ছবি: বহুমাত্রিক.কম
মৌলভীবাজার : গুরুতর আহতাবস্থায় ৭ দিন ধরে মাটিতে পড়ে কাতরাচ্ছে মৌলভীবাজারে কমলঞ্জ উপজেলার সিরাজুল ইসলামের একটি পোষা মাদি হাতি ‘রাজলক্ষী’। শারীরিক প্রচন্ড আঘাতে হাতিটি যন্ত্রণায় মাটিতে লুটিয়ে পড়ে কাঁদায় গর্ত হওয়ায় অন্য হাতি দিয়ে আহত রাজলক্ষীকে স্থানান্তর করা হয়েছে।
হাতিটির মালিক সিরাজুল ইসলামের বাড়ি কমলগঞ্জের ইসলামপুর ইউনিয়নে। গত ১৪ জুলাই শুক্রবার রাতে হাতিটির কর্মস্থল ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে ট্রাকযোগে আনার সময় শ্রীমঙ্গলের মৌলভীবাজার সড়কের ৫ নম্বর ব্রিজের পাশে ট্রাক থেকে নামানোর সময় হাতিটির কোমর ও পায়ে আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে ৭ দিন ধরে অসুস্থাবস্থায় রয়েছে।
বন্যপ্রাণি ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, হাতিটিকে ভাড়ায় খাটানো হতো। কয়েক মাস আগে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার এক লোক সার্কাসের জন্য ‘রাজলক্ষী’কে ভাড়া নেন। দুই মাস কাজ বন্ধ থাকায় খাওয়ানোর জন্য তাকে কমলগঞ্জ নিয়ে আসছিলো। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে হাতিটিকে কমলগঞ্জ না নামিয়ে শ্রীমঙ্গলে ট্রাক থেকে নামানোর সময় হাতিটির কোমর ও পায়ে মারাত্মক আঘাতপ্রাপ্ত হয়। এরপর থেকে হাতিটিকে চিকিৎসা দিয়ে আসছেন শ্রীমঙ্গল প্রাণিসম্পদ হাসপাতালের কর্মকর্তারা।
এ ব্যাপারে শ্রীমঙ্গল প্রাণিসম্পদ বিভাগের ভ্যাটেনারি সার্জন ডা. আরিফুর রহমান জানান, তিনি ৭ দিন ধরে হাতিটিকে ঢাকা চিড়িয়াখানা ও ডুলুহাজরা সাফারি পার্কের চিকিৎসকদের পরামর্শক্রমে চিকিৎসা দিয়ে আসছেন। বুধবার সন্ধার পর থেকে সে খাবার বন্ধ করে দিলে হাতিটিকে খাবারের যোগান হিসেবে স্যালাইন দেয়া হচ্ছে। তবে বৃহস্পতিবার সকালের দিকে একটু একটু খবার নিলেও পরিমানে খুব কম। এই প্রাণী চিকিৎসকেরর ধারণা হাতিটির মেরুদন্ডে আঘাত প্রাপ্ত হয়েছে। তার পেছনের ডান পা উঠাতে পারছে না।
তবে হাতিটি একই স্থানে কাঁদায় থাকার কারণে গর্তে পরিণত হয়। বুধবার বিকেলে অন্য একটি হাতি দিয়ে টেনে তার স্থান পরিবর্তন করা হয়েছে। স্থানীয় উৎসুক জনতা হাতি দেখার জন্য প্রচুর ভিড় করছেন।
বন্যপ্রাণি ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের সিলেট বিভাগীয় সহকারী বন কর্মকর্তা মোঃ তবিবুর রহমান বলেন, ভাড়ায় খাটানো হাতিটির অসুস্থ্যতার খবর শুনে সরেজমিনে গিয়ে হাতিটির অবস্থা পর্যবেক্ষণ করি। হাতিটির সার্বিক চিকিৎসা সেবা চলছে। স্যালাইন দেয়ার পর থেকে শুয়ে শুয়ে খাচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে দীর্ঘ সময় নিয়েও হাতটির উন্নতি ঘটবে।
হাতিটির মালিক সিরাজুল ইসলাম জানান, তার দাদার আমল থেকেই তারা হাতি পালন করে আসছেন। এক সময় তাদের ৮টি হাতি ছিল, এখন আছে মাত্র দু’টি। অপর একটি হাতি তাদের এক চাচার অংশে পড়েছে। আর এই ‘রাজলক্ষী’র মা পড়ে ছিলো তাদের অংশে। তিনি জানান, এই ‘রাজলক্ষী’ই তাদের পরিবারের একমাত্র উপার্জনের মাধ্যম। এই হাতিটির কিছু হলে তাদের পরিবার পথে বসবে।
বহুমাত্রিক.কম