-আসিফ ইলাহী
আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ আমাদের বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার শিক্ষা দেয়। অত্যাচারী পাকি শাসক গোষ্ঠীর হাত থেকে মুক্তির জন্যই বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে মহান মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পরেন এদেশের সকল শ্রেণির মানুষ।
একদল মানুষ যেমন রাজাকার হিসেবে দেশ বিরোধী ছিল ঠিক, তেমনি অনেক মানুষ সরাসরি রণাঙ্গনে না গিয়েও যোদ্ধাদের সাহায্য করেছেন। সব মানুষ যুদ্ধে গেলে যোদ্ধাদের সাহায্য করবে কে? দীর্ঘ ন’মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর এদেশে স্বাধীন হয়েছে। তিরিশ লাখ শহীদ আর দু’লাখ মা বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে আমরা পেয়েছি স্বাধীনতা।
অনগ্রসর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য কোটা বিদ্যমান আছে। বৃদ্ধি পেয়ে তা এখন ৩০%। বিদ্যমান অন্য সব কোটা মিলে এখন কোটাতে নিয়োগ হয় ৫৬%, বাকি ৪৪% মেধা ভিত্তিক। সাংবিধানিকভাবে দেশের অনগ্রসর গোষ্ঠির জন্য কোটার বিধান আছে। পক্ষান্তরে সরকারি নিয়োগে সকললের সসমানাধিকার এর বিষয়টিও আছে সংবিধানে। আজ যখন দেশে মুক্তিযোদ্ধা কোটাতে নিয়োগযোগ্য ৫-১০ % খুঁজে পাওয়া কঠিন তখন ৩০% রাখা কতটা যৌক্তিক???
আমরা উন্নয়নশীল রাষ্ট্র পথে যাত্রা করছি। বিদ্যমান ডিজিটাল বাংলাদেশ আমাদের অহংকার। এমন বাস্তবতায় অনগ্রসর জেলার যুক্তিতে জেলা কোটা সংস্কার না করে রেখে দেয়া কতটা যৌক্তিক। একই ভাবে অন্যান্য সব কোটাই সংস্কারের দাবি রাখে।
চাকুরি প্রত্যাশী তরূণ প্রজন্ম কোটার বাতিল চায়নি বরং সংস্কার চেয়েছে। ড. আনিসুজ্জামান, ঢাবির বর্তমান ও সাবেক উপাচার্যসহ বিজ্ঞজনেরা কোটা সংস্কারের পক্ষে মত দিয়েছেন।
বিগত কয়েকটা বিসিএস এ কোটায় যোগ্য প্রার্থী না পেয়ে পদ গুলো ফাঁকা গেছে! যা রাষ্ট্রযন্ত্রের জন্য ক্ষতিকর। এই কোটা সিস্টেম অনেক সমম্ভাবনাময় তরুণকে সরকারি চাকুরি বিমুখ করছে। ৫০০ পদের একটি নিয়োগে মেধাতে মধ্যম অবস্থানে থেকেও একজন নিয়োগ পান না মেধাতে। অথচ একজন কোটাধারী ১০০০তম সিরিয়ালে থেকেও নিয়োগ পেতে পারেন!
দেশের তরুণ প্রজন্ম আজ রাস্তায় নেমেছে। আদালত এ কোটার সংস্কার চেয়ে রিট হয়েছে। রিট খারিজ করে ‘‘এটি সরকারের পলিসির ব্যাপার’’ বলে আদালত মত দিয়েছে।
সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দিয়েছিলেন, কোটার ফাঁকা পদ গুলো মেধাতে পূরণ করা হবে। যা আশার বাণী ছিল। কিন্তু জন প্রশাসন মন্ত্রণালয় পরবর্তী প্রজ্ঞাপনে জানিয়েছে কোটায় পদ ফাঁকা থাকলে জেলাভিত্তিক অন্য জেলা থেকে নেয়া হবে! প্রজ্ঞাপন এ দেখানো হয় দুটি ধাপে কোটা পূরণ না হলে তারপর মেধা থেকে নেয়া হবে! এমন অবস্থায় সকলে প্রধানমন্ত্রী ও সরকারের সিদ্ধান্তের দিকে চেয়ে আছে।
লেখক : ৩৭ বিসিএস ফল প্রত্যাশী ও সাবেক শিক্ষার্থী, ফাইন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগ; রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।
বহুমাত্রিক.কম