ঢাকা: বর্তমানে ইস্যুপ্রিয় জাতির নতুন ইস্যু - আসন্ন বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দলের জার্সি। আমরা জাতি হিসেবে এতোটাই ইস্যু প্রিয় যে আমরা প্রতিটা মুহূর্ত শুধু নতুন ইস্যু খোঁজা নিয়েই ব্যস্ত থাকি। আবার কিছুদিন পর নতুন ইস্যু পেলে আগেরটা ভুলতে বসি। এটি আমাদের স্বভাবে পরিণত হয়েছে।
যাই হোক, এখন আমি যা বলবো এতে হয়তো কেউ কেউ বলবেন যুক্তিগত ,আবার কেউ বা বলবেন আমি পাকিপ্রেমী। সে যাই বলেন আমার বাংলাদেশ বাদে পছন্দের তালিকায় অন্য টিম হলো অস্ট্রেলিয়া। বাংলাদেশের পর এই একটা দলই প্রিয়। ক্রিকেট নিয়ে আমি বরাবরই প্রচুর আবেগী। হৃদয়ের একটা বিশাল অংশজুড়ে রয়েছে ক্রিকেট। টুকটাক লিখার চেষ্টাও করি প্রায় সময়। ক্রিকেট নিয়ে ভাবতে গেলে অন্য জগতে হারিয়ে যাই।
অনেকের মন্তব্য দেখলাম জার্সি নিয়ে। নানান জন ভিন্ন ভিন্ন মত দিয়েছেন,কেউ পক্ষে আবার কেউ বিপক্ষে। অনেকের মতে পাকি-আফ্রিকা-আয়ারল্যান্ডের অনুকরণে বা প্রীতিতে এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে। তারা এটাও ভাবছেন যে পাকিস্তানকে দুচোখে সহ্য হয়না তার সাথে মিলিয়ে আবার জার্সি? এটা কি আসলেই বাংলাদেশের পরিচয় বহন করে? অনেকেই আবার মনে করছেন এতে লাল-সবুজ পতাকার অবমাননা হয়েছে। আবার অনেকেই বলছেন আমরা লাল-সবুজে অনুপ্রাণিত। অন্যকিছু মেনে নিতে পারবোনা।
হাস্যকর মনে হলো এ জিনিসটাই, আপনারা যে অস্ট্রেলিয়া, ভারতকে পছন্দের তালিকায় রাখেন, ওদের পতাকা দেখুন আর জার্সি দেখুন। কোন অংশে মিল খুঁজে পাওয়া যায় কিনা? ওদের কিন্তু মোটেও মাথাব্যাথা নেই এসব নিয়ে। ওদের কাছে এটাই মুখ্য ব্যাপার যে আমরা দেশের জন্য খেলি, আমাদের কাছে সর্বোচ্চ দিতে পারাটাই মূল। আমরা ভালো করলেই পতাকার সম্মান অব্যাহত রবে।
আর এই যে বলে বেড়াচ্ছেন পতাকার অবমাননা, সেক্ষেত্রে বলি -জার্সির রঙ ই তো পরিবর্তন হলো শুধু। পতাকা তো সেই লাল-সবুজ ই আছে। আর মানুষগুলো ও একই আছে। যে দুটো জার্সি ছিলো তার মধ্যে লাল ও ছিলো। লাল রঙেরটা নির্ধারণ করলে হয়তো বলতেন জিম্বাবুয়েকে স্মরণ করলো। বলেও ফেলেছেন অনেকে। এটাই মাথায় আসেনা যে অন্য টিমের সাথে কেন আমরা আমাদেরকে তুলনা করবো? এ পতাকা অর্জিত হয়েছে কি এমনি এমনি,যে একটা রঙেই এর বৈশিষ্ট্য পূর্ণতা পায়? এতই ঠুনকো আমাদের দেশপ্রেম??
