Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

বৈশাখ ৪ ১৪৩১, বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪

লিডিং ইউনিভার্সিটির ভিসির অনিয়ম নিয়ে ইউজিসি’তে ট্রাস্টি বোর্ড

মোহাম্মদ গোলজার আহমদ, নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১২:১৫, ১৫ মার্চ ২০২৩

প্রিন্ট:

লিডিং ইউনিভার্সিটির ভিসির অনিয়ম নিয়ে ইউজিসি’তে ট্রাস্টি বোর্ড

ছবি: বহুমাত্রিক.কম

সিলেটের ১ম বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় লিডিং ইউনিভার্সিটির ভিসি'র বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ এনেছে ট্রাস্টি বোর্ড। গত ৬ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি  কমিশনের  (ইউজিসি) চেয়ারম্যানের কাছে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন বোর্ড অফ ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান ড. সৈয়দ রাগীব আলী।

উপাচার্য অধ্যাপক কাজী আজিজুল মওলার স্বেচ্ছাচারিতা, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, বিদেশে অর্থ পাচার ও ইচ্ছাকৃতভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থিক ক্ষতিসাধন সহ চিঠিতে বিস্তর অভিযোগ তুলে ধরেন ট্রাস্টি বোর্ড চেয়ারম্যান।এর ফলে ভিসি অধ্যাপক আজিজুল মওলা বোর্ড অফ ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান রাগীব আলী কে ইনক্যপাবল (অক্ষম) হিসেবে আখ্যায়িত করেন। এবং ট্রাস্টি বোর্ডের বিরুদ্ধে একটি আইনগত নোটিশ প্রেরণ করেন।

এতে করে ভিসি ট্রাস্টি বোর্ডের রোষানলে পড়েন। আইনগত নোটিশ ও ভিসির বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত উপাচার্য কে দায়িত্ব পালনে বিরত থাকতে আহবান করে ট্রাস্টি বোর্ড।গতকাল সোমবার বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ট্রাস্টি বোর্ডের সেক্রেটারি ও বিশ্ববিদ্যালয় ট্রেজার বনমালী ভৌমিক সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। ট্রেজারার বনমালী ভৌমিক ভিসির বিরুদ্ধে অফিস ফাঁকি,জাতির পিতার ছবি নামানো, শেখ রাসেলের বোর্ড নামানো সহ আরো বিভিন্ন অভিযোগ তুলে ধরেন। ভিসি অধ্যাপক আজিজুল মওলা এসকল অভিযোগের তোয়াক্কা না করে বিদেশ সফর শেষে গতকাল সকালে তাঁর দপ্তরে আসেন। কিন্তু তিনি তাঁর কার্যালয়ে প্রবেশ করতে না পেরে করিডোরে বসে পড়েন। 

 উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সিলেটের গণমাধ্যমকর্মীরা ভিসির সঙ্গে কথা বলেন।অধ্যাপক আজিজুল মওলা বলেন, আমি এ বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদানের পর থেকে আর্থিক অনিয়ম রোধ, একাডেমিক আপগ্রেডেশন করি, যা তাদের (ট্রাস্টি) পছন্দ হয়নি। বিশেষ করে ফ্রি হ্যান্ডে ডকুমেন্ট ছাড়া টাকা নেওয়ায় বাধা দেওয়ায় আমার প্রতি তারা নাখোশ। তাই ছুটি কাটিয়ে ফেরার পর ট্রাস্টি বডি আমাকে দায়িত্ব দিতে চাচ্ছে না।

ভিসি জানান, বোর্ড অব ট্রাস্ট্রিজ চেয়ারম্যানের জন্মদিন পালনে ৪০ লাখ টাকা খরচ করে; তাঁর স্ত্রী রাবেয়া খাতুনের মৃত্যুবার্ষিকীতে কোটি টাকা খরচ করেছে। বিভিন্ন সময় ট্রাস্টি চেয়ারম্যানের পুত্রবধূ টাকা তুলে নিতেন। এসব করলে তো বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিস্থিতি খারাপ হবে। স্থপতি ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) স্থাপত্য বিভাগের অধ্যাপক আজিজুল মওলা বলেন, আমি ২০২১ সালের ১ মার্চ লিডিং ইউনিভার্সিটির ভাইস চ্যান্সেলর নিযুক্ত হই। রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে দায়িত্ব নেওয়ার পর গত দুই বছরে আমি এ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন কার্যক্রমে গতি নিয়ে এসেছি। আমার গৃহীত বিশ্ববিদ্যালয় বান্ধব বিভিন্ন আইনানুগ পদক্ষেপ ট্রাস্টি বোর্ডের কিছু সদস্য ও তাদের মদদপুষ্টদের স্বার্থ পরিপন্থী হয়। যে কারণে তারা আমাকে নানাভাবে বিতর্কিত করার চেষ্টা করে যাচ্ছেন।

