্রামের বাড়িতে, মিলিত হতে একে অপরের সাথে। কিন্তু করোনা ভাইরাস ছড়ানোর ভয়ে এসবই বন্ধ থাকছে এখন।
ঈদুল ফিতরের মতো করোনার অভিশাপ নিয়ে আবারো সামনে আসছে পবিত্র ঈদুল আজহা। আমরা জানি ঈদুল আযহার একটি বিরাট অর্থনীতি রয়েছে। সেখানে মুসলমানদের জন্য ত্যাগের মহিমায় কোরবানি করা ওয়াজিব। সেই গুরুত্বপূর্ণ কাজটি এবারে করা নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা ও দ্বিধা-দ্বন্দ।
কীভাবে পশু কোরবানি করবে, কোথায় পাবে পশু, কে কিনবে, কীভাবে কিনবে, কীভাবে কোরবানি করার মানুষ পাওয়া যাবে, কোরবানির হাটে যাবে কীভাবে ইত্যাদি নানা ধরনের চিন্তা-ভাবনা। সরকার থেকে ইতোমধ্যে ঘোষণা করা হয়েছে সীমিত আকারে হবে কোরবানির পশুর হাট।
সরকারেরও এ বিষয়টি নিয়ে একটি সচেতনতা তৈরীর জন্য সচেষ্ট থাকতে হচ্ছে। কারণ সরকারকে সবকিছুই দেখতে হয়। যদি বেশি মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয় তবে তাদের চিকিৎসা দেওয়ার বিষয়টি সামনে সামনে চলে আসে। অপরদিকে অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে দিয়ে সীমিত আকারে হলেও গুরুত্বপূর্ণ কাজের জায়গা চালু রাখতে হয়। যেমন আিভযোগ রয়েছে বিগত রমজানের ঈদের আগে গার্মেন্টস কারখানা খুলে দেওয়ায় হঠাৎ একসাথে সকল মানুষের চলাচল করোনাকে অনেকগুণে বাড়িয়ে তুলেছিল। আবার ঈদ পর্যন্ত সাধারণ ছুটির মেয়াদ বৃদ্ধির কারণে সকল মানুষ একসাথে শহর ছেড়ে গ্রামে চলে গিয়েছিল। ঈদের পরে আবার সবাই ঢাকায় চলে এসেছিল। আসলে যদিও সবগুলোই ছিল প্রয়োজনের তাগিদে কিন্তু এতে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে এটিও সত্য।
সেজন্য এবার সরকার থেকে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে সরকারি ছুিট তিনদিনের বেশি হবে না এবং ছুটিতে কেউই কর্মস্থল ত্যাগ করতে পারবে না। তাতে মানুষের চলাচল কিছুটা হলেও কমে। যদি তা করোনা নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখে সেটাই মঙ্গলকর হবে। কারণ মানুষের জীবনের চেয়ে আর কিছুই বেশি মূল্যবান হতে পারে না। ঈদ আসবে ঈদ যাবে কিন্তু ঈদ পালন করতে গিয়ে যদি একজন মানুষেরও প্রাণহানি হয়, তবে সেটা কখনো পূরণযোগ্য নয়। ইতোমধ্যে আমরা দেখতে পাচ্ছি এই মহামারির সময় সাধারণ অনেক নাগরিকের পাশাপাশি কত গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গ জীবন দিচ্ছেন।
কারণ দেখা গেছে করোনার জন্য রমজান মাসে বিশে^র বিভিন্ন দেশের ন্যায় আমাদের দেশেও তারাবি নামাজ আদায়েও কিছুটা শিথিলতা আরোপ করা হয়েছিল। তেমনিভাবে মুসলানদের অন্যতম ফরজ কাজ হিসেবে পবিত্র হজ পালনেও এবারে শিথিলতা আরোপ করা হয়েছে। সেজন্য উৎসবপ্রিয় বাঙালিকে মেনে নিতেই হবে বিধাতার প্রাকৃতিক এ নিয়তি। চলুন আমরা যতটুকু পারি সীমিত আকারেই পালন করি আমাদের পবিত্র ঈদুল আজহার উৎসব, যেভাবে পালন করা হয়েছে পবিত্র ঈদুল ফিতর। আল্লাহ্ জীবনে বাঁচিয়ে রাখলে সামনে বহু ঈদ পাওয়া যাবে ইনশাল্লাহ।
লেখক: ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়
email: [email protected]
বহুমাত্রিক.কম