Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

বৈশাখ ১২ ১৪৩১, শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪

বিদ্যুতের প্রি-পেইড মিটার এখন গ্রাহকের গলার কাঁটা

শেখ হেদায়েতুল্লাহ, নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ০৪:০২, ৮ নভেম্বর ২০১৭

আপডেট: ০০:০০, ৩১ ডিসেম্বর ১৯৯৯

প্রিন্ট:

বিদ্যুতের প্রি-পেইড মিটার এখন গ্রাহকের গলার কাঁটা

ছবি : বহুমাত্রিক.কম

খুলনা : ‘আমাদেরতো মিটার ছিল। আমরা একবার টাকা দিয়ে মিটার এনেছি। এখন সরকার প্রি-পেইড সিস্টেম চালু করতে গিয়ে আমাদের আগের মিটারটি খুলে নিয়েছে। সে সময়ে তারা বলেছিল মিটার বাবদ কোন টাকা দিতে দিতে হবে না। তাহলে আমরা আবার কেন মিটারের জন্য টাকা দেব। প্রি-পেইড মিটার লাগানোর সময় তখন মিটারের টাকার কথা বলেনি। কিন্তু এখন প্রতিমাসে মিটার ভাড়া বাবদ কার্ড রিচার্জ করা মাত্রই ৪০টাকা কেটে নিচ্ছে।’

-এমনটাই বললেন নগরীর মুসলমানপাড়ার বাসিন্দা আরিফা মামুন। তাদের বাড়িতে মোট ছয়টি প্রিপেইড মিটার রয়েছে।

একই এলাকার বাসিন্দা ডাঃ মোঃ শাহজাহান হাওলাদার (৬৭) ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ঘন্টার পর ঘন্টা ফারমার্স ব্যাংকের কেডিএ এভিনিউ (সাত রাস্তা মোড়) শাখায় লাইনে দাড়িয়ে তবেই ৭০০ টাকার একটি কার্ড (বিদ্যুত বিলের জন্য দেয়া আগাম টাকা জমা দেয়ার রশিদ) নিতে পেরেছি। কার্ড রিচার্জ করার পর বিভিন্ন খাতে টাকা কেটে নেয়ার পর বিদ্যুত ব্যবহার করতে পারব মাত্র ৫০৬ টাকা ৬৭ পয়সা। মিটার ভাড়া কেটেছে ৮০ টাকা, সার্ভিস চার্জ ২০ টাকা, ডিমান্ড চার্জ ৬০ টাকা ও ভ্যাট বাবদ কাটা হয়েছে ৩৩ টাকা ৩৩ পয়সা। তিনি বলেন, এর আগে ৩০০ টাকার একটি কার্ড কিনে পেয়েছিলাম ২০৫ টাকা।

ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন বর্তমানে খুলনা মহানগরীর বিদ্যুৎ গ্রাাহকদের মাঝে এখন প্রি-পেইড মিটার সংযোগ দিচ্ছে। শুরুতে গ্রাহক সুবিধার কথা বলা হলেও বর্তমানে প্রিপেইড মিটার গলায় ফাঁস হয়ে দেখা দিয়েছে। গ্রাহকদেরকে অন্ধকারে রেখে এ সিস্টেম চালু করে বিদ্যুৎ গ্রাহকদের সাথে প্রতারণা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। সব মিলিয়ে প্রি-পেইড মিটার নিয়ে গ্রাহকরা ক্ষোভে ফুসে উঠেছে। বিদ্যুতের ‘প্রি-পেইড মিটারের’ প্রতি অধিকাংশ গ্রাহকের অনাগ্রহ রয়েছে। প্রতি মাসে গ্রাহকদের প্রতিটি সিঙ্গেল ফেজ মিটারের জন্য প্রতি মাসে ৪০ টাকা এবং থ্রিফেজ মিটারের জন্য ২৫০ টাকা জমা দেয়ার সময়েই কেটে নেযা হচ্ছে।

একজন গ্রাহককে ১০ বছর ধরে প্রতি মাসে মিটারের জন্য এই টাকা পরিশোধ করতে হবে। গ্রাহকরা বলছেন, প্রিপেইড মিটারে ‘পোস্টপেইড’ যন্ত্রণা শুরু হয়েছে। একদিকে চায়না প্রি পেইড মিটার নিয়ে বিপাকে আছেন গ্রাহকরা। তার ওপর লোডের বিষয় নিয়েও আছে চরম বিপত্তি। এরই মাঝে প্রতি মাসে আবার বিলের সাথে যুক্ত হচ্ছে মিটারের ভাড়া।