তিনি জানান, গত ১২ জানুয়ারি বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) অনুমোদন নিয়ে একটি সেমিনারে অংশ নিতে যুক্তরাষ্ট্রে যাই। ২৪ জানুয়ারি আমার দেশে ফেরার কথা ছিল। কিন্তু সে সময় যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিকূল আবহাওয়া, এ কারণে শারীরিক অসুস্থতা, বিমানে মেডিকেল ইমার্জেন্সির কারণে একাধিকবার ফ্লাইট শিডিউল পরিবর্তন করার প্রয়োজন হয়। এসব বিষয় আমি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে পূর্বনির্ধারিত তারিখের পরিবর্তে গত ১৬ ফেব্রুয়ারি দেশে ফিরি। ১৯ ফেব্রুয়ারি আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেওয়ার প্রস্তুতি নিই। তার আগের দিন (১৮ ফেব্রুয়ারি) ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যানের সই করা একটি চিঠি ই-মেইলে পাই। চিঠিতে আমার বিরুদ্ধে বিভিন্ন বানোয়াট/অসত্য তথ্য উপস্থাপন করে অভিযুক্ত করা হয়।

এর ধারাবাহিকতায় আমাকে বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান করতে নিষেধ করা হয় এবং আগামী ৬ মাস থেকে ১ বছর অবৈতনিক জরুরি ছুটি নিতে পরামর্শ দেওয়া হয়। এমন পদক্ষেপ সুস্পষ্টভাবে ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যানের এখতিয়ার বহির্ভূত ও দেশের বিদ্যমান আইনের পরিপন্থী। জানা গেছে, ট্রাস্টি চেয়ারম্যান ও ভিসি আজিজুল মওলার অবর্তমানে ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন বনমালী ভৌমিক।

ভিসির বিরুদ্ধে অভিযোগের ব্যাপারে লিডিং ইউনিভার্সিটির ফিন্যান্স এন্ড একাউন্টসের ডিরেক্টর মোহাম্মদ কবির আহমদ জানান, গত ১ মার্চ ২০২১ সালে উপাচার্য ড. কাজী আজিজুল মওলা লিডিং ইউনিভার্সিটিতে যোগদানের পর থেকে তার ছেলেমেয়েকে দেখাশোনা ও প্রমোদ ভ্রমণের জন্য এ পর্যন্ত বিভিন্ন ভিত্তিহীন অজুহাত দেখিয়ে ও কর্তৃপক্ষের বিনা অনুমতিতে চারবার আমেরিকা সফর করেছেন। উল্লেখিত সময়ে বিদেশে অবস্থানকালে উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের দায়িত্বভার কাউকে বুঝিয়ে দিয়ে যাননি। বোর্ড অফ ট্রাস্টিজের কিংবা সরকারের কোনরকম অনুমোদন ব্যতীত এবং সম্পূর্ণ আইন বহির্ভূতভাবে ব্যক্তিগত আয়কর ফাঁকি দিয়ে দুর্নীতির মাধ্যমে বিগত দুই বছরে বিশ্ববিদ্যালয় সাধারণত তহবিল থেকে নির্ধারিত বেতনের অতিরিক্ত মোট উনিশ লক্ষ পঞ্চাশ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেছেন। এছাড়া ক্যাম্পাস উন্নয়ন কমিটির তোয়াক্কা না করে অধিক মূল্য উত্তোলন করে অর্থ আত্মসাৎ সহ বিভিন্ন অপকর্মে জড়িয়ে পড়েছেন।

তিনি আরো জানান, উপাচার্য ড. কাজী আজিজুল মওলা গত ১৯ জুলাই ২০২২ তারিখে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০১০ এর ধারা ৪৪ (৬) সম্পূর্ণ লংঘন করে আড়াই হাজার পাউন্ড স্টার্লিং (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় সোয়া চার লক্ষ টাকা) অর্থ লিডিং ইউনিভার্সিটির সাধারন তহবিল হতে যুক্তরাজ্যের একটি কোম্পানির একাউন্টে প্রেরণ করেন। এসব বিষয়ে গত ২২ ফেব্রুয়ারী লিডিং ইউনিভার্সিটি ৬৯ তম সিন্ডিকেট সভা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের ২১তম সভায় উপাচার্য কর্তৃক বিদেশে অর্থ পাচারের বিষয়টি দুর্নীতি দমন কমিশনে গত ৫/৩/২৩ তারিখে লিখিতভাবে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।

Walton Refrigerator Freezer
Walton Refrigerator Freezer