জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের অমর কাব্যগ্রন্থ ‘অগ্নি-বীণা’ বাংলা সাহিত্য ও বাঙালির মনস্তত্ব পরিবর্তনে বিরাট অবদান রেখেছে মন্তব্য করেছেন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. সৌমিত্র শেখর।
তিনি বলেন, ১৯২২ সালে যে গ্রন্থটি বের হলো, তারপর থেকে আজকের যে ১০০ বছর, এই শত বছরে আমাদের যে উত্থান, অগ্রগতি, আমদের এগিয়ে আসা সবকিছুর পেছনে এই গ্রন্থটি অন্যতম চাবিগ্রন্থ হিসেবে কাজ করেছে। কিন্তু দু:খের বিষয় এই গ্রন্থটি নিয়ে ব্যাপকভাবে কোন আলাপ আলোচনা নেই, গবেষণা নেই।
বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের ভার্চুয়াল কনফারেন্স কক্ষে ‘বিভাগীয় বার্ষিক সেমিনার ও অগ্নি-বীণার শতবর্ষ উদযাপন অনুষ্ঠানে’ প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা ভাষা ও সাহিত্য বিভাগ সেমিনারটি আয়োজন করেন।
সেমিনারে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. ফারজানা সিদ্দিকা ‘অগ্নি-বীণা: একুশ শতকে পুনর্পাঠ’ শীষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদের ডিন ও বাংলা ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের প্রধান ড. আহমেদুল বারীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রবন্ধ নিয়ে আলোচনা করেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. সরিফা সালোয়া ডিনা ও নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের অধ্যাপক ড. তারানা নূপুর।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে অধ্যাপক ড. সৌমিত্র শেখর বলেন, সেই সময়ে যখন চারিদিকে রবীন্দ্রনাথের এত বড় একটা ব্যাপক প্রভাব ছিল, সেময়ে নজরুল অগ্নি-বীণা লিখে অভাবনীয় কাজ করেছিলেন। অগ্নি-বীণার প্রথম কবিতার নাম প্রলয়োল্লাস। কবিতাটি ‘তুই’ দিয়ে শুরু হয়েছে। এই ‘তুই’ তুচ্ছার্থে নাকি ঘনিষ্ঠার্থে সেটি গবেষণার বিষয়। একজন বিপ্লবী নেতাকে তিনি তাঁর কাব্যগ্রন্থটি উৎসর্গ করেছিলেন। যিনি একজন বিপ্লবী মানুষকে এতটা সম্মান দিতে জানেন তাঁর ভেতরের বৈপ্লবিক চেতনা কতটা প্রখর সেটিও আমরা বুঝতে পারি। এই বৈপ্লবিক চেতনা শুধু রাজনৈতিক সেটা নয়, এই চেতনাটি সাহিত্যিক।
তিরিশের দশকের পঞ্চপা-ব কবিদের পশ্চিমা আধুনিকতার প্রসঙ্গ তুলে ধরে গবেষক অধ্যাপক ড. সৌমিত্র শেখর বলেন, তার পশ্চিম থেকে তত্ত্ব নিয়েছেন এখানে বাংলা কবিতায় প্রয়োগ করেছেন। আমরা তাদের আধুনিক মহান কবি দিয়ে বাহবা দিয়েছি। কিন্তু রবীন্দ্রবলয়কে অতিক্রম করে নজরুল যে বিশের দশকে নুতন কাব্যধারা, চিন্তা, স্বাজত্যবোধ নিয়ে এলেন তিনি কি আধুনিক কবি নন! বিদ্রোহী কবিতার মধ্যে যে এত কিছুর যে সংযোগ এটাকে কি আমরা আধুনিক কবিতা বলবো না! ভারতীয় আধুনিকতা আসলে নজরুল থেকেই শুরু হয়েছে। তিনিই আমাদের প্রথম আধুনিকতা শিখিয়েছেন।
নজরুল ও অগ্নি-বীণাকে পুর্নপাঠ করার জন্য শিক্ষার্থীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে উপাচার্য বলেন, নজরুলকে বন্ধ করে স্তব্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। তাকে নিয়ে স্যাটায়ার, ব্যঙ্গ হয়েছে কিন্তু তিনি পড়োয়া করেন নি, মাথা নত করেন নি। তাই আধুনিকতা ও জীবনবোধ সম্পর্কে জানতে হলে নজরুলকে পাঠ করতে হবে।
বহুমাত্রিক.কম