Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

বৈশাখ ১২ ১৪৩১, শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪

‘মাদার অব হিউম্যানিটি’ থেকে ‘লেডি অব ঢাকা’

ড. মো. হুমায়ুন কবীর

প্রকাশিত: ১৮:৪৩, ৪ নভেম্বর ২০১৭

আপডেট: ০০:০০, ৩১ ডিসেম্বর ১৯৯৯

প্রিন্ট:

‘মাদার অব হিউম্যানিটি’ থেকে ‘লেডি অব ঢাকা’

শেখ হাসিনা। বঙ্গবন্ধু কন্যা। বাংলাদেশের উন্নয়নের রূপকার। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী। মিশন-২০২১, ২০৩০ এবং ভিশন-২০৪১ সহ ডিজিটাল, আধুনিক, উন্নত ও সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা। এসব কাজের স্বীকৃতস্বরূপ অতীতেও তিনি যেমন পেয়েছেন বিভিন্ন সম্মাননা, পুরস্কার ও উপাধি। ঠিক তেমনি এখনও পেয়ে চলেছেন অনেক প্রশংসাসূচক স্বীকৃতি ও উপাধি। এবারো (২০১৭) মাত্র এক মাসের ব্যবধানে মিলেছে তাঁর জন্য দুটি বিশেষ উপাধি। আর সেগুলো দেওয়া হয়েছে দেশের কোন প্রতিষ্ঠান বা সংস্থা কর্তৃক নয় বরং বিদেশি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এবং সংস্থা থেকে।

আর সাম্প্রতিককালে এমন স্বীকৃতি আসতে শুরু করার অন্যতম কারণ হলো রোহিঙ্গা শরণার্থী ইস্যুতে। যেদেশে মাত্র দুইমাসের ব্যবধানে প্রায় ছয়লক্ষ শরণার্থীকে আশ্রয় প্রদানে সমর্থ হয় সেটা শুধু ‘শান্তি কন্যা’, মানবতার অন্যতম রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার পক্ষেই সম্ভব। অথচ ধনী হওয়া সত্ত্বেও এইতো গত দু’বছর আগেও সিরিয়াতে গৃহযুদ্ধের কারণে মাত্র একলক্ষ শরণার্থী নিতে সারা ইউরোপজুড়ে অপারগতার অন্ত ছিলনা। সেরকম একটি মানবিক অসাধ্য সাধনজনিত কাজ সম্পন্ন করতে পারায় বিশ্বজুড়ে প্রশংসার ফুলজুড়ি পরতে থাকে শেখ হাসিনার জন্য। পহেলা নভেম্বর ২০১৭ সালে রাজধানী ঢাকায় প্রথমবারের মতো আয়োজিত গৌরবময় কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারি এসোসিয়েশন (সিপিএ) সম্মেলনেও ঠিক একই কথা উচ্চারিত হচ্ছে বিশ্বনেতৃবৃন্দ দ্বারা।

সেজন্য সম্প্রতি জাতিসংঘের ৭২তম অধিবেশনে যাওয়ার পর তাঁকে ‘মাদার অব হিউম্যানিটি’ উপাধি দিয়েছে। অপরদিকে অতিসম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ ও বাণিজ্য ভিত্তিক ‘ফোর্বস’ নামের একটি সাময়িকী বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘লেডি অব ঢাকা’ হিসেবে উল্লেখ করেছে। সাময়িকীটি প্রতিবছর বিশ্বের ১০০ জন ক্ষমতাধর নারী নেতৃত্বের তালিকা প্রকাশ করে থাকে। এবারো (২০১৭) তা প্রকাশ করেছে। সেখানে শেখ হাসিনা আগের বছরের (২০১৬) তুলনায় ছয়জনকে ডিঙ্গিয়ে ৩৬ থেকে ৩০-এ অবস্থান পেয়েছেন। তার আগের বছর (২০১৫) এ তালিকায় তিনি ছিলেন ৫৯ নম্বরে।

এ তালিকায় এবারে মিয়ানমারের নোবেল বিজয়ী নেত্রী অং সান সুচি শেখ হাসিনা থেকেও তিনটি অবস্থান পিছিয়ে ৩৩-এ স্থান পেয়েছেন। অথচ গত বছর (২০১৬) সুচির অবস্থান ছিল ২৬-এ। বরাবরের মতো সপ্তমবারে নিজের প্রথম অবস্থান ধরে রাখতে পেরেছেন জার্মান চ্যান্সেলর এঞ্জেলা মারকেল। তিনি তাঁর নিজের দেশেও জনপ্রিয়তার শীর্ষে অবস্থান করার কারণে সম্প্রতি টানা চতুর্থবারের মতো দেশটির চ্যান্সেলর নির্বাচিত হয়েছেন।

দ্বিতীয় অবস্থান থাকা যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক পররাষ্ট্র মন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনকে পিছনে ফেলে তা দখল করে নিয়েছেন ব্রিটেনের নব নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী টেরেজা মে। হিলারি এবারে ছিটকে গেছেন ৬৫ নম্বরে। মাইক্রোসফটের প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটসের স্ত্রী মেলিন্ডা গেটস এক ধাপ এগিয়ে তৃতীয় স্থানে চলে গিয়েছেন। সাবেক মার্কিন ফার্স্টলেডি মিশেল ওবামা তালিকায় আগে থাকলেও এবারে বাদ পড়েছেন। সেখানে ১৯তম স্থান করে নিয়েছেন বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কন্যা ইভাঙ্কা ট্রাম্প। গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছেন, সর্বোপরি ফোর্বসের এ তালিকায় ১০০ জনের মধ্যে অর্ধেক নারীই নাকি যুক্তরাষ্ট্রের, যুক্তরাজ্যের আছে আটজন, আর ইউরোপের তেরোজন এ তালিকায় রয়েছেন।

শেখ হাসিনা যে আজ শুধু দেশের মানুষের জন্য কাজ করছেন তাই নয় তিনি আন্তর্জাতিকভাবেও মানবিক ও শান্তির নেত্রী হিসেবে বিশ্বে পরিচিতি লাভ করছেন। সেকারণে ২০১৭ সালের জন্য নোবেল কমিটির কাছে শান্তিতে নোবেল পুরস্কারের জন্য তাঁর নামটি প্রস্তাব হয়েছিল। কিন্তু সেখানে কিছু দেশি-বিদেশি রাজনৈতিক শক্তির কূটকৌশল ও আঞ্চলিক ষড়যন্ত্রের কারণে তা এবার সম্ভব হয়নি বলে জানা গেছে। তবে এবার পাওয়া যায়নি বলে তা আগামীতে পাওয়ার সম্ভবনা ফুড়িয়ে যায়নি। কারণ তিনি যেভাবে কাজ করে চলেছেন তাতে এ অঞ্চলে বর্তমানে একমাত্র তিনিই নোবেল শান্তি পুরস্কার পাওয়ার যোগ্য বলে মনে করছেন বিশ্লেষকগণ।

যদি অং সান সুচি এবং শেখ হাসিনার সাথে তুলনা করা হয় তবে সেটা হবে আকাশের সাথে পাতালের তুলনা। কারণ রোহিঙ্গাদের বিরোধীতা করে তাদেরকে মানবতা বিরোধী অপরাধের শিকাওে পরিণত করে সুচি যেভাবে বিতর্কিত হয়েছেন। সেজন্য তার বিদেশী অনেক ডিগ্রি, স্বীকৃতি, সম্মান কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। সেখানে রোহিঙ্গাদের সাথে মানবিক আচরণ করার কারণে শেখ হাসিনার নামের সাথে বিভিন্ন অভিধা যুক্ত হচ্ছে। সাম্প্রতিক ‘মাদার অব হিউম্যানিটি’ এবং ‘লেডি অব ঢাকা’ তাদের অন্যতম। এভাবে চলতে থাকলে বিশ্বের সবচেয়ে মর্যাদাকর শান্তিতে নোবেল পুরস্কার বিজয় তাঁর জন্য তেমন কোন কঠিন কাজ হবেনা। আর তেমনটি হলে তা আমাদের দেশের জন্য হবে একটি বিরল সম্মানের। সেখানেই প্রমাণিত হবে এসব সম্মান, পুরস্কার, উপাধি ও অভিধার। আমরা তার জন্যই অপেক্ষারত থাকলাম।

লেখক: ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়

email: [email protected] 

বহুমাত্রিক.কম

Walton Refrigerator Freezer
Walton Refrigerator Freezer