
ফাইল ছবি
রংপুরের কাউনিয়া উপজেলায় নতুন করে আরও দুজন অ্যানথ্রাক্স শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে জেলায় এ পর্যন্ত ১১ জন অ্যানথ্রাক্স আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হলো।বুধবার রাতে জেলা সিভিল সার্জন শাহীন সুলতানা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এর আগে পীরগাছা উপজেলায় আটজন ও মিঠাপুকুরে একজনের শরীরে অ্যানথ্রাক্স শনাক্ত হয়েছিল।
জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্র জানিয়েছে, গত আগস্টে রংপুরের পীরগাছায় অ্যানথ্রাক্সের উপসর্গ নিয়ে দুজন মারা গেছেন। একই সময়ে অ্যানথ্রাক্স রোগে উপজেলার চারটি ইউনিয়নে অন্তত দুই শতাধিক ব্যক্তি আক্রান্ত হন। পরে আইইডিসিআরের একটি প্রতিনিধিদল গত ১৩ ও ১৪ সেপ্টেম্বর পীরগাছা সদর এবং পারুল ইউনিয়নের অ্যানথ্রাক্সের উপসর্গ থাকা ১২ নারী-পুরুষের নমুনা সংগ্রহ করেছিল। এর মধ্যে আটজনের অ্যানথ্রাক্স শনাক্ত করা হয়। ওই সময় ঘটনাস্থল থেকে অসুস্থ গরুর মাংসের নমুনা পরীক্ষা করে অ্যানথ্রাক্স শনাক্ত করেছিল প্রাণিসম্পদ বিভাগ।
এদিকে গত ১৫ সেপ্টেম্বর রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার ইমাদপুর ইউনিয়নের আমাইপুর গ্রামে কৃষক ইব্রাহিম মিয়ার একটি গরু অসুস্থ হয়। পরে সেটি জবাই করা হলে আশপাশের লোকজন মাংস কাটাকাটি করেন। ঘটনার দুই দিন পর স্থানীয় চারজন—সোহরাব হোসেন, আব্দুর রাজ্জাক, মনির হোসেন, মজিবর রহমানসহ কয়েকজন চর্মরোগে আক্রান্ত হন। তাদের শরীর থেকে সংগৃহীত নমুনা পরীক্ষার জন্য আইইডিসিআরে পাঠানো হয়েছে। তাদের মধ্যে একজনের অ্যানথ্রাক্স শনাক্ত হয়।
মিঠাপুকুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার (রোগ নিয়ন্ত্রণ) এম এ হালিম লাবলু বলেন, ইমাদপুরে যারা আক্রান্ত হয়েছেন, তারা অ্যানথ্রাক্স আক্রান্ত গবাদিপশুর শ্লেষ্মা, লালা, রক্ত, মাংস, হাড় ও নাড়িভুঁড়ির সংস্পর্শে এসে আক্রান্ত হয়েছেন। তবু রোগী যাতে সামাজিকভাবে কোনো হেয় পরিস্থিতির মধ্যে না পড়েন, সে জন্য তাদের নাম প্রকাশ করা হচ্ছে না।
এদিকে পীরগাছা ও মিঠাপুকুর উপজেলার পর কাউনিয়া উপজেলায় এই রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিলে আক্রান্ত পাঁচ ব্যক্তির নমুনা সংগ্রহ করে আইইডিসিআরে পাঠানো হলে দুজনের শরীরে অ্যানথ্রাক্স সনাক্ত হয়েছে।
রংপুর জেলা স্বাস্থ্য তত্ত্বাবধায়ক আরবিন্দু কুমার মোদক বলেন, কাউনিয়া উপজেলার পাঁচজনের নমুনা পরীক্ষায় দুজনের শরীর অ্যানথ্রাক্স শনাক্ত হয়েছে। আমরা সতর্ক অবস্থানে রয়েছি। উপজেলা গুলোতে আমাদের স্বাস্থ্য সহকারীদের নমুনা সংগ্রহের প্রশিক্ষণ দিয়েছে আইইডিসিআর। আক্রান্তের খবর পেলেই তারা নমুনা সংগ্রহ করে আইইডিসিআরকে পাঠাচ্ছে। একইসাথে অ্যানথ্রাক্স সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করার কাজও অব্যাহত রেখেছে স্বাস্থ্য বিভাগ।
উল্লেখ, গত আগস্টে রংপুরের পীরগাছা উপজেলায় এই রোগে আক্রান্ত হয়ে প্রায় ১ হাজর গবাদিপশু মারা যাওয়ার পাশাপাশি অ্যানথ্রাক্সের উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন দুইজন। একইসাথে উপজেলাটিতে এখন পর্যন্ত একই রোগে আক্রান্ত হয়েছেন অন্তত দুই শতাধিক মানুষ। শুরুতে শুধু পীরগাছা উপজেলায় অ্যানথ্রাক্সের প্রাদুর্ভাব দেখা দিলেও এখন তা ছড়িয়ে পড়ছে পুরো জেলাতে।