Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

শ্রাবণ ১১ ১৪৩১, শনিবার ২৭ জুলাই ২০২৪

বাকৃবিতে প্রথম সুস্বাদু দেশীয় শিং মাছের জিনোম সিকুয়েন্স উদ্ভাবন  

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২০:৪৮, ১৫ মে ২০২৪

আপডেট: ০০:৫৭, ১৬ মে ২০২৪

প্রিন্ট:

বাকৃবিতে প্রথম সুস্বাদু দেশীয় শিং মাছের জিনোম সিকুয়েন্স উদ্ভাবন  

ছবি: বহুমাত্রিক.কম

দেশীয় শিং মাছের প্রজাতিকে টিকিয়ে রেখে খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা বজায় রাখতে প্রথমবারের মতো দেশীয় এই শিং মাছের জিনোম সিকোয়েন্স উন্মোচন এবং পুরুষ ও স্ত্রী মাছ নির্ধারণকারী সম্ভাব্য জিন শনাক্ত করেছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) ফিসারিজ বায়োলজি ও জেনেটিক্স বিভাগের অধ্যাপক ড. তাসলিমা খানম ও তার গবেষক দল।

দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশীয় শিং মাছ একটি জনপ্রিয় ও বাণিজ্যিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ মাছের প্রজাতি। লোহিত রক্ত কণিকা উৎপাদনে শিং মাছের আলাদা গুরুত্ব রয়েছে। প্রতি ১০০ গ্রাম শিং মাছে ২২০ মিলিগ্রাম পর্যন্ত লৌহ উপাদান পাওয়া যায়, যা লোহিত রক্ত কণিকার প্রধান উপাদান। এছাড়া এতে রয়েছে উন্নতমানের আমিষ ও ক্যালসিয়াম।  

মানবদেহে পুষ্টি ও ঔষধি গুণাগুণের পাশাপাশি খেতে সুস্বাদু, কম কাটা ও স্বল্প চর্বিযুক্ত হওয়ায় মাছটি বিশেষভাবে সুপরিচিত। জলবায়ু পরিবর্তন, বন্যা, অতিরিক্ত আহরণ ও প্রাকৃতিক আবাসস্থল ধ্বংসের কারণে দেশীয় এ মাছটি বর্তমানে হুমকির সম্মুখীন। 

বাকৃবি গবেষক অধ্যাপক ড. তাসলিমা খানম জানান, গত ২০২০-২০২১ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী স্বাদুপানির মোট উৎপাদিত মাছের ২ দশমিক ৫২ শতাংশ আসে শিং ও মাগুর মাছ থেকে। স্ত্রী শিং মাছের বৃদ্ধি পুরুষ শিং মাছ অপেক্ষা ৪০ থেকে ৬০ শতাংশ বেশি হয়ে থাকে। তাই এই মাছের বাণিজ্যিক উৎপাদন বাড়ানোর জন্য মনোসেক্স শিং মাছ উৎপাদন অন্যতম একটি উপায়। সফলভাবে মনোসেক্স শিং মাছ উৎপাদনের জন্য লিঙ্গ নির্ধারণকারী জিন শনাক্তকরণ অত্যন্ত জরুরি। এরই ধারাবাহিকতায় ২০২০ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব অর্থায়নে শিং মাছের জিন নিয়ে গবেষণা শুরু হয়। ব্রহ্মপুত্র নদ থেকে সংগৃহীত দেশীয় শিং মাছের নমুনা দিয়ে অধ্যাপক তাসলিমার নেতৃত্বে বাংলাদেশ, জাপান ও সুইডেনের একদল গবেষক গবেষণা কাজ শুরু করেন। 

