ছবি : বহুমাত্রিক.কম
সুনামগঞ্জ : ‘হাওরে প্রতিটি বাঁধের সমান সমান পানি এ্যাহন। ঘন্টায় ঘন্টায় পানি বাড়ার কারণে বাঁধের উপর দিয়ে হাওরে পানি ডুকতাছে। আর আমরা বস্তায় বালু ভইরা সেইখানে প্রতিরোধ ও নতুন নতুন বুরুঙ্গা বন্ধ কইরা বাঁধ রক্ষায় সর্বাত্মক চেষ্টায় করতাছি। জান দিমু তবুও শনির হাওরের একটা বাঁধ ভাঙ্গতে দিমু না’
- কথাগুলো বলছিলেন লালুরগুয়ালা বাঁধে কাজ করা একমাত্র নারী ও তাহিরপুর উপজেলার শনির হাওরের বেহেলি ইউনিয়নের (৭, ৮, ৯ নম্বর ওয়ার্ড) সদস্য মনেছা বেগম।
ক্ষোভের সঙ্গে তিনি বলেন, ‘প্রতিটি বাঁধে পুকুর চুরি না করে একবারেই ডাকাতি করছে যার জন্য হাজার হাজার কৃষক ২৪ দিন ধরে স্বেচ্ছাশ্রমে একমাত্র বোরো ফসল রক্ষার বাঁধে কাজ করতাছি। কিন্তু এ পর্যন্ত পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাউকে দেখা পাইনি। এই ফসল ফলাতে আমরা এনজিও, ব্যাংক ও মহাজনের কাছ থেকে ছড়া সুদে নেওয়া ঋণ নেওয়ায় পরিশোধ নিয়ে হতাশায় ভুগতাছি হাওর পাড়ের কৃষকরা।
মনেছা বেগমের মতোই ক্ষোভ মধ্য তাহিরপুর গ্রামের বাদল মিয়া, মিয়া হোসেন, তাহিরপুর সদর ইউপি চেয়ারম্যান বোরহান উদ্দিন, উপজেলা আ,লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম সহ হাজারো কৃষকের।
তারা জানান, সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার সর্বশেষ শনির হাওর রক্ষায় ২৪ দিন ধরেই প্রতিদিন সকাল হলেই হাজার হাজার শ্রমিক বাঁেধ কাজ করতাছি আর রাতে বাড়ি যাই। বাঁধ রাতে পাহাড়ায় থাকছে আরেক দল। তার পরও সবার একটাই চাওয়া শনির হাওর রক্ষা। উপজেলার সব হাওর ডুবে গেছে তাই শেষ সম্পদ জীবন বাঁচার একমাত্র এ হাওরটি রক্ষায় নিজের জীবন বাজি রেখেই যুদ্ধ করতাছি দিন রাত বাধে পানির সঙ্গে।
জামালগঞ্জ, বিশ্বম্ভরপুর ও তাহিরপুর উপজেলার হাজার হাজার শ্রমিকরা পালাক্রমে হাওরের বাঁধে কাজ করছে ও রাতে বাঁেধ পাহাড়ায় নিয়োজিত রয়েছে তারা। এ হাওরে তাহিরপুর উপজেলা বাসীর জমির পরিমাণ বেশী থাকায় তারা রয়েছে সবার আগে।
উপজেলার ছোট বড় ২৩টি হাওরে উৎপাদিত ২শ’ কোটি টাকার অধিক ফসলের উপর নির্ভর করেই জীবন-জীবিকা চলে হাজার হাজার কৃষক পরিবারের। কিন্তু এপর্যন্ত ২২ হাওরেই পানিতে তলিয়ে গেছে। শনির হাওরটিই শেষ ভরসা।
শনি হাওরের বগিয়ানী, লালুরগোয়ালা, ঝালখালি, আহমখখালি, নান্টুখালি, গুরমা বাঁধ গুলোতে নতুন নতুন বুরুংংগা (পানি প্রবেশের ছোট ছোট শুরঙ্গ) তৈরী হচ্ছে আর এ দিয়ে হাওরে প্রবেশ করছে পানি ফলে আতঙ্কে রয়েছে হাজার হাজার কৃষক।
তাহিরপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান কামরুল জানান, এ উপজেলার প্রতিটি বাঁধে সবাইকে নিয়ে কাজ করেছি কিন্তু দুনীর্তির কারণে ২২টি হাওরেই পানিতে তলিয়ে গেছে। পানি ঘন্টায় ঘন্টায় বাড়ছে। এখনও শনির হাওরটি রক্ষায় শুরু থেকে সবার সহযোগীতায় নিয়ে কাজ করছি। এই হাওর রক্ষায় যতক্ষন বাঁচি শেষ না দেখে পিছু হাটব না। হাওরের বাঁধ নির্মাণের কাজে আর পাউবো কে না দেওয়ায় দাবি ও সুনামগঞ্জ জেলাকে দূর্গত এলাকা ঘোষণার দাবি জানাই।
সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক শেখ রফিকুল ইসলাম গত শুক্রবার শনির হাওরের লালুরগোয়ালা বাঁধ সহ বিভিন্ন বাঁধ পরিদর্শন করেন। এসময় তিনি ২০হাজার বস্তা বাঁধ নির্মাণের দায়িত্বে থাকা লোকজনের হাতে তুলে দেন।
তিনি এ উপজেলা সর্ব শেষ শনির হাওর রক্ষায় সেচ্ছা শ্রমে কাজ করায় শ্রমিক ও তাহিরপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান কামরুল সহ বাঁধে কাজ করা সকল শ্রমিকদের প্রশংসা করেন।
তিনি বলেন, এই শনির হাওরের প্রতিটি বাঁধ হুমকির মধ্যে রয়েছে স্বেচ্ছাশ্রমে সবার একান্ত প্রচেষ্টায় এখনো এই হাওরটি ঠিকে আছে। এই হাওরটি রক্ষায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক সহযোগীতা করা হবে।
বহুমাত্রিক.কম