ফাইল ছবি
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে প্রায় প্রতিবছরই ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়েছে এশিয়ার দেশগুলো। এ বছরের চিত্রও গত কয়েক বছরের মতোই। বছর বছর এমন ভয়াবহ বন্যার কারণ জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। তারা মনে করেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সমুদ্রের উষ্ণতা বৃদ্ধি এবং অতিবৃষ্টির পাশাপাশি ইন্দোনেশিয়া ও শ্রীলঙ্কার ভৌগোলিক দুর্বলতাও দায়ী। যে কারণে বন্যার ভয়াবহতা প্রতি বছরই বেড়ে চলেছে। এ খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা এএফপি।
এতে বলা হয়, গত মাসে দু’টি ক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড় এশিয়ার ওই দুই দেশে ব্যাপক বৃষ্টিপাত ঘটায়। ফলে সৃষ্ট ভূমিধস ও বন্যায় শ্রীলঙ্কায় ছয় শতাধিক এবং ইন্দোনেশিয়ায় প্রায় ১ হাজার মানুষ মারা যায়। এশিয়ার এ দুই দেশের দ্রুত পরিবর্তনশীল আবহাওয়া ব্যবস্থার ওপর কাজ করা একদল বিজ্ঞানী জানিয়েছেন, একাধিক কারণের সম্মিলন এই বিপর্যয়ের সৃষ্টি করেছে। এর মধ্যে রয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে সম্পর্কিত অতিবৃষ্টি এবং সমুদ্রের উষ্ণতা বৃদ্ধি, সেই সঙ্গে লা নিনা ও ভারত মহাসাগরীয় ডাইপোলের মতো আবহাওয়ার ধারা।
বিজ্ঞানীরা মনে করেন, জলবায়ু পরিবর্তনের সঠিক প্রভাব পরিমাপ করা যায়নি। কারণ, আবহাওয়ার কিছু মৌসুমি এবং আঞ্চলিক ধরন মডেলগুলোতে সম্পূর্ণভাবে ধরা পড়ে না। তা সত্ত্বেও তারা দেখেছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সাম্প্রতিক দশকগুলোতে উভয় অঞ্চলে অতিবৃষ্টির ঘটনা আরও তীব্র হয়েছে এবং জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সমুদ্রের উপরিভাগের তাপমাত্রাও বেড়েছে। উষ্ণ সমুদ্র আবহাওয়াকে শক্তিশালী এবং আর্দ্রতা বাড়িয়ে দিতে পারে।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, বন উজাড় ও প্রাকৃতিক ভূ-প্রকৃতিও ভূমিকা রেখেছে। এতে ভারী বর্ষণ জনবহুল সমতলভূমিতে গিয়ে বন্যা সৃষ্টি করেছে। এশিয়ার অনেক অঞ্চলে মৌসুমি বৃষ্টি সাধারণ ঘটনা। তবে এবার দু’টি ক্রান্তীয় ঝড় মৌসুমি বর্ষণের সঙ্গে মিলে ভয়াবহ বিপর্যয় ডেকে এনেছে। নেদারল্যান্ডস আবহাওয়া গবেষণা ইনস্টিটিউটের জলবায়ু গবেষক ও গবেষণার প্রধান লেখক সারা কিউ বলেন, এই অঞ্চলে মৌসুমি বৃষ্টি স্বাভাবিক। অস্বাভাবিক হলো ঝড়ের ক্রমবর্ধমান তীব্রতা, যা লাখো মানুষকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে এবং শত শত প্রাণ কেড়ে নিচ্ছে।
গবেষণার অন্যতম লেখক এবং ইম্পিরিয়াল কলেজ লন্ডনের রিসার্চ এসোসিয়েট মারিয়াম জাকারিয়া বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন হলো চরম বৃষ্টিপাতের তীব্রতা বৃদ্ধির পেছনে অবদান রাখা একটি চালিকা শক্তি। অ্যাট্রিবিউশন স্টাডি নামে পরিচিত এই বিশ্লেষণটি যাচাইকৃত পদ্ধতি ব্যবহার করে, একটি উষ্ণ জলবায়ু কীভাবে বিভিন্ন আবহাওয়ার ঘটনাকে প্রভাবিত করতে পারে তা মূল্যায়ন করে। জাকারিয়া সাংবাদিকদের জানান, বিজ্ঞানীরা দেখতে পেয়েছেন যে, মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ার মধ্যবর্তী মালাক্কা প্রণালি অঞ্চলে তীব্র বৃষ্টিপাতের ঘটনা বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির ফলে আনুমানিক ৯ থেকে ৫০ শতাংশ বেড়ে গেছে। তিনি আরও বলেন, শ্রীলঙ্কায় এই প্রবণতা আরও শক্তিশালী। সেখানে এখন ভারী বর্ষণ প্রায় ২৮ থেকে ১৬০ শতাংশ বেশি তীব্র হয়েছে। জাকারিয়া আরও বলেন, যদিও ডেটা সেটগুলোতে ব্যাপক ভিন্নতা দেখা গেছে, তবুও এই দু’টি অঞ্চলে তীব্র বৃষ্টিপাতের ঘটনা আরও বাড়ার ব্যাপারে সবগুলো ডেটা একই দিকে ইঙ্গিত করছে।