অভিজ্ঞ এই গবেষক আরও জানান, পরবর্তী সময়ে ২০২২ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত সময়ে দেশীয় শিংমাছের ৮টি ফ্যামিলির প্রায় ৮০০টি পোনার নমুনা নিয়ে জাপানের টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ে সিকোয়েন্সিং ও জিন শনাক্তকরণের কাজ করা হয়। সর্বাধুনিক সিকোয়েন্সিং প্রযুক্তি ও সুপার কম্পিউটার ব্যবহার করে বায়োইনফরমেটিক এনালাইসিসের মাধ্যমে ওই জিনোম সিকুয়েন্স সম্পন্ন করা হয়েছে। ২০২২ থেকে ২০২৪ সময়কালে গবেষণা কাজে অর্থায়ন করে জাপান সোসাইটি ফর দি প্রমোশন অফ সায়েন্স (জেএসপিএস)। গবেষণা কাজে আরও সাহায্য করেন মৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী নিত্যানন্দ, স্বর্ণা, হালিমা, জেসমিন, কানিজ এবং সারা।

গবেষণার ফলাফল সম্পর্কে প্রধান গবেষক বলেন, গবেষণায় উদ্ভাবিত ড্রাফট জিনোম (প্রথমবার শনাক্তকৃত জিনোম) দিয়ে পুরুষ ও স্ত্রী শিং মাছ শনাক্ত করা সম্ভব, যা যেকোনো দেশীয় সকল প্রজাতির মাছের ক্ষেত্রে এই প্রথম। এর মাধ্যমে শুধু স্ত্রী শিং মাছ উৎপাদন করা সম্ভব হবে। এতে করে প্রাকৃতিক জলাশয় ছাড়াও কৃত্রিম পদ্ধতিতে অধিক ফলনশীল স্ত্রী শিং মাছ চাষ করা সম্ভব হবে। শিং মাছের জিনোম থেকে শুধুমাত্র পুরুষ ও স্ত্রী শিঙ মাছ নির্ধারণকারী জিন ছাড়াও অন্যান্য বৈশিষ্ট্য যেমন বৃদ্ধি, রোগ প্রতিরোধ ও প্রতিকূল পরিবেশে টিকে থাকার জন্য দায়ী জিন শনাক্তকরণেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। প্রচলিত হরমোন প্রয়োগ পদ্ধতির পরিবর্তে মার্কার অ্যাসিসটেড সিলেকশন (এমএএস) এর মাধ্যমে স্বল্প সময়ে স্ত্রী শিং মাছ উৎপাদন করা সম্ভব হবে, যা অনেকবেশি স্বাস্থ্যসম্মত ও পরিবেশবান্ধব। গবেষণা কাজের ফলাফল চলতি বছরের মার্চে জাপানিজ সোসাইটি অফ ফিশারিজ সায়েন্স আয়োজিত একটি আন্তর্জাতিক বৈজ্ঞানিক সম্মেলনে উপস্থাপন করা হয়েছে কনফারেন্স পেপার হিসেবে প্রকাশিত হয়েছে বলেও জানান তিনি। 

দেশীয় শিং মাছের জিনোম সিকোয়েন্স উদ্ভাবনকে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক উল্লেখ করে বাকৃবির উপাচার্য অধ্যাপক ড. এমদাদুল হক চৌধুরী বলেন, হৃদরোগসহ অন্যান্য রোগে আক্রান্ত রোগীদেরস জন্য শিং মাছ অনেক উপকারী। বিশেষ করে রক্তে লোহিত কনিকার পরিমাণ বৃদ্ধির জন্য এটি বিশেষভাবে সমাদৃত। দেশীয় মাছের অন্যান্য প্রজাতির নতুলনায় ভিন্নধর্মী এ প্রজাতিতে স্ত্রী মাছের উৎপাদন বেশি। আর পুরুষ ও স্ত্রী মাছ নির্ধারণকারী সম্ভাব্য জিন শনাক্তকরণের এই গবেষণার ফলাফল স্ত্রী শিং মাছ শনাক্ত করে শিং মাছের উৎপাদন বাড়াতে ভূমিকা রাখবে। পাশাপাশি বিলুপ্তপ্রায় এ মাছটি সংরক্ষণেও বিশেষ ভূমিকা রাখবে বলে আশা করি।

Walton Refrigerator Freezer
Walton Refrigerator Freezer