Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

বৈশাখ ২৪ ১৪৩১, বুধবার ০৮ মে ২০২৪

গাড়ি ইতিহাস, বিলুপ্তির পথে এ বার ঘোড়া-আইনও

বহুমাত্রিক ডেস্ক

প্রকাশিত: ০০:৩৫, ১৫ ডিসেম্বর ২০১৬

আপডেট: ০০:০০, ৩১ ডিসেম্বর ১৯৯৯

প্রিন্ট:

গাড়ি ইতিহাস, বিলুপ্তির পথে এ বার ঘোড়া-আইনও

ছবি-সংগৃহীত

ঢাকা : ঊনবিংশ শতাব্দীর একদম শেষ দিকের কিংবা বিংশ শতাব্দীর প্রথম ভাগের ঘটনা। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে তাঁর ব্রহ্‌ম গাড়ি চড়ে আসছিলেন ধাত্রীবিদ্যার অধ্যাপক কর্নেল পেক। মোড় ঘুরতে গিয়ে সদ্য চালু হওয়া বৈদ্যুতিক ট্রামের সঙ্গে গাড়ির সংঘর্ষ।

কর্নেল এবং তাঁর কোচোয়ান বেঁচে গেলেও গাড়িটি চুরমার হয়ে গেল। সে সময়ে সেখানে উপস্থিত ছিলেন এক তরুণ ছাত্র। অধ্যাপক গাড়ি থেকে নেমে সেই ছাত্রকে সাক্ষী মেনে বললেন, ট্রামটি কি ঘণ্টায় ৩০ কিলোমিটারের বেশি গতিতে যাচ্ছিল? ছাত্রটি উত্তরে বললেন, দোষ ট্রামের নয়, আপনার কোচোয়ানের। রাগে কাঁপতে কাঁপতে চলে গেলেন কর্নেল।

আদালতে মামলা হল। সাত দিন পরে কর্নেলের ঘরে ডাক পড়ল সেই ছাত্রের। কর্নেল ছাত্রকে বললেন, মামলায় তাঁকে সাক্ষ্য দিতে হবে। কিন্তু ছাত্র তখনও অনড়, ‘দিতে পারি, কিন্তু তাতে আপনার লাভ হবে না।’ রাগে গুম হয়ে বসে রইলেন অধ্যাপক। প্রতিশোধ নিতে এমবি-র মৌখিক পরীক্ষায় ঘর থেকে বের করে দিলেন ওই ছাত্রকে।

ছাত্রের নাম বিধানচন্দ্র রায়। কর্নেলের প্রতিশোধও যে তাঁর পথের কাঁটা হতে পারেনি— সে তো এখন ইতিহাস। শতাব্দীপ্রাচীন যে আইনে অধ্যাপকের ব্রহ্‌ম গাড়ি মামলায় জড়িয়েছিল, তা-ও এ বার ইতিহাস হওয়ার পথে। ১৮৬১ সালে ঘোড়ায় টানা গাড়ির জন্য তদানীন্তন ব্রিটিশ প্রশাসনের তৈরি ‘স্টেট ক্যারেজ অ্যাক্ট’ বাতিল করতে চলেছে রাজ্য সরকার। পরিবহণ দফতর সূত্রের খবর, চলতি বিধানসভা অধিবেশনে না হলেও আগামী বছরে ওই আইন বাতিল (রিপিল) হবে।

কী ছিল আইনে?

পরিবহণ দফতর সূত্রের খবর, ট্রাম, ফিটন কিংবা ব্রহ্‌ম গাড়ির মতো ঘোড়ায় টানা গাড়ির চলাফেরা নিয়ন্ত্রণ করতেই তৈরি হয়েছিল ‘স্টেট ক্যারেজ অ্যাক্ট’। ওই আইনের আওতায় ঘোড়ায় টানা যে কোনও গাড়িকে লাইসেন্স দিত কলকাতা পুলিশ। লাইসেন্স দেওয়ার জন্যই সে সময়ে বেলতলায় তৈরি হয় পাবলিক ভেহিকেলস্‌ ডিপার্টমেন্ট (পিভিডি)। পিভিডি-র ঠিক উল্টো দিকে বিশাল এলাকায় ছিল ঘোড়ায় টানা গাড়ির পরীক্ষা কেন্দ্র। পরীক্ষায় পাস করলে এক বছরের জন্য লাইসেন্স মিলত ৫ টাকার বিনিময়ে।

আইনে নির্ধারিত ছিল, একটি গাড়িতে ন্যূনতম কতগুলি ঘোড়া রাখতে হবে এবং সর্বাধিক ক’জন যাত্রী কিংবা মাল বহন করা যাবে। ওই নিয়মের অন্যথা হলে প্রথম বার জরিমানা হতো ১০০ টাকা। তার পর থেকে প্রতি বারের জন্য জরিমানার পরিমাণ একলাফে বেড়ে হতো ৫০০ টাকা। এমনকী, ঘোড়ার উপরে অত্যাচার করলে, জোর করে যেতে বাধ্য করলেও মালিককে জরিমানা করার বন্দোবস্ত ছিল ওই আইনে।

কলকাতার ইতিহাস বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দেবাশিস বসুর কথায়, ‘‘সন্ধের পরে ঘোড়া ক্লান্ত হয়ে পড়লে আস্তাবলের দিকে যেতে চাইত। সেই সময়ে জোর করে ঘোড়াকে গন্তব্যে নিয়ে যেতে চাইলে বোঁ বোঁ করে ঘুরে গাড়িই ভেঙে দিত ঘোড়া। সে জন্যই আইনে এমন বন্দোবস্ত।’’

ওই আইন বাতিল করা হবে কেন?

পরিবহণ দফতর সূত্রের খবর, ২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরেই কেন্দ্রের তরফে প্রতি রাজ্যকে বস্তাপচা, পুরনো, অপ্রাসঙ্গিক হয়ে যাওয়া আইন বাতিল করার পরামর্শ দেওয়া হয়। ইতিমধ্যেই তেমন বেশ কিছু আইন বাতিল করেছে কেন্দ্র। দিল্লির ওই পরামর্শে সাড়া দিয়ে এ রাজ্যেও বেশ কিছু আইন বাতিল করার তালিকা তৈরি হয়েছে। সেই তালিকাতেই ঠাঁই পেয়েছে ‘স্টেট ক্যারেজ অ্যাক্ট’।

ধীরে ধীরে কালের নিয়মে ঘোড়ার গাড়ির জায়গা নিয়েছে মোটরচালিত গাড়ি, ইলেকট্রিক-ট্রাম। অপ্রয়োজনীয় হয়ে পড়েছে ‘স্টেট ক্যারেজ অ্যাক্ট’। ১৯১৯ সালে শুধুমাত্র ঘোড়ার গাড়ির জন্য তৈরি পৃথক ‘হ্যাকনে ক্যারেজ অ্যাক্ট’ তৈরি হওয়ার পর থেকে আরও প্রাসঙ্গিকতা হারায় ওই আইন।

পরিবহণ দফতরের সচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বর্তমানে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের আশপাশে যে সব ঘোড়ার গাড়ি চলে, ১৯১৯ সালের আইনের আওতায় তার লাইসেন্স দেয় কলকাতা পুলিশ।’’

আনন্দবাজার পত্রিকা

 

Walton Refrigerator Freezer
Walton Refrigerator Freezer