![চিরনিদ্রায় শায়িত কবি আসাদ চৌধুরী চিরনিদ্রায় শায়িত কবি আসাদ চৌধুরী](https://www.bahumatrik.com/media/imgAll/2018September/asad-2310071043.jpg)
ফাইল ছবি
কানাডার অন্টারিও'র পিকারিং ডাফিন মেডোজ কবরস্থানে চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন একুশে পদকপ্রাপ্ত ও বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কারপ্রাপ্ত কবি আসাদ চৌধুরী।
শুক্রবার বাদ জুমা টরন্টোর নাগেট মসজিদে কবির নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। পরে তার মরদেহ সর্বসাধারণের শ্রদ্ধা ও সম্মান জানানোর জন্য মসজিদের অভ্যন্তরে আধা ঘণ্টা রাখা হয়। সর্বসাধারণের শ্রদ্ধা জানানো সম্পন্ন হলে কবির মরদেহ অন্টারিও'র পিকারিং ডাফিন মেডোজ কবরস্থানে দাফন করা হয়।
বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় রাত ৩টার দিকে কানাডার টরন্টোতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় কবি আসাদ চৌধুরীর মৃত্যু হয়। তার বয়স হয়েছিল ৮৩ বছর। অশোয়ার লেকরিজ হেলথ হাসপাতালে কবি চিকিৎসাধীন ছিলেন।
আসাদ চৌধুরী দীর্ঘদিন বার্ধক্যজনিত সমস্যায় ভুগছিলেন। গত বছরের নভেম্বরে তার ব্লাড ক্যান্সার ধরা পড়ে। বোনম্যারো থেকে অস্বাভাবিক কোষ তৈরি হচ্ছিল। বয়সের কারণে তার বোনম্যারো ট্রান্সপ্ল্যান্ট করা সম্ভব হচ্ছিল না।
এছাড়া তিনি কিডনি, হার্ট ও বয়সজনিত জটিলতায় ভুগছিলেন। গত ১৭ সেপ্টেম্বর কবির এনজিওগ্রাম করে দুটি ব্লকের ৯৯ ও ৮৮ শতাংশ সারানো হয়। সে সময় কবির জামাতা জানিয়েছিলেন, সকাল থেকে রাত নয়টা পর্যন্ত আইসিইউয়ে থাকার পর কবিকে সিসিইউয়ে নেওয়া হয়। ফুসফুস ও হার্ট দুটিরই খুব ক্রিটিক্যাল অবস্থা ছিল।
কবি বেশ কয়েক বছর ধরে কানাডায় পরিবারের সঙ্গে বাস করছিলেন। সর্বশেষ ২০২২ সালে তিনি দেশে এসেছিলেন। নাদিম জানান, কবি বারবার দেশে আসার ইচ্ছা ব্যক্ত করতেন। তবে শারীরিক অবস্থার কারণে তা সম্ভব হয়নি।
মৃত্যুকালে অসংখ্য গুণগ্রাহী পাঠক ও শুভাকাঙ্ক্ষীসহ তিনি রেখে গেছেন সহধর্মিণী সাহানা চৌধুরী, ছেলে আসিফ চৌধুরী ও জারিফ চৌধুরী, মেয়ে নুসরাত জাহান চৌধুরী এবং জামাতা নাদিম ইকবালকে।
আসাদ চৌধুরী বাংলাদেশের প্রধান কবিদের অন্যতম। তিনি ১৯৮৭ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার এবং ২০১৩ সালে একুশে পদক লাভ করেন।
মৌলিক কবিতা ছাড়াও শিশুতোষ গ্রন্থ, ছড়া, জীবনী এবং অনুবাদকর্মে তার অবদান প্রণিধানযোগ্য। ১৯৮৩ সালে তার রচিত ‘বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ’ শীর্ষক বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য গ্রন্থটি প্রকাশিত হয়। এছাড়া একই বছর তিনি সম্পাদনা করেন বঙ্গবন্ধুর জীবনী ভিত্তিক গ্রন্থ ‘সংগ্রামী নায়ক বঙ্গবন্ধু’। আকর্ষণীয় বাচনভঙ্গি, টেলিভিশনে জনপ্রিয় সব অনুষ্ঠান পরিকল্পনা ও উপস্থাপনার জন্যেও তিনি পরিচিত।
আসাদ চৌধুরী ১৯৪৩ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার উলানিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৫৭ সালে আরমানিটোলা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ১৯৬০ সালে বরিশালের ব্রজমোহন কলেজ থেকে তিনি উচ্চমাধ্যমিক সম্পন্ন করেন। পরবর্তীকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় স্নাতক (সম্মান) ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ চুকিয়ে কলেজে অধ্যাপনার মধ্য দিয়ে আসাদ চৌধুরীর চাকরিজীবন শুরু। ব্রাহ্মণবাড়িয়া কলেজে তিনি ১৯৬৪ থেকে ১৯৭২ পর্যন্ত শিক্ষকতা করেন। পরবর্তীকালে তিনি বিভিন্ন খবরের কাগজে সাংবাদিকতা করেছেন। ১৯৮৫ থেকে ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত তিনি ভয়েস অব জার্মানির বাংলাদেশ সংবাদদাতার দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ১৯৭৩ সালে ঢাকায় বাংলা একাডেমিতে যোগদান করে দীর্ঘকাল চাকরির পর এর পরিচালক হিসেবে অবসর গ্রহণ করেন।