Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

বৈশাখ ১৭ ১৪৩১, বৃহস্পতিবার ০২ মে ২০২৪

তিন দিবস সামনে রেখে যশোরে ব্যস্ত ফুল চাষীরা

কাজী রকিবুল ইসলাম, যশোর প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ২১:২১, ৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

আপডেট: ০০:০০, ৩১ ডিসেম্বর ১৯৯৯

প্রিন্ট:

তিন দিবস সামনে রেখে যশোরে ব্যস্ত ফুল চাষীরা

ছবি- সংগৃহীত

যশোর : দরজায় কড়া নাড়ছে বসন্ত। আর ক’দিন পর বিশ্ব ভালোবাসা দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। আর এ দিবসগুলোর বাজার ধরতে ব্যাস্ত সময় পার করছে যশোরের গদখালি এলাকার ফুলচাষিরা।

২১ ফেব্রুয়ারি মাতৃভাষা দিবসে আমরা ভাষা শহীদদের প্রতি সম্মান জানাতে ফুল ব্যবহার করি। এদিন শহীদ মিনারের প্রতিটি কোনা ভরে ওঠে বিভিন্ন রঙের ফুলে। ফুল ব্যবসায়ীদের কছে পুরো ফেব্রুয়ারি মাসটি ব্যবসায়ের উৎস হিসেবে বিবেচিত। তবে ১৩ ও ১৪ ফেব্রুয়ারি এই দু’দিনে ফুল বিক্রি অন্যতম উচ্চতায় পৌঁছায় ফুলচাষিদের। এ সময়কে কেন্দ্র করে এখানকার ফুল ব্যবসায়ীদেরও থাকে বিশেষ প্রস্তুতি।

বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটির তথ্যমতে, এবার যশোরে পাইকারি পর্যায়ে ৭০ কোটি টাকার ফুল বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। যশোরে প্রায় ৬ হাজার ফুল চাষি ১৫ শত হেক্টর জমিতে বিভিন্ন প্রকার ফুল চাষের সাথে সম্পৃক্ত। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি চাষ হয় গ্যালোরিয়াস শতকরা ৪০ভাগ। চাষ করে এখানকার ফুল চাষিরা। তার পরই ২০ ভাগ চাষ হয় রজনিগন্ধা। গোলাপ ১৫ ভাগ চাষ হয়। তাদের উৎপাদিত জারবেরা, গাঁদা, জিপসি, রডস্টিক, কেলেনডোলা, চন্দ্র মল্লিকাসহ ১১ ধরনের ফুল সারাদেশের মানুষের মন রাঙাচ্ছে এখানকার চাষিরা।

শনিবার সরেজমিনে যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালি, পানিসারা, নাভারণ, নিরবাসখোলা এলাকার মাঠ ঘুরে দেখা গেছে, জমিতে সেচ প্রদান, গোলাপের কুঁড়িতে ক্যাপ পরানো, সার-কীটনাশক, আগাছা পরিস্কার করাসহ ফুলের আনুসাঙ্গিক পরিচর্যা করছেন চাষিরা। তাদের লক্ষ্য এ মাসের প্রতিটা ফুলের বাজার ধরা।

পানিসারা মাঠপাড়া এলাকার ফুল চাষি তবিবর জানান, ফুল চাষে আসা বংশপরমপরায়। আমার বাবা ফুল চাষ করতো। এখন আমিও ফুল চাষের সাথে সংপৃক্ত। আমি ৪ বিঘা জমিতে ফুল চাষ করেছি। তার মধ্য রজনিগন্ধা ২ বিঘা ও ১ বিঘা গোলাপ ও ১ বিঘা জারবেরা। সামনে ফুলের বড় বাজার তাইতো বাজার ধরতে সকাল-বিকাল ফুলের পরিচর্যা করছি।

গদখালিতে কথা হয় তরুণ ফুল ফুলচাষি আশরাফুল ইসলাম চান্দু তিনি বলেন, ৪ বিঘা গোলাপ, ২ বিঘা জারবেরা ও ১ বিঘা গ্যালোরিয়াস ও রডস্টিক চাষ করেছেন। আমরা গোলাপের কুঁড়িতে ক্যাপ পরিয়ে রাখি, যাতে ফুল একটু দেরি করে ফোটে। বসন্ত দিবস, ভালবাসা দিবস আর ২১ ফেব্রুয়ারিতে যাতে ফুল বাজারে দেওয়া যায়। প্রতিটি গোলাপে ক্যাপ পরানোসহ খরচ প্রায় ৪ টাকার মতো। যদি ৭-৮ টাকা বিক্রি করা যায় তাহলে মুনাফা বেশি পাবো বলে আশাবাদ। ফুল চাষের উপর প্রশিক্ষণ নিয়ে তিনি সফল ভাবে ফুল চাষ করে যাচ্ছেন।

ফুল চাষি ও ব্যবসায়ী নজরুল আলম জানান, তিনি ফুল ব্যবসায়ের সাথে ফুল চাষ করছেন। তার চাষের মধ্য জারবেরা, গাঁদা, জিপসি, রজনিগন্ধাসহ বেশ কয়েকটি ফুল চাষ করছে লাভজনক ভাবে। কিন্তু তার জারবেরা ফুলে মাকড় পোকা বিস্তার করেছে। সেই সাথে সাদা মাছি। কৃষি কর্মকতাদের পরামর্শ মতো কীটনাশক দিয়ে এই পোকামাকড় বিস্তার নষ্ট করার টেষ্টা করছি। গত দু-তিনমাস ব্যবসাটা কিছুটা খারাপ গেছে। সময়মতো সামনের দিবস গুলোতে যদি বাজার ধরতে পারি তা হলে ৩-৪ লক্ষ টাকার মতো ফুল বিক্রয় করতে পারবো।

বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটির সভাপতি আব্দুর রহিম বলেন, যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলারসহ এ জেলায় বাণিজ্যিক ভাবে ফুলের চাষ হচ্ছে। ১৯৮৩ সালে গদখালীতে মাত্র ৩০ শতক জমিতে ফুল চাষ শুরু হয়। এখন চাষ হচ্ছে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার হেক্টর জমিতে। দেশে ফুলের মোট চাহিদার ৭০ ভাগই যশোরের গদখালী থেকে সরবরাহ করা হয়। দেশের গন্ডি পেরিয়ে এই ফুল এখন যাচ্ছে দুবাই, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়াতেও।

বাংলাদেশে বর্তমান সময়ে ৩০ লক্ষ মানুষের জীবিকা এই চাষ বা ফুলকে কেন্দ্র করে। প্রায় ২০ হাজার কৃষক ফুলচাষের সঙ্গে সম্পৃক্ত। এর মধ্যে কেবল যশোরেই প্রায় ৬ হাজার ফুলচাষি রয়েছেন। সামনের দিবসগুলোকে কেন্দ্র করে প্রায় ৭০ কোটি ফুল বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। সারাবছর টুকটাক ফুল বিক্রি হলেও মূলত ফেব্রুয়ারি মাসের তিনটি উৎসবকে সামনে রেখেই জোরেশোরে এখানকার চাষিরা ফুল চাষ করে থাকেন।

কিন্তু কিছু অসাধু ব্যাক্তিরা প্লাস্টিক ফুলকে আমদানি বা তৈরির জন্য ব্যবসাটি কমে যায়। এ প্লাস্টিক বাজারজাত করণ যদি সরবারহ বন্ধ করতো তা হলে ফুল চাষে আরো বৃদ্ধি ও লাভবান হবে বেশি। তাছাড়া ঢাকায় স্থায়ী ফুলের বাজার স্থাপন করতে পারলে ফুলের চাষ ও ব্যবসা প্রসার ঘটবে।

বহুমাত্রিক.কম

Walton Refrigerator Freezer
Walton Refrigerator Freezer