গ্রাহকদের অভিযোগ, কোন ধরনের পরিকল্পনা ছাড়াই প্রি-পেইড মিটার লাগানো শুরু করেছে। বলা হচ্ছে, ১০ বছর ধরে মিটারের মূল্য পরিশোধ করতে হবে। কিন্তু কোন মিটার যদি কয়েক বছরের মধ্যে নষ্ট হয়ে যায় সেক্ষেত্রে একজন গ্রাহক আবার নতুন মিটার নিলে তার ক্ষেত্রে মূল্য পরিশোধের পদ্ধতি কেমন হবে, এসব বিষয়ে কোন ধরনের প্রচারণা নেই কর্তপক্ষের। বিদ্যুত গ্রাহকদের অন্ধকারে রেখে এ সিস্টেম চালু করে বিদ্যুৎ গ্রহকদের সাথে প্রতারণা করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ তাদের। সব মিলিয়ে প্রিপেইড মিটার নিয়ে গ্রাহকরা ক্ষোভে ফুঁসছে।

নগরীর মুসলমান পাড়া রোডের প্রিপেইড মিটারের গ্রাাহক মাসুমুর রহমান বলেন, ‘প্রি-পেইড মিটার নিয়ে নানান ঝামেলায় আছি। বাড়তি কোন লোড দেয়া যায় না। আমাদের পুরনো মিটারটি খুলে যখন নতুন প্রি-পেইড মিটার লাগানো হয়েছিল তখন বলেছিল মিটারের জন্য কোন মূল্য নেয়া হবে না। এখন দেখছি প্রতি মাসে রিচার্জকৃত টাকা থেকে মিটারের ভাড়া কেটে নেয়া হচ্ছে। তবে অধিকাংশ গ্রাহক এখনও বিষয়টা পরিপূর্ণভাবে জানে না বলে তিনি জানান।

ফ্রি-মিটার ক্রয় বাবত প্রতি মাসে মাসের রিচার্জকালে টাকা নেয়ার বিষয়টি অযৌক্তিক দাবি বলে উল্লেখ করেছেন কনজুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) খুলনা জেলা কমিটির সভাপতি এডভোকেট এনায়েত আলী। তিনি বলেন, প্রতি মাসে প্রি পেইড মিটারের ভাড়া নেয়ার কথা আগে বলেনি ওজোপাডিকো খুলনা। এটা সাধারণ গ্রাহকদের জন্য বাড়তি বোঝা হবে। প্রতি মাসের রিচার্জকৃত টাকা থেকে মিটারের ভাড়া কেটে নেয়ার পিডিবির সিদ্ধান্তটি কোন অবস্থাতেই যৌক্তিক হবে না।

ওজোপাডিকো’র নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকতা বলেন, একটি প্রি পেইড মিটার ক্রয়ে আমাদের খবচ পড়েছে ৪৮ ডলার। সেই সাথে ৩০ শতাংশ ভ্যাট যুক্ত হয়েছে। সে হিসেবে একজন সিঙ্গেল ফেজ মিটারের গ্রাহকের কাছ থেকে প্রতিমাসে মিটারের জন্য ৪০ টাকা এবং থ্রি ফেইজ মিটারের জন্য ২৫০ টাকা বিদ্যুৎ বিলের সাথে প্রদান করতে হবে। যা গ্রাহকদের মাসিক রিচার্জকৃত টাকা হতে কেটে নেয়া হবে।

ওজোপাডিকো সূত্র জানায় , এখন পর্যন্ত সংস্থাটি এ চারটি জোনে ৪৫ হাজার ৫০০ সিঙ্গেল ফেজ প্রি-পেইড মিটার লাগানো হয়েছে। যার প্রতিটি মিটারের মূল্য ৪ হাজার ৮শ’ টাকা। এছাড়া ১ হাজার ৫০০ মতো থ্রি ফেইজ মিটার লাগানো হয়েছে, যার প্রতিটির মূল্য ২০ হাজার টাকা । অবশিষ্ট মিটার পর্যায়ক্রমে লাগনো হবে বলে ওই সূত্র জানায়।

ওজোপাডিকো সূত্র আরও জানায়, বিদ্যুতের গ্রাহকদের প্রি-পেইড মিটার স্থাপনের সময় মিটার বিনামূল্যে দেয়া হয়েছে। তবে এখন মন্ত্রণালয় থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। বিদ্যুতের মাসিক বিলের সাথে মিটারের টাকা আদায়ের জন্য। তাই গ্রাহককে প্রি পেইড মিটারের মূল্য মাসিক বিলের সাথে প্রদান করতে হবে। এমনিতেই একটি প্রি-পেইড মিটারের মেয়াদ ১০ বছর। আর এ ১০ বছরের মধ্যে মিটারটি নষ্ট হলে আবার নতুন মিটার সরবরাহ করা হবে বলে জানা গেছে।

বহুমাত্রিক.কম

Walton Refrigerator Freezer
Walton Refrigerator Freezer