Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

বৈশাখ ১২ ১৪৩১, শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪

নজির গড়ছে ঝিনাইদহ কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা

জাহিদুর রহমান তারিক, ঝিনাইদহ প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ০৩:০৪, ২৬ জানুয়ারি ২০১৭

আপডেট: ০০:০০, ৩১ ডিসেম্বর ১৯৯৯

প্রিন্ট:

নজির গড়ছে ঝিনাইদহ কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা

ছবি: বহুমাত্রিক.কম

ঝিনাইদহ : ঝিনাইদহ কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা পড়ালেখার পাশাপাশি ফসল উৎপাদন করে অনন্য নজির সৃষ্টি করেছেন। ২০১৩ সালে এ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর থেকেই শিক্ষার্থীদের মাঝে এই প্রবণতা লক্ষ করা যাচ্ছে।

এ পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটিতে ৪ শতাধিক শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছেন। শিক্ষার্থীরা লেখাপড়ার পাশাপাশি কীটনাশকমুক্ত ফসল উৎপাদনে যুক্ত হয়েছেন। তাদের এই সফলতা কৃষি বিভাগ গ্রহণ করেছে।

দেশের সব কৃষি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে এটি চালু করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। জানা গেছে, ২০০৬ সালে বিএনপি সরকারের আমলে ঝিনাইদহে সরকারিভাবে ২১ দশমিক ৩৮ একর জমির ওপর এ কৃষি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রটি গড়ে তোলা হয়। এ কেন্দ্রে তিনটি ভবনে ১০টি শ্রেণিকক্ষ, পাঁচটি ল্যাবরেটরি, একটি লাইব্রেরি, একটি সভাকক্ষ, শিক্ষার্থীদের হোস্টেল, অধ্যক্ষের বাসভবন, গুদামঘরসহ আরো কিছু ভবন রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির চারদিকে প্রাচীর দিয়ে ঘেরা। রয়েছে বড় একটি মাঠ।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, এ প্রতিষ্ঠানের উপ-সহকারী প্রশিক্ষক মো. নাজিম উদ্দিন শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার পাশাপাশি ক্যাম্পাসের পরিত্যক্ত জমিতে ফসল উৎপাদনের উদ্যোগ নেন। শিক্ষার্থীরা যাতে কৃষিকাজের বাস্তব জ্ঞানসহ উৎপাদিত ফসল ভোগ করতে পারেন।

এ ভাবনা থেকে শিখি-করি-খাই কর্মসূচি হাতে নেয়া হয়। এ কাজে সফলতাও ধরা দিয়েছে। তাদের এ কর্মসূচি এখন কৃষি বিভাগ মডেল হিসেবে গ্রহণ করেছে। দেশের সব কৃষি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে এ পদ্ধতি চালুর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. হামিদুর রহমান দেশের অন্য ১৫টি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে এ কর্মসূচি চালুর নির্দেশ দিয়েছেন।

ইনস্টিটিউটের একাধিক শিক্ষার্থী জানান, শিক্ষক নাজিম উদ্দিনের পরিকল্পনা মোতাবেক তারা ২০১৩ সালে ৩৬ জন শিক্ষার্থী নিয়ে প্রথম এ কার্যক্রম শুরু করেন। ক্যাম্পাসের মধ্যে পরিত্যক্ত ৬০ শতক জমি পরিষ্কার করে আবাদযোগ্য করেন। কঠোর পরিশ্রমের মধ্য দিয়ে জৈব পদ্ধতিতে করা হচ্ছে সবজি চাষ। তারা সারা বছর উৎপাদিত সবজি খাচ্ছেন। বর্তমানে আবাদী জমির পরিমাণ দাড়িয়েছে ৮ একরে। চাষ করা হচ্ছে ৬০ প্রকার ফসল। কয়েকটি দলে ভাগ হয়ে ছেলেমেয়েরা কাজ করছে ফসলের ক্ষেতে। পড়ালেখার পাশাপাশি শিখছে হাতে কলমে কৃষিকাজ। আর তাঁদের উৎপাদিত সবজি নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে বাজারেও বিক্রি করছেন তারা।

এখানে উৎপাদন করা হচ্ছে, ফুলকপি, বাঁধাকপি, টমেটো, মুলা, গাজর, লালশাক, পালংশাক, ব্রকলি, ড্রাগনফুট্রস, লেটুস, পুদিনা, ধনেপাতা, চায়না কেটেজ, শালগম, ওলকপি, মটরসুটি, গম, সয়াবিন, ভুট্টা, রসুনসহ ৬০ প্রকার সবজি। এসব সবজির জন্য জমি তৈরি, বীজ বপন, চারা রোপণ, সার প্রয়োগ, পানি ব্যবস্থাপনা, রোগ ও পোকা দমনসহ ফসল তোলার পর বাজারজাতকরণ পর্যন্ত শিক্ষার্থীরাই করেন। শিক্ষার্থীরা আরো জানান, ২০১৪ সালের অক্টোবরের আগ পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটি প্রকল্পভুক্ত ছিল।

অক্টোবরে রাজস্ব খাতভুক্ত হয়। তাদের এ কর্মসূচিতে আরো গতি আসে। কর্মসূচির নামকরণ করা হয় শিখি-করি-খাই। এখন ৪ শতাধিক শিক্ষার্থী শিক্ষার পাশাপাশি ফসল উৎপাদনে যুক্ত রয়েছেন। তাদের উৎপাদিত ফসল বিক্রি হচ্ছে। ওই টাকায় কৃষির নানা উপকরণ কেনা হচ্ছে।

এ কর্মসূচির উদ্যোক্তা প্রশিক্ষক নাজিম উদ্দিন জানান, সাধারণত দেশের কৃষি প্রতিষ্ঠানগুলোয় অধ্যায়নরত শিক্ষার্থীদের হাতে-কলমে কৃষিকাজ দেখানোর জন্য বাইরে নিয়ে যাওয়া হয়। পোকা দমন ও চাষপদ্ধতি দেখানো হয়। শিক্ষার্থীরা যাতে পড়ালেখার পাশাপাশি সারা বছরই উৎপাদনে অংশ নিতে পারেন, এ ভাবনা থেকে কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। ইনস্টিটিউটের পুকুরে মাছ চাষ করা হচ্ছে। শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাস পরিছন্নতা, উন্নয়ন ও বৃক্ষরোপণ করেছেন।

প্রতিষ্ঠানের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আব্দুল কাদের গত বছরে যোগদান করার পর থেকেই এ কাজের পরিধী আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। মুখ্য প্রশিক্ষক মাহফুজ হোসেন মৃধা জানান, এ কার্যক্রমের মাধ্যমে যাতে শিক্ষার্থীরা কৃষিক্ষেত্রে দক্ষ জনশক্তি হিসেবে গড়ে উঠতে পারে, সে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

শিক্ষার্থীরা ফসল উৎপাদনসহ বাজারজাতকরণ পর্যন্ত শিক্ষালাভ করতে পারছেন। ভবিষ্যতে সবজি বিক্রির অর্থ দিয়ে শিক্ষার্থীদের শিক্ষাসফর ও টিউশন ফি পরিশোধের পরিকল্পনা রয়েছে। তিনি আরো জানান, শিখি-করি-খাই এ কর্মসূচি এখন কৃষি বিভাগের কাছে একটি মডেল হিসেবে বিবেচিত হয়েছে।

বহুমাত্রিক.কম

Walton Refrigerator Freezer
Walton Refrigerator Freezer