আমাদের দেশকে বিশ্বে রিপ্রেজেন্ট করে কি জার্সির রঙ নাকি টাইগার বাহিনী?? আমরা পরিচিতি পাচ্ছি ঐ মানুষগুলোর জন্য যারা দিন-রাত সাধনা করে নিজের সেরাটা দেওয়ার চেষ্টায় আছেন। মাশরাফীবাহিনী, যারা স্বপ্ন দেখেন লাল-সবুজের পতাকাকে বিশ্ব দরবারে উঁচিয়ে ধরার। লাল-সবুজের পতাকাকে শ্রেষ্ঠ প্রমাণিত করার জন্য লড়তে থাকেন খেলার মাঠে।
আর আমরা? আমরা কি করছি? কিছুক্ষণ কারো বাজে ফর্ম দেখে গালিগালাজ আবার এখন জার্সি নিয়ে মাতামাতি। আর বাকিরা কি করছে জানেন? আমাদের এই অবস্থা দেখে মজা নিচ্ছে যে আমরা এই সামান্য ব্যাপারে এতো বড় ইস্যু তৈরি করলাম। হ্যা বাইরের দেশে এটা নিছক ই সামান্য ব্যাপার।
আপনাদের তারিফ করতে হয়, আপনারা পারেন ও বটে। প্রশ্ন হলো, যে রঙ ই হোক আমাদের প্রতিনিধিতো আমাদের প্রিয় ম্যাশবাহিনী। তার মানে কি দাঁড়ায়? আপনাদের কাছে টাইগার বাহিনীর চাইতে জার্সির রঙটাই মুখ্য? এই দেশপ্রেম?? জার্সির রঙ বদলে গেলে কি কারো দেশপ্রেম কমে যাবে? মাঠের এক কোণায় বাতাসে দুলতে থাকা ঐ লাল-সবুজের পতাকা টাও কি বদলে যাবে? এমনতো হওয়ার নয়,তাহলে?? তাহলে কেন এতো দ্বিধা করছেন?
সব ইস্যু বাদ দিয়ে নিজের দেশের কথা ভাবুন, সেসব অন্যায়ের প্রতিবাদ করুন যেগুলো আমাদের জাতিকে অপমানিত করে। একটা রঙের জন্য যেমন অন্য দেশগুলোর কিছু যায় আসেনা, তেমনি ওদের মতো করে একটু আপনারাও ভাবুন নাহ। জার্সির জন্যই কি আপনারা খেলা দেখেন, নাকি ম্যাশবাহিনীর জন্য?? এ নূন্যতম চিন্তাধারা যার আছে সে কখনো এসব ইস্যু নিয়ে মাতামাতি করবেনা। এ মুহূর্তে এটাই মুখ্য হওয়া উচিত আমাদের টাইগার বাহিনী কতটা ফিট আর তারা যাতে সুস্থভাবে বিশ্বকাপ মিশন শেষ করতে পারে।
আসুন এসব ইস্যু নিয়ে মাতামাতি না করে বিশ্বকাপে বাংলাদেশের পারফর্মেন্সের প্রতি নজর দেই। নিজ নিজ অবস্থান থেকে প্রার্থনা করি যেন ম্যাশবাহিনীর হাতেই আমাদের বিশ্বকাপের ক্ষরা ঘুচে যায়। আর বলি সাবাশ বাংলাদেশ, ঘুরে দাঁড়াও এখুনি। জয় আসবেই। ক্রিকেটকে ভালোবাসুন, ইস্যুকে নয়। জার্সি নয়, জার্সি পরিহিত মানুষগুলো নিয়ে ভাবুন। সর্বোপরি বাংলাদেশ দলের জন্য রইলো অনেক অনেক শুভ কামনা। ম্যাশবাহিনীর হাত ধরেই রচিত হোক নতুন ইতিহাস।
লেখক: শিক্ষার্থী
বহুমাত্রিক.কম