রাস উৎসবে এভাবেই নেচে-গেয়ে উঠে আদিবাসী মণিপুরী শিশুরা। ছবি : বহুমাত্রিক.কম
মৌলভীবাজার : আজ ৯ আগস্ট। আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশের আদিবাসীরা দিবসটি বেসরকারিভাবে নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে পালন করছে। তবে দীর্ঘ দিনেও আদিবাসীদের স্বপ্ন পূরণ হয়নি। অধরা রয়ে গেছে তাদের অনেক সাধ। শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও ভূমির অধিকার বঞ্চিত আদিবাসীরা দুঃখ-কষ্টের মধ্যদিয়েই জীবন অতিবাহিত করছেন। বিশ্ব আদিবাসী দিবসে এসব জনগুরুত্বপূর্ণ সমস্যা সমাধানে সরকারের নিকট দাবি জানিয়েছেন নেতৃবৃন্দরা।
অনুসন্ধানে জানা যায়, অধিকার, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি সুরক্ষা ও ভূমি অধিকারের জন্য আদিবাসীরা নানা আয়োজনের মধ্যদিয়ে দিবসটি পালন করছেন। জাতিসংঘ ঘোষিত এ দিবসটি ১৯৯৪ সাল থেকে সারাবিশ্বে পালিত হয়ে আসছে। ১৯৯২ সালে জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের উন্নয়ন ও সংরক্ষণ উপকমিশনের কর্মকর্তারা তাদের প্রথম সভায় আদিবাসী দিবস পালনের জন্য ৯ আগস্টকে বেঁচে নেয়।
আদিবাসী জনগণের মানবাধিকার, পরিবেশ উন্নয়ন, শিক্ষা ও সংস্কৃতি সম্পর্কিত বিরাজমান বিভিন্ন সমস্যা নিরসনের লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সুদৃঢ় করা ও গণসচেতনতা সৃষ্টি করাই বিশ্ব আদিবাসী দশক, বর্ষ ও দিবস পালনের মূল উদ্দেশ্য। যুগ যুগ ধরে বসবাসরত এই আদিবাসীদের ভূমির অধিকার সহ নানা সমস্যায় জর্জরিত। সিলেটে আদিবাসী তালিকায় খাসিয়া, গাঢ়ো, ত্রিপুরা, মুন্ডা, সাওতাল, বিষ্ণুপ্রিয়া মনিপুরী, মৈতৈ মনিপুরীসহ ১৩ টি সম্প্রদায় রয়েছে।
তাদের বৈচিত্র্যপূর্ণ সংস্কৃতি, ইতিহাস, ধর্মীয় ঐতিহ্য, কৃষ্টি, প্রথা, উৎসব আমাদের মুগ্ধ করলেও নিজেদের সমস্যার বেড়াজাল থেকে আজো বের হতে পারেননি। অধিকাংশরা পাহাড়, টিলার পাদদেশে, বনজঙ্গলে কিংবা সমতল ভূমিতে মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশে জীবন যাপন করছেন। দেশে অর্থনৈতিকভাবে তাদের যথেষ্ট অবদান রয়েছে। তবে শিক্ষা, স্বাস্থ্য সহ জনগুরুত্বপূর্ণ সমস্যায় জর্জরিত রয়েছেন বলে আদিবাসীরা দাবি করছেন।
মৌলভীবাজারের লাউয়াছড়া খাসিয়া পুঞ্জির মন্ত্রী আদিবাসী ফিলা পত্মী বলেন, বৃহত্তর সিলেটের ৭০টি খাসিয়া পুঞ্জির মধ্যে হবিগঞ্জের আলীয়াছড়া ও জাফলং এর নকশিয়ার পুঞ্জিতে দু’টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ছাড়া আর সরকারি কোন বিদ্যালয় নেই। তবে খাসিয়াদের চাঁদায় পরিচালিত হচ্ছে কয়েকটি কমিউনিটি বিদ্যালয় পরিচালিত হচ্ছে।
তবে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী, জাতি, সত্তা, উপজাতির কৃষ্টি, সংস্কৃতি, ভাষা ও নানা বৈচিত্র্যের সমারোহ থাকলেও আদিবাসী নিয়েও রয়েছে নানা সমালোচনা। জাতিসংঘের বিভিন্ন পর্যায়ে দীর্ঘদিন ধরে আলোচনার পরেও আদিবাসীদের ব্যাপারে সাধারণভাবে গ্রহণযোগ্য কোন সংজ্ঞায় উপনীত হওয়া সম্ভব হয় নি। সাধারণত কোন একটি নির্দিষ্ট এলাকায় অণুপ্রবেশকারী বা দখলদার জনগোষ্ঠীর আগমনের পূর্বে যারা বসবাস করত এবং এখনও করে; যাদের নিজস্ব আলাদা সংস্কৃতি, রীতিনীতি ও মূল্যবোধ রয়েছে; যারা নিজেদের আলাদা সামষ্টিক সমাজ-সংস্কৃতির অংশ হিসেবে চিহ্নিত করে এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রে যারা সমাজে সংখ্যালঘু হিসেবে পরিগণিত, তাদেরই আদিবাসী হিসাবে মূল্যায়ন করা হচ্ছে।
বৃহত্তর সিলেট আদিবাসী ফোরামের সভাপতি পিডিশন প্রধান বলেন, আদিবাসীরা আজও ভূমির অধিকার পায়নি। যেটুকু ভূমিতে আদিবাসী লোক বসবাস করছে সেটুকুও ফরেস্ট, চা বাগান দখলে নিতে মরিয়া। বৃহত্তর সিলেট আদিবাসী ফোরামের ভাইস চেয়ারম্যান জিডিশন প্রধান সুচিয়ান বলেন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও ভূমি অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য দীর্ঘদিন ধরে সরকারসহ সংশ্লিষ্টদের কাছে দাবি জানিয়ে আসছি। আদিবাসী লোকদের ভূমির অধিকার না হওয়া পর্যন্ত এসব সমস্যা থাকবে।
বহুমাত্রিক.কম