আফ্রিকার পর এবার দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার দেশ ইন্দোনেশিয়ায় কিডনি বিকল হয়ে মৃত শিশুর সংখ্যা বেড়ে ১৩৩ জনে দাঁড়িয়েছে। দেশটির স্বাস্থ্যমন্ত্রী গুনাদি সাদিকিন জানিয়েছেন, ২২ প্রদেশে এখন পর্যন্ত এই শিশুদের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
সিরাপজনিত কারণে এই ঘটনা ঘটছে বলে মনে করা হচ্ছে। ফলে আপাতত সবধরনের সিরাপভিত্তিক চিকিৎসা নিষিদ্ধ করা হয়েছে ইন্দোনেশিয়ায়। এছাড়াও সিরাপ বিক্রিও নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
ইন্দোনেশিয়ার বাজারে প্রচলিত সিরাপে ইথিলিন গ্লাইকল ও ডায়েথিলিন গ্লাইকল পাওয়া যাওয়ায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
সম্প্রতি গাম্বিয়াতেও কিডনি বিকল হয়ে ৭০ জন শিশুর মৃত্যু হয়েছে। প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, ভারতীয় ওষুধ প্রস্তুতকারী কোম্পানি মেইডেন ফার্মাসিটিক্যালসের তৈরি চারটি সর্দিকাশির সিরাপ দায়ী এসব মৃত্যুর জন্য।
ইন্দোনেশিয়ার খাদ্য ও ওষুধ এজেন্সি স্থানীয়ভাবে তৈরি পাঁচটি সিরাপে ইথিলিন গ্লাইকল থাকায় উৎপাদকদের তা পুরোপুরিভাবে ধ্বংস করে ফেলতে বলা হয়েছে।
এছাড়াও ১০২ টি সিরাপে একই ধরনের উপাদানের সন্ধান মেলায় সেগুলোও সাময়িকভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
শুক্রবার রাজধানী জাকার্তায় এক সংবাদ সম্মেলনে সাদিকিন বলেন, ‘আমাদের কাছে থাকা তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের শুরু থেকে এ পর্যন্ত দেশের ২২ প্রদেশে গুরুতর কিডনি জটিলতায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ২৪১ জন এবং তাদের মধ্যে ১৩৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। মৃত এই শিশুদের অধিকাংশেরই বয়স ৫ বছরের কম।’
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) ওই তদন্তে আরও জানা গেছে, ওই চারটি কফ সিরাপে এথিলিন গ্লাইকল ও ডায়াথিলিন গ্লাইকল নামের দুটি রাসায়নিক উপাদানের বিপজ্জনক মাত্রার উপস্থিতি পাওয়া গেছে।
সাধারণত শিল্প ও কলকারখানায় এই দু’টি রাসায়নিক উপদান ব্যবহার করা হয়। দামে সস্তা হওয়ায় অনেক ওষুধ কোম্পানি সিরাপ তৈরিতে খাবার উপযোগী গ্লিসারিনের পরিবর্তে এই দুই উপাদান ব্যবহার করে। কোনো তরলে স্বল্পমাত্রায় ইথিলিন গ্লাইকোল ও ডায়াথিলিন গ্লাইকোল ব্যবহার করা হলে মানবদেহে তেমন গুরুতর কোনো প্রভাব পড়ে না, কিন্তু সেই মাত্রা অতিক্রম করলে গুরুতর স্বাস্থ্যঝুঁকির আশঙ্কা থাকে।
শুক্রবারের সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর বক্তব্য থেকে জানা গেছে, গাম্বিয়া ও ইন্দোনেশিয়ায় শিশুদের কিডনি বিকল হয়ে মৃত্যুর কারণ একই; অর্থাৎ ঠাণ্ডাসর্দি ও কাশির সিরাপে এথিলিন গ্লাইকোল, ডায়েথিলিন গ্লাইকলসহ ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থের উপস্থিতি।
মন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের প্রাথমিক তদন্তে শিশুদের ঠাণ্ডাজ্বর ও সর্দিকাশির চিকিৎসার জন্য উপযোগী ৫টি সিরাপে বিপজ্জনক মাত্রায় এথিলিন গ্লাইকোল, ডায়াতিলিন গ্লাইকোল ও এথেলিন গ্লাইকোল বিউটাইল ইথারের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। (কিডনি জটিলতায়) মৃত ও আক্রান্ত শিশুদের প্রত্যেকেই এই ৫টি সিরাপের কোনো একটি সেবন করেছিল বলেও আমরা জানতে পেরেছি।’