Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

আষাঢ় ২৮ ১৪৩২, রোববার ১৩ জুলাই ২০২৫

যৌনতার অধিকার নিয়ে খোলাচিঠিতে যা লিখলেন এক বিধবা

সংঘমিত্র প্রধান রায়

প্রকাশিত: ১৫:৪৫, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭

আপডেট: ১২:১৪, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৭

প্রিন্ট:

যৌনতার অধিকার নিয়ে খোলাচিঠিতে যা লিখলেন এক বিধবা

যৌনতায় নারীর অধিকার নিয়ে বরাবরই একটা ছুঁৎমার্গ আছে সমাজের। সমাজের গতানুগতিক গণ্ডির বাইরে গিয়ে নারী যৌনতার বিষয়ে কথা করলেই ছি ছি পড়ে যায়। এমনই এক কাহিনী নিজের কলমে তুলে ধরেছেন এক বিধবা।

জগদীশ গুপ্তর ‘বিধবা রতিমঞ্জরী’ ছোটগল্পটি কি আজকের প্রজন্মের পড়া আছে? শরৎচন্দ্রের কালেই এই গল্পে লেখক দেখিয়েছিলেন কীভাবে এক বিধবা তার বাসনাকে ব্যক্ত করে সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপন দিয়েছিলেন।

সেই গল্প নিয়ে কম জলঘোলা হয়নি। নারীর অবমাননা ঘটেছে বলেও অভিযোগ ওঠে। সেই সময়ের পরে কেটে গেছে বিস্তর সময়। কিন্তু, আজও নারী-মুখে যৌনতা এক নিষিদ্ধ শব্দ। বিশেষ করে, একাকী কোনো নারীর যৌনতা নিয়ে সরব হলে সমাজের যাবতীয় ভর্ৎসনা তাঁদের উপরে বর্ষিত হয়। এমনকী, কোনো নারী বিধবা হয়ে গেলে এটাও ধরে নেয়া হয় যে তাঁর যৌনজীবনেরও মৃত্যু ঘটেছে।

অথচ পুরুষদের ক্ষেত্রে সমাজের এমন কোনো ছুঁৎমার্গ নেই। সমাজের এমন একচোখাপনায় বহুদিন থেকেই সরব বহু মানুষ। এবার সামনে এল একটা খোলা চিঠি। যেখানে এক বিধবা তাঁর যৌনতার অধিকারের স্বপক্ষে কথা করেছেন,

অসমবাসী এই বিধবা ‘বোনোবলোজি’ নামে একটি ব্লগ সাইটের মাধ্যমে এই খোলা চিঠি সমাজের সামনে তুলে ধরেছেন। লেখিকা জানিয়েছেন, তিনি ৪০ বছরের এক বিধবা। তাঁর ২০ বছরের একটি পুত্রও আছে। কিন্তু, তাঁর স্বামী মারা গেছেন। মদের নেশায় চুর থাকা স্বামীর সঙ্গে ঘর করতে পারেননি এই নারী। তাই একটা সময়ে ছেলেকে সঙ্গে করে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে পড়েছিলেন।

স্বামীকে ডিভোর্স করার কথা ভাবেননি বা দ্বিতীয় বিবাহের কথাও মাথায় আনেননি তিনি। তিনি লিখছেন, ‘ইচ্ছে করলে হয়তো আমি ডিভোর্স নিয়ে নিতে পারতাম। কিন্তু, আমার ছেলেকে বড় করার একটা বিশাল দায়িত্ব আমার কাঁধে আছে। কারণ, আমি একদম ছোটবেলায় মা’কে হারিয়েছিলাম।

মা-মরা মেয়ের কদর করেননি বাবা। সেই তুলনায় আমার ছোটভাইকে মানুষ করায় বাবার বেশি মন ছিল। আমার ইচ্ছে করত রঙ-তুলির আঁচড়ে বড় বড় ক্যানভাসে ছবি আঁকতে। কিন্তু, ছোটভাইয়ের পেছনে প্রচুর খরচ হচ্ছে বলে বাবা আমার পেছনে কোনোদিন অর্থ খরচ করতে চাইতেন না।

পড়াশোনার ভাল হলেও বাবা কোনোদিন আমাকে পড়াতে চাননি। একদিন নদীর সামনে দাঁড়িয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলেছিলাম আমি আমার সন্তানের জন্য খুব ভাল মা হব। যৌবনে পড়তেই বাবা বিয়ে দিয়ে দিয়েছিলেন। স্বামী ছিল মদ্যপ। রাতদিন মারধর করত। বহুদিন সহ্য করেছিলাম। একদিন ছোট্ট ছেলেকে নিয়ে বেরিয়ে এসেছিলাম।

এখন আমি চাকরি করি। ছেলেকে ভাল শিক্ষা দেয়ার ব্যবস্থা করেছি। স্বামী মারা গেছে । আমি এখন বিধবা। কিন্তু, এই ৪০ বছর বয়সে আমারও মনের মধ্যে শরীরের খিদে জাগে। আমিও যৌনতার স্বাদ পেতে চাই। মাঝে মাঝে রাতে ঘুমাতে পারি না। ছোটবেলা থেকে প্রচুর সংগ্রাম করেছি। এখনও করে চলেছি।

কিন্তু, শরীরের স্বাভাবিক খিদে কীভাবে অগ্রাহ্য করব? আমার মনে হয় সুস্থ, সবল থাকতে যৌন সম্পর্ক দরকার। আমার যৌনতা পাওয়ার একমাত্র অধিকার কারোর সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া। কিন্তু, ছেলের জন্য আমি নতুন করে বিয়ে করতে চাই না।

আমি যদি কোনো যৌনসঙ্গী রাখতে চাই তাহলে সমাজ আমায় ছি ছি করবে। কেন এমন বিধান হবে সমাজের? এটা তো আমার অধিকার? আমি জানি ৪০ নয় ১৮ বছর বয়সেও যদি আমি বিধবা হতাম তাহলেও একই বিধান দিত সমাজ।

কারণ, বিধবাদের তো যৌনজীবন থাকতে পারে না। আমি এটাও জানি এভাবে প্রকাশ্যে যৌনতার অধিকারে কথা করায় আমাকে কী পরিমাণ ঘৃণার সম্মুখীন হতে হবে? কিন্তু এটা আমার বেসিক নিড। আমি বলতে পারব না যে আমি যৌনতা চাই না। ’

এই মুহূর্তে এই খোলা চিঠি নিয়ে সরব সোশ্যাল মিডিয়া। বলাই বাহুল্য, এই নারীর স্বপক্ষেই কথা বলছেন হাজার হাজার মানুষ।

ফেসবুক থেকে নেওয়া

বহুমাত্রিক.কম