ছবি : পিআইডি
খুলনা : রাষ্ট্রপতি মো: আবদুল হামিদ বলেছেন, ’বাংলাদেশ নৌ- বাহিনীর অগ্রযাত্রায় আজ এক স্মরনীয় দিন। নৌ-বাহিনীতে আজ সংযোজিত হতে যাচ্ছে বহুল প্রতিক্ষীত অত্যাধূনিক জাহাত ’দুর্গম ও নিশান এবং সাবমেরিন ট্যাগ হালদা ও পশুর। দেশে নির্মিত সর্ববৃহৎ যুদ্ধ জাহাজ ও সাব মেরিন ট্যাগ নৌ বাহিনীতে সংযোজনের ফলে এ বাহিনী আরও এক ধাপ এগিয়ে গেল এবং নৌ বাহিনীর অগ্রযাত্রায় এক অধ্যায়ের সূচনা হলো।
তিনি বলেন, ১৯৭১ সালের এ মাসেই নৌ বাহিনীর জন্য সংগৃহিত পদ্মা ও পলাশ নামে দুটি যুদ্ধ জাহাজের মাধ্যমেই বাংলাদেশ নৌ বাহিনী ফ্লিটের যাত্রা শুরু হয়। ফলে আমাদেও মুক্তিযুদ্ধেও বিজয় ত্বরাণ্বিত হয়। মহান মুক্তিযুদ্ধে সে এক অবিস্মরণীয় ঘটনা।
রাষ্ট্রপতি বুধবার দুপুরে খুলনাস্থ নৌ ঘাটি বানৌজা তিতুমীর এর ন্যাভাল বার্থে আনুষ্ঠানিকভাবে যুদ্ধজাহাজ দুর্গম ও নিশান এবং সাব মেরিন ট্যাগ পশুর ও হালদা নৌবহরে কমিশনিং অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন।
রাষ্ট্রপতি মো: আবদুল হামিদ স্বাধীনতার মহান স্থপতি ও মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানতে স্মরণ করে আরও বলেন, ১৯৬৬ সালে নৌবাহিনীর গুরুত্ব অনুধাবন কওে ৬ দফা দাবিতে পূর্ব পাকিস্তানে নৌ বাহিনী সদর দপ্তর প্রতিষ্ঠার দাবি জানিয়েছিলেন। পরবর্তিতে ১৯৭৪ সালে তিনি নৌ বাহিনীকে ‘নেভাল এনসাইন’ প্রদানের মাধ্য এশটি আধুনিক ও শক্তিশালী নৌ বাহিনী গঠণের দৃঢ অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। সেই মহান নেতার দিক নির্দেশনা অনুসরণ কওে নৌ বাহিনীকে শক্তিশালী করার জন্য আজ আমরা নিজস্ব শিপইয়ার্ডে যুদ্ধজাহাজ তৈরি করতে সক্ষম হয়েছি। এ সময়ে তিনি নৌ সদস্য বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন, শহীদ ফরিদ, শহীদ মহিবুল্লাহ, শহীদ আকতার উদ্দিনসহ অন্যান্য শহীদদেও স্মরণ করেন।
প্রধান অতিথি মো: আবদুল হামিদ আরও বলেন, জাতির পিতা শক্তিশালী নৌ বাহিনী গঠনের জন্য তাঁর রূপকল্প বাস্তবায়নে ছিলেন বদ্ধপরিকর। সে কারণেই শত সীমাবদ্ধতা সত্তেও তিনি বাংলাদেশ নৌ বাহিনীর ত্বরিৎ উন্নয়নে বেশ কয়েকটি যুদ্ধ জাহাজ সংগ্রহের ব্যবস্থা করেন। একইভাবে বর্তমান সরকার নৌ বাহিনীকে আধূনিকায়ন ও যুগোপযোগী বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলার জন্য অবকাঠামোগত উন্নয়ন, যুদ্ধ জাহাজ সংগ্রহ এবং বিদ্যমান জাহাজসমূহের অপারেশনাল সক্ষমতা বৃদ্ধিও লক্ষে বাস্তবমূখী পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। এরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ নৌবাহিনী আজ মর্যাদাশীল নৌ বাহিনীতে পরিণত হয়েছে এবং জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনসহ আর্ন্তজাতিক পরিমন্ডলে বিভিন্ন অবদানের জন্য সুপরিচিতি লাভ করতে সক্ষম হয়েছে।
রাষ্ট্রপতি বলেন, নৌ বাহিনীকে এশটি কার্যকর ত্রিমাত্রিক বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলার জন্য জাতির পিতার পরিকল্পনার ধারাবাহিকতায় বর্তমান সরকার ইতোমধ্যে স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। যা ২০৩০ সালের মধ্যে বাস্তবায়িত হবে। ইমোমধ্যে নৌ বহরে দুটি আধূনিক সাবমেরিন ও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক যুদ্ধজাহাজ, এয়ারক্রাফট ও আধূনিক সামরিক সরঞ্জাম সংযোজন করা হয়েছে। ত্রিমাত্রিক নৌ বাহিনী গঠণের লক্ষ্যে প্রথম ধাপ ছিল নৌ বাহিনীর জন্য অবকাশ সীমানা উন্মোচন। অচিরেই অত্যাধূনিক সমর ক্ষমতাসম্পন্ন আরও ২টি হেলিকপ্টার এবং মেরিটাইম এয়ারক্রাফট নেভাল এভিয়েশনে যুক্ত হবে। এ সকল এয়ারক্রাফট সংযোজনের ফলে নৌ বাহিনী স্বল্প সময়ে বিশাল সমূদ্র এলাকায় টহল এবং পর্যবেক্ষণে সক্ষমতা অর্জন করবে, যা সমূদ্রসীমা এবং সমূদ্র সম্পদ রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
রাষ্ট্রপতি মো: আবদুল হামিদ বন্ধুদেশ চীন ও মালয়েশিয়ার কারিগরী সহায়তা দেয়ার তাদেরকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। আমাদের মত উন্নয়নশীল দেশের আর্থ- সামাজিক উন্নয়নে সামুদ্রিক সম্পদের বিশাল সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর বিকল্প নেই। এ সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে বাংলাদেশ নৌবাহিন কে অগ্রণী ভূমিকা রাখতে হবে। নতুনভাবে চারটি জাহাজের কমিশনিং ও সংযোজন আপনাদের দায়িত্বের পরিধি আরও সম্প্রসারিত করেছে। এতে সামুদ্রিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সহজ হবে বলে আমার দৃঢ বিশ্বাস।
এর আগে রাষ্ট্রপতি মো: আবদুল হামিদ হেলিকপ্টার যোগে খুলনাস্থ বা নৌ জা তীতুমীরে পৌছালে তাঁকে নৌ বাহিনী প্রধান নৌ বাহিনী প্রধান এডমিরাল নিজাম উদ্দিন ওমসপি,বিসিজিএম,এনডিসি,পিএসসি এবং কমোডর কমান্ডিং সামসুল আলম (জি) এনইউপি, পিএসসি, বিএন তাঁকে অভ্যর্থনা জানান। অনুষ্ঠানে অন্যান্যেও মধ্যে মন্ত্রী পরিষদের সদস্য, সংসদ সদস্য, সামরিক বেসামরিক বাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, সরকারী দপ্তরের কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।
বহুমাত্রিক.কম