ছবি: বহুমাত্রিক.কম
ঢাকা : দেশের কৃষি গবেষণার অভিভাবক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল (বিএআরসি) তিনটি লক্ষ্য সামনে রেখে কার্যক্রম পরিচালনা করছে বলে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী চেয়ারম্যান কৃষিবিদ ড. মোহাম্মদ জালাল উদ্দীন। তিনটি অগ্রাধিকার হচ্ছে-অধিক ফলন, উচ্চ পুষ্টিমান ও নিরাপদ খাদ্য।
বিএআরসির নির্বাহী চেয়ারম্যান জানান, যত গবেষণা প্রকল্পই নেওয়া হচ্ছে-সবগুলোতে এই তিনটি লক্ষ্যকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে।
সম্প্রতি বহুমাত্রিক.কম-কে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে এসব কথা জানিয়েছেন তিনি।
চলতি বছরের ১০ জানুয়ারি বিএআরসি’র চেয়ারম্যান হিসাবে যোগ দেওয়া কৃষিবিদ ড. মোহাম্মদ জালাল উদ্দীন তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে কৃষি গবেষণায় নিয়োজিত থেকেছেন।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ থেকে কৌলিতত্ব ও উদ্ভিদ প্রজনন বিষয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করে মোহাম্মদ জালাল উদ্দীন ১৯৮৩ সালে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএআরআই), গাজীপুর এ বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা হিসেবে চাকুরি জীবন শুরু করেন।
দেশের সর্ববৃহৎ এই কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটে (বিএআরআই) বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি । পরিচালক হিসেবে ২০১২ সালে পদোন্নতি প্রাপ্তির পর তিনি বিভিন্ন মেয়াদে পরিচালক (গম গবেষণা কেন্দ্র), পরিচালক (কন্দাল ফসল গবেষণা কেন্দ্র) এবং পরিচালকসহ (গবেষণা) বিভিন্ন গৃরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেন।
তিনি কর্মজীবনে ভূট্টা, বার্লি, চীনা, কাউন, বিভিন্ন তেলবীজ ফসল, ডাল ফসল, গম এবং বিভিন্ন কন্দাল ফসলের উপর গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা ও বাস্তবায়ন করে এ সকল ফসলের ৪০ টিরও বেশী উন্নত জাত ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক প্রযুক্তি উদ্ভাবনে সক্রিয় ভুমিকা পালন করেন।
সাক্ষাৎকারে ড. মোহাম্মদ জালাল উদ্দীন দ্রুত বদলে যাওয়া বাংলাদেশের কৃষি উৎপাদন ও পরিবেশ-প্রতিবেশ ব্যবস্থার আলোকে তাঁর সময়ে নেওয়া পদক্ষেপসমূহ তুলে ধরেন। বিশেষ করে দূর্যোগপূর্ণ হাওর ও পাহাড় ধসের ভয়ানক উদ্বেগ এবং জলবায়ু পরিবর্তনের মত প্রেক্ষিতকে সামনে রেখে খাদ্য উৎপাদন ব্যবস্থাকে নিরাপদ জায়গায় উন্নীত করতে বিএআরসি বাস্তবসম্মত বেশ কিছু প্রকল্প গ্রহণেও মনোযোগী হয়েছে বলে জানান বিএআরসি চেয়ারম্যান। কথা বলেছেন বহুমাত্রিক.কম এর প্রধান সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম।
(প্রথম পর্ব)
বহুমাত্রিক.কম : আবহাওয়া-জলবায়ু ও পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে দেশের কৃষি গবেষণা নিয়ে অভিভাবক প্রতিষ্ঠান ‘বিএআরসি’ কী ভাবছে? সুনির্দিষ্ট কোনোও লক্ষ্য কী আছে?
ড. মোহাম্মদ জালাল উদ্দীন : ‘বিএআরসি’ তিনটি বিষয় মাথায় রেখে এগিয়ে যাচ্ছে। এগুলো হচ্ছে- অধিক ফলন, উচ্চ পুষ্টিমান ও নিরাপদ খাদ্য।
বহুমাত্রিক.কম : ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট অকাল বন্যায় এবার বৃহত্তর হাওরাঞ্চলে কৃষি উৎপাদন ব্যবস্থা পুরোপুরি ভেঙ্গে পড়েছে। এই প্রতিকূলতা জয় করতে করণীয় কী?
ড. মোহাম্মদ জালাল উদ্দীন : প্রাকৃতিক দূর্যোগে হাওরে কৃষি উৎপাদন ব্যবস্থাসহ সার্বিক জনজীবনে যে বিরূপ প্রভাব পড়ে সেখান থেকে হাওরবাসীকে রক্ষায় নতুন করে ভাবতে হবে। অকাল বন্যায় ফসলহানি কমাতে সেখানে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ কেন্দ্রিক উৎপাদন বৃদ্ধি করতে হবে, যাতে কৃষক ঝুঁকিমুক্ত থাকে। তাছাড়া নয়নাভিরাম হাওরের প্রাকৃতিক বৈচিত্র্যকে কাজে লাগিয়ে পরিকল্পিত পর্যটন কেন্দ্র হতে পারে। যা সেখানকার জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে-যোগাযোগ ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন হবে। এক্ষেত্রে হাওরের বিপুল সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে একটি সমন্বিত প্রকল্প নেওয়া গেলে সেখানকার মানুষের জীবনমান আমূল বদলে যাবে বলে আমি মনেকরি।
বহুমাত্রিক.কম : এক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট কোনো সুপারিশ রয়েছে কী?
ড. মোহাম্মদ জালাল উদ্দীন : হাওরে কোনো মেগা প্রজেক্ট হাতে নেওয়া হলে সর্বাগ্রে খাদ্যশষ্য অর্থাৎ ধানের উৎপাদনকে মুখ্য না করে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদের উৎপাদন সম্ভাবনায় জোর দিতে হবে-যা আগেও বলেছি। নির্দিষ্ট করে বলতে পারি হাওরে মাছ চাষের সঙ্গে হাঁস চাষ খুবই সম্ভাবনাময়। এছাড়া মুক্তচাষের জন্য হাওর উৎকৃষ্ট একটি স্থান হতে পারে-যা সেখানকার মানুষের আর্থিক স্বচ্ছলতা আনায়নে ভূমিকা রাখবে।
বহুমাত্রিক.কম