Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

বৈশাখ ১২ ১৪৩১, শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪

২০ বছরে প্রথম কম্পিউটারভিত্তিক স্কুল ‘আনন্দ মাল্টিমিডিয়া স্কুল’

মাসুম বিল্লাহ মাজেদ

প্রকাশিত: ১৬:৪৩, ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

আপডেট: ২১:২৫, ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

প্রিন্ট:

২০ বছরে প্রথম কম্পিউটারভিত্তিক স্কুল ‘আনন্দ মাল্টিমিডিয়া স্কুল’

ছবি : বহুমাত্রিক.কম

গাজীপুরে ১৯৯৯ সালের ২৪ ডিসেম্বর গাজীপুরে কম্পিউটারভিত্তিক বিদ্যালয় আনন্দ মাল্টিমিডিয়া স্কুল চালু হয়। সে হিসাবে নতুনধারার এই স্কুলটি ২০ বছরে পা দিলো।
আনন্দ মাল্টিমিডিয়া স্কুলের ধারণাটি তথ্যপ্রযুক্তিবিদ মোস্তাফা জব্বারের।

স্কুলটির উদ্বোধনকালে বর্তমান মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন। প্রথমে গাজীপুরে ১৩ জন শিক্ষার্থী নিয়ে এ স্কুলের যাত্রা শুরু হয়। বর্তমান সময় পর্যন্ত দেশজুড়ে ১০টি শাখা পরিচালিত হচ্ছে।

শুরুর কথা

পরিবেশক হিসেবে অ্যাপল কম্পিউটারের ব্যবসা করতে গিয়ে একটা বিষয় চোখে পড়ে মোস্তাফা জব্বার । ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, ‘অ্যাপলের একটা লক্ষ্য ছিল সারা বিশ্বের শিক্ষা বাজারে প্রবেশ করা। কিন্তু বাংলাদেশের শিক্ষাক্ষেত্র তো তখন তত বড় হয়নি। আমাকে ওই সময় অ্যাপল কিছু সফটওয়্যার পাঠায়। তখন আমি সেগুলো দেখার সুযোগ পেয়েছিলাম।’

১৯৯৭ সালে অ্যাপল ওয়ার্ল্ড অনুষ্ঠিত হয় যুক্তরাষ্ট্রের সান ফ্রান্সিসকোতে। ‘ওই আয়োজনে অংশ নিতে গিয়ে আমি বিস্মিত হই। আয়োজনে ছিল অসাধারণ সব সফটওয়্যার। আমি এক সেট (১০টি সিডির প্যাকেট) কিনলাম। দাম ছিল ৫০ ডলার’-বললেন মোস্তাফা জব্বার।

এরপরই অ্যাপলেরর ওই সফটওয়্যারগুলো নিয়ে কাজে লাগানোর চেষ্টা চলে। পরে সফটওয়্যারটির ওপর ভিত্তি করে বঙ্গবন্ধ ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষক মো. মুজিবুর রহমানের তত্ত্বাবধানে ১৯৯৯ সালের ২৪ ডিসেম্বর গাজীপুরে কম্পিউটারভিত্তিক বিদ্যালয় আনন্দ মাল্টিমিডিয়া স্কুল চালু করা হয়।

এ ব্যাপারে মো. মজিবুর রহমান বলেন, ‘স্কুলের লক্ষ্য শিক্ষার্থীদের কম্পিউটারের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়া। কম্পিউটার চালানো শেখানো, নার্সারি এবং অন্য ক্লাসের শিক্ষার্থীর জন্য ওই সফটওয়্যারগুলো ব্যবহার করা শেখানো। পাশাপাশি মাল্টিমিডিয়া ক্লাস কনটেন্ট তৈরি ও তা দ্বারা ক্লাস পরিচালনা করা’।

যেভাবে ১ থেকে ৩২ শাখা

১৩ জন শিক্ষার্থী নিয়ে শুরু করার পর লোকজনের কাছে কিছুটা আগ্রহ পায় স্কুলটি। এরপর ২০০০ সালে বছরজুড়ে আনন্দ মাল্টিমিডিয়া স্কুলের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের কম্পিটারবিষয়ক প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। ২০০১ সালে সারা দেশে আরও ১০টি আনন্দ মাল্টিমিডিয়া স্কুল চালু হয়। ২০০৩ সালের মধ্যে আনন্দ মাল্টিমিডিয়ার ৩২টি স্কুল প্রতিষ্ঠিত হয়। স্কুলের পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানগুলো আয়ের জন্য কম্পিউটারে গ্রাফিক্স ও মাল্টিমিডিয়ার ওপর কোর্সের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। সকালে স্কুল আর বিকেলে সব বয়সীদের জন্য কম্পিউটারের প্রশিক্ষণ দেওয়ার ব্যবস্থা। এতে কম্পিউটারের মাধ্যমে সংবাদপত্র, টেলিভিশন বা নিজে একটি প্রতিষ্ঠান দিয়ে কাজ করতে পারে এমন প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।

যেভাবে পরিচালিত হয়

দেশজুড়ে থাকা আনন্দ মাল্টিমিডিয়া স্কুলগুলোর নির্দেশনা প্রদান করা হয় প্রধান কার্যালয় থেকে। স্কুলের বইপত্র-খাতা-কলম-ব্যাগ, পোশাক ইত্যাদি বিষয়ে একই মান সারা দেশেই বজায় রাখা হয়। স্কুলটি স্থানীয় ভাবে পরিচালনার জন্য একজন পরিচালক দায়িত্বে থাকেন। তিনি প্রয়োজনমতো পরিচালনা পরিষদ বা উপদেষ্টা পরিষদ গঠন করেন। স্কুলের শিক্ষা ও প্রশাসনিক বিষয়ের প্রধান যেমন প্রধান শিক্ষক বা অধ্যক্ষ দক্ষতার সঙ্গে স্কুলের প্রশাসনিক ও শিক্ষামূলক দায়িত্ব পালন করে থাকেন।

স্কুলের সফটওয়্যার তৈরি

আনন্দ মাল্টিমিডিয়ার সফটওয়্যার তৈরির সঙ্গে শুরু থেকে যুক্ত ছিলেন জেসমিন জুঁই। বিজয় ডিজিটালের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জেসমিন জুঁই তুলে ধরেন কীভাবে শিশুদের উপযোগী করে সফটওয়্যার তৈরি করা যায় সে কথা। শুধু যে আনন্দ মাল্টিমিডিয়া স্কুলে শিশুদের সফটওয়্যার ব্যবহার করা হয় তা নয়। দেশের অসংখ্য স্কুলে এ সফটওয়্যার ব্যবহার করা হয়।

জুঁই বলেন, ‘মাল্টিমিডিয়া কনটেন্ট যাঁরা তৈরি করেন, তাঁদের চেয়ে আনন্দ মাল্টিমিডিয়া একটু পার্থক্য আছে। আনন্দ মাল্টিমিডিয়া স্কুলের জন্য তৈরি কনটেন্ট শিশুদের উপযোগী করে তৈরি করা হয়। আমি ছড়া বা কবিতা বানানোর সময় প্রথমে আইডিয়াটা চিন্তা করি। তারপর স্টুডিওতে বসে গানটা বানাই। স্কুলের পাঠ্যবইয়ে দেখবেন ছবি অনেক কম থাকে। বাচ্চা যখন এটা দেখবে তখন কিন্তু লাইনে লাইনে ছবি চায়।

লক্ষ্য সারাদেশ

আনন্দ মাল্টিমিডিয়া স্কুলে এখন ব্যবহার করা হয় বিজয় ডিজিটাল সফটওয়্যার। নেত্রকোনার পূর্বধলা স্কুলে প্রথম এ সফটওয়্যার ব্যবহার করা হয়। মোস্তাফা জব্বার বলেন, ‘এ স্কুলটি আমার ধারণাই বদলে দেয় বাংলাদেশের শিশুদের সম্পর্কে। ২০১৫ সালের ডিসেম্বর মাসে ওই স্কুলের প্রথম শ্রেণির ৩৯ জন শিশুকে একটা ট্যাব দেওয়া হলো সফটওয়্যারসহ। শিক্ষকেরা ক্লাসে পড়াচ্ছে মাল্টিমিডিয়ার মাধ্যমে আর প্রথম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা ট্যাবে পড়া বুঝে নিচ্ছে।

ট্যাবের মধ্যে বাংলা, ইংরেজি ও অঙ্ক এ তিনটি বইয়ের সফটওয়্যার দেওয়া হলো। এর এক মাস পর স্কুলে গিয়ে অবিশ্বাস্য ফলাফল দেখতে পেলাম। এক মাসের মধ্যে এক বছরের পুরো সিলেবাস শেষ করে ফেলেছে প্রথম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা। এ সাফল্য দেখার পর মনে হলো এটা জাতীয় পর্যায় নিয়ে যাওয়া দরকার।’ আনন্দ মাল্টিমিডিয়া স্কুলের মূল উদ্দেশ্যই হলো আনন্দের মাধ্যমে শিশুদের লেখা পড়া শেখানো। সেই ধারা এখন আরও ছড়িয়ে দিতে চান এর উদ্যোক্তারা।

যে অঞ্চলে রয়েছে ‘আনন্দ মাল্টিমিডিয়া স্কুল’

আনন্দ মাল্টিমিডিয়া স্কুল, কাজী আজিম উদ্দিন কলেজ রোড, ছায়াবীথি, গাজীপুর। আনন্দ মাল্টিমিডিয়া স্কুল, পশ্চিম ভান্নারা, মৌচাক, কালিয়াকৈর, গাজীপুর। আনন্দ মাল্টিমিডিয়া ইন্টারন্যাশনাল স্কুল, সানোয়ারা আবাসিক এলাকা, চান্দগাঁও, চট্টগ্রাম। আনন্দ মাল্টিমিডিয়া স্কুল, চাঁদগাঁও ক্যাম্পাস, চাঁদগাঁও আবাসিক এলাকা, চট্টগ্রাম। আনন্দ মাল্টিমিডিয়া স্কুল, জেলা স্কুল রোড, ময়মনসিংহ। আনন্দ মাল্টিমিডিয়া স্কুল, গৌরীপুর, দাউদকান্দি, কুমিল্লা। আনন্দ মাল্টিমিডিয়া স্কুল, আনন্দ মাল্টিমিডিয়া স্কুল, খড়মপট্টি, কিশোরগঞ্জ সদর, কিশোরগঞ্জ। আনন্দ মাল্টিমিডিয়া স্কুল, খালিশপুর, খুলনা। আনন্দ মাল্টিমিডিয়া স্কুল অ্যান্ড কলেজ, হোমনা, কুমিল্লা। আনন্দ মাল্টিমিডিয়া স্কুল, কক্সবাজার।

বহুমাত্রিক.কম

Walton Refrigerator Freezer
Walton Refrigerator Freezer