অনুষ্ঠানের উদ্বোধক ড. আতিউর রহমানকে স্মারক তুলে দিচ্ছেন স্পিকার ড. শিরিন শারমিন চৌধূরী
মিরপুর এগ্রিকালচারাল ওয়ার্কশপ এন্ড ট্রেনিং স্কুল (মট্স) এর মতো প্রতিষ্ঠানের পরিসরকে আরও বহুগুণ বৃদ্ধি করা গেলে বাংলাদেশের অন্তর্ভূক্তিমূলক উন্নয়নের গতিপ্রবাহ আমূল বদলে যাবে বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান। গতকাল শুক্রবার মিরপুর এগ্রিকালচারাল ওয়ার্কশপ এন্ড ট্রেনিং স্কুল (মট্স) এর সুবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠানের উদ্বোধকের বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
অধ্যাপক আতিউর রহমান বলেন, ‘জনসংখ্যার বিপুল বিস্ফোরণে যে চ্যালেঞ্জ আমাদের রয়েছে, জমি কমছে অবকাঠামো উন্নয়নে, খাদ্যনিরাপত্তায় ঝুঁকি বাড়ছে, সেখানে মট্স এর মতো প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানের সম্প্রসারণে আমাদের আরও মনোযোগী হতে হবে। শিক্ষা ব্যবস্থাকে আরও বেশি প্রায়োগিক ও প্রশিক্ষণনির্ভর করার বিকল্প নেই। আমি মনে করি, কেবলমাত্র সরকারের পক্ষে একা এই দায়িত্ব নেওয়া সহজ হবে না। মট্স এর মতো প্রয়াস আরও বহুগুণে প্রয়োজন রয়েছে দেশে, যারা সাধারণের কথা চিন্তা করেন।’
মট্স এর গৌরবোজ্জ্বল পরম্পরার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘১৯৭৩ সালে দারিদ্র্য মুক্তি ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির জন্য কারিগরি শিক্ষাকে অগ্রাধিকার দিয়ে মট্স প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছেলেন এর স্বপ্নদ্রষ্টারা। যুদ্ধ বিধ্বস্ত স্বাধীন দেশের পুণর্গঠনে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনে কৃষি ও কারিগরি শিক্ষাকে অগ্রাধিকার দিয়ে প্রতিষ্ঠানটির এই দীর্ঘ পথচলায় বহু বেকার তরুণদের জীবনে সাফল্যের গল্প তৈরি করেছে। খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনে কৃষিকে প্রাধান্য দিয়ে মট্স বিভিন্ন দেশ থেকে পাওয়ার টিলার, ট্রাকটার, টিউবঅয়েল অনুদান হিসেবে সংগ্রহ করে যা কৃষিকে সহজতর ও ত্বরান্বিত করেছে। এক দল বিদেশী ইঞ্জিনিয়ার প্রাথমিকভাবে এ কাজে সহযোগিতা দিলেও পরবর্তীতে স্থানীয়দের দক্ষ কারিগর হিসেবে তৈরী করে এ কার্যক্রমে সম্পৃক্ত করা হয় যাতে তারা নিজেদের প্রয়োজন নিজেরাই মিটিয়ে স্বাবলম্বিতা অর্জন করতে পারে। এটি অত্যন্ত সুখকর খবর যে, বাংলাদেশের প্রত্যন্ত জনপদ থেকে দরিদ্র ও অপেক্ষাকৃত মেধাবী তরুণদের যুক্ত করে Long Term Mechanical Course চালু করে প্রতিষ্ঠানটি এখন পর্যন্ত ১৭৪৩ জনকে প্রশিক্ষিত করতে পেরেছে, যারা জাতীয় উন্নয়ন ও অগ্রগতিতে সক্রিয় অবদান রাখছে।’
মানবসম্পদ উন্নয়নে, বিশেষ করে বৈদেশিক শ্রমবাজারে দক্ষ শ্রমিক প্রেরণে মট্স এর ভূমিকার প্রশংসা করে এই উন্নয়ন অর্থনীতিবিদ বলেন, ‘আমরা জানি, মট্স এর নানামূখি প্রয়াসের মধ্যে অদক্ষ বা আধাদক্ষ শ্রমিককে দক্ষ মানবসম্পদে রুপান্তরিত করা অন্যতম। বিশেষভাবে মধ্যপ্রাচ্যেও বিভিন্ন দেশে যখন বাংলাদেশী শ্রমিকদেও চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছিল তখন মট্স বিদেশী বিভিন্ন কোম্পানির চাহিদার ভিত্তিতে কোর্স কারিকুলাম প্রস্তুত করে স্বল্পমেয়াদী প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চালু করে দক্ষ শ্রমিক তৈরী করার কার্যক্রম শুরু করেছিল যা বর্তমানে মধ্যপ্রাচ্যেও গন্ডি ছাড়িয়ে ইউরোপ আমেরিকা পর্যন্ত ছড়িয়েছে। বর্হিবিশ্বে দক্ষ শ্রমিকের চাহিদা বৃদ্ধিও কারণে এ প্রশিক্ষণের চাহিদা ও দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। সেক্ষেত্রে মট্স এর কর্মপরিধি নিঃসন্দেহে আরও সম্প্রসারিত হলো।’
‘বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড (বাকাশিবো) এর আওতায় ৪ বছর মেয়াদী ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্স কার্যক্রমের আওতায় প্রতিষ্ঠানটি কিপুল সংখ্যক দক্ষ মানসম্পদ সৃষ্টিতে অবদান রাখছে। অনেকে ক্ষেত্রে মেধাবৃত্তির মাধ্যমে সামর্থ্যহীনদের জন্যও সুযোগ সৃষ্টি করেছে মট্স, যা প্রতিষ্ঠানের মানবিক সহৃদয়তার পরিচয় বহন করছে। ইতোমধ্যে ১৯৭৬-২০২৩ সময়ে মট্স মোট ৪৮৬৩৬ জন অদক্ষ জনশক্তিকে দক্ষ জনশক্তিতে রূপান্তর করার মাধ্যমে মট্স কারিগরি প্রশিক্ষণে দেশে এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।’
মট্স বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারপার্সন সেবাষ্টিয়ান রোজারিও’র সভাপতিত্বে বর্ণাঢ্য সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরিন শারমিন চৌধুরী, এমপি। এতে গেস্ট অব অনার ছিলেন ঢাকা আর্চডায়োসিস এর আর্চ বিশপ বিজয় এন ডি’ক্রুজ, ওএমআই। বিশেষ অতিথি ছিলেন কার্ডিনাল প্যাট্রিক ডি’ রোজারিও, কারিতাস বাংলাদেশ এর প্রেসিডেন্ট ও খুলনা আর্চডায়োসিস এর বিশপ জেমস রমেন বৈরাগী, সংসদ সদস্য জুয়েল আরেং, এডভোকেট গ্লোরিয়া ঝর্ণা সরকার, পল্লীকর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ) এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. নমিতা হালদার ও বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান মোঃ আলী আকবর খান। স্বাগত বক্তব্য রাখেন মট্স এর পরিচালক জেমস গোমেজ।