ছবি: বহুমাত্রিক.কম
ঢাকা : কওমি মাদ্রসায় দাওরা হাদিস লেখাপড়া করার পর দীর্ঘদিন বেকার ছিলেন মাওলানা মোঃ হাবিবুল্লাহ। বেকারত্বের অভিশাপ দূর করার জন্য নয় মাস পূর্বে ইন্টারনেটের মাধ্যমে হাঁস পালন দেখে তার মাথায় আসে হাঁস পালনে বেকারত্বমোচনের।
কিন্তু নিজেদের জমি না থাকায় সে আবার হতাশ হয়ে তার বাবা সিরাজ মুন্সীর সহযোগিতায় ধামরাই পৌর-ছোট চন্দ্রাইল এলাকার আব্দুর রহিমের কাছ থেকে ৩০শতাংশ জমি ও ১০শতাংশ জমির উপর কাটা একটি পুকুর এক বছরের জন্য ১২ হাজার টাকা দিয়ে ভাড়া নেন।
জমি ভাড়া বাবদ গুণতে হবে তাকে বছরে ৫ হাজার টাকা পুকুরের জন্য গুণতে হবে ৭ হাজার টাকা। পরে স্থানীয় এক এনজিও অফিস থেকে ৫০ হাজার টাকা ঋণ নেয় হাবিবুল্লাহ্ । পরে ভাড়া জমিতে ঘর তৈরি করে । দেশী, খাকী কেম্বেল, জেনডিং তিন জাতের ১ হাজার হাঁসের বাচ্চা তুলেন।
১ হাজার বাচ্চার মধ্যে ৫৭৫টি পুরুষ হাঁস এবং ৪২৫টি মেয়ে হাঁস হওয়ায় আবার হতাশ হয়ে পরে হাবিবুল্লাহ্ । কিন্তু হাল ছাড়ার পাত্র নয় হাবিবুল্লাহ্ । নিয়ম অনুযায়ী ৫ মাস পর থেকে ডিম দেওয়ার কথা থাকলেও হাঁসগুলো ডিম দিচ্ছিল না । পরে সে আবার ইন্টারনেট থেকে নওগাঁ হাঁস পালনকারী জুয়েলের কাছ থেকে পরামর্শ অনুযায়ী মিশ্র করে খাবার খাওয়ানো শুরু করে । খাবার খাওয়ানোর ১৫ দিন পর থেকে হাঁসগুলো ডিম দেওয়া শুরু করে।
কিন্তু তাতে একশ’ ভাগ সফল হননি হাবিবুল্লাহ্ । তিনি বিশ্বস্ত সূত্রে জানতে পারেন নওগাঁ আঞ্চলিক হাঁস প্রজনন কেন্দ্র আছে সেখানে যায়। সেখানে দায়িত্বে থাকা আব্দুল হামিদের কাছ থেকে সঠিক পরামর্শ নিয়ে আসে এবং সে পরামর্শ অনুযায়ী আট প্রকার খাবার যেমন-গম ভাঙ্গা, চাউল ভাঙ্গা, তৈলের খৈল, সয়াবিনের খৈল, শুটকি মাছের গুড়া, লবন, পানা, ভিটামিন মিনারেল, মিশ্র করে খাওয়ানো শুরু করে তার পর থেকে শতভাগ সফলতা পান ।
হাবিুল্লাহর সফলতায় উৎসাহিত হয়ে একই এলাকার সোহেলসহ আরো কয়েকজন হাঁস পালনের খামার তৈরি করে সফলতার অপেক্ষায় রয়েছে। সোহেল রানা বলেন, আমি প্রথম অবস্থায় এক হাজার হাঁস খামারে পালন করতেছি, আশা করছি কিছুদিনের মধ্যেই ডিম দিবে।
হাবিবুল্লাহ্ জানান, বর্তমানে আমার খামারে ৪২৫ টি হাঁস রয়েছে তা থেকে প্রতিদিন ৮৫ ভাগ ডিম পায়। ৪২৫ টি হাঁস থেকে মাসে আয় হয় ৯০-৯৫ হাজার টাকা এতে মাসে সর্ব মোট ব্যায় হয় ৪৫-৪৭ হাজার টাকা।মাসে লাভ হয় ৪৮-৫০ হাজার টাকা । প্রতিটি হাঁস বছরে ২৮০-৩০০টি ডিম দেয়।প্রতিটি হাঁসের খাবার বাবদ ১৬০ গ্রাম লাগে।
তিনি আরও জানান, মুরগির থেকে হাঁসের খাদ্যের দাম কম রোগ বালায়ও কম হয় ।মুরগির প্রতিমাসে রোগ দমনের জন্য ভ্যাকসিন দিতে হয় কিন্তু হাঁসের ৪ মাস পর পর এক বার বেকসিন দিতে হয়। তাই মুরগির চেয়ে হাঁস পালন লাভবান বেশী। আমার হাঁস পালন দেখে এলাকার বেকার যুবকরা এই হাঁস পালনে ঝুঁকছে।আমাদের সরকারের কাছে জোর দাবি উপজেলায় একটা করে প্রশিক্ষণ কেন্দ্র করা হয়।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ সাইদুর রহমান বলেন, আমরা একসুত্রে জানতে পারি যে হাবিবুল্লাহ্ নামে এক জন হাঁস পালন করতেছে-সঙ্গে সঙ্গে তার র্ফামে চলে যাই। তার র্ফামে গুড়ে দেখি কি ভাবে হাঁস পালন করতেছে। কিভাবে হাঁসের ভ্যাকসিন দিতে হবে সব ধরণের পরামর্শ দিয়েছি। কোন ধরণের অসুবিধা হলে আমাদের উপজেলার প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাগন রয়েছে সাথে সাথে ব্যবস্থ্যা নিবে।
বহুমাত্রিক.কম