
ফাইল ছবি
মিয়ানমারের অভ্যন্তরে রাতের বেলায় গোলাগুলির ঘটনায় কক্সবাজারের উখিয়া ও বান্দরবানের ঘুমধুম সীমান্ত এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়েছে। নিরাপত্তার আশঙ্কায় অনেক বাসিন্দা কৃষিকাজে যাচ্ছেন না। তবে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) জানিয়েছে, সংঘর্ষ বাংলাদেশের ভেতরে নয়, পুরোপুরি মিয়ানমারের অভ্যন্তরে ঘটেছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় বিজিবি সতর্ক অবস্থানে রয়েছে এবং সীমান্তবাসীদের সাবধানতার সঙ্গে চলাফেরার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার গভীর রাতে উখিয়ার রহমতের বিল এবং বান্দরবানের ঘুমধুম সীমান্তে মিয়ানমারের ভেতর থেকে প্রচণ্ড গোলাগুলির শব্দ শোনা যায়। ঘণ্টাব্যাপী চলা এ গোলাগুলিতে সীমান্তবর্তী এলাকায় ভয় ও উৎকণ্ঠা ছড়িয়ে পড়ে।উখিয়ার রহমতের বিল এলাকার বাসিন্দা মোজাহের মিয়া (৮০) বলেন, ‘বৃহস্পতিবার রাত ১১টা থেকে ১২টা ৩ মিনিট পর্যন্ত টানা গোলাগুলি হয়েছে। সীমান্তের দক্ষিণ পাশে তুমব্রু খালের দিকে সংঘর্ষ চলছে বলে মনে হয়। এমনকি স্কুলের পাশে একটি গুলি এসে পড়ে। এতে আমরা ভয় পেয়ে যাই, যদি গুলি আমাদের বাড়ি ঘরে পড়ে।’
রহমতের বিল, ধামনখালী ও আঞ্জুমানপাড়া সীমান্ত এলাকায় শুক্রবার সকালেও নীরবতা দেখা যায়। কৃষকরা জমিতে যাননি, ঘেরেও দেখা যায়নি জেলেদের। সড়কের কাজও বন্ধ ছিল। হাতে গোনা কয়েকজন বাসিন্দা জরুরি প্রয়োজনে বাইরে বের হন।
সীমান্তের কাছাকাছি বসবাসকারী বরগিজ বেগম (৬০) বলেন, ‘রাতে খুব বেশি গুলাগুলি হয়েছে। ভয়ে সারারাত বসেছিলাম, ঘুম আসেনি। ভয়টা এখনো কাটেনি।’রহমতের বিল এলাকার কৃষক সাইফুল ইসলাম (২৬) বলেন, ‘এ অবস্থায় ধানক্ষেতে যাওয়া সম্ভব নয়। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে যাব।’
ধামনখালীর বাসিন্দা আনোয়ার ইসলাম (৫৫) বলেন, ‘ঘণ্টাখানেক ধরে বড় বড় গোলার শব্দ শোনা গেছে। যদি গুলি এখানে এসে পড়ে সেই ভয়টাই আমাদের।’
বান্দরবানের ঘুমধুম সীমান্তেও বৃহস্পতিবার রাত ১১টা থেকে ১২টা ৩ মিনিট পর্যন্ত মিয়ানমারের ভেতরের গোলাগুলির আওয়াজ শোনা যায়। ওপারের সংঘর্ষে এপারের নিরাপত্তাও হুমকির মুখে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।ঘুমধুম সীমান্তের বাসিন্দা আরিফ হোসেন (৩০) বলেন, ‘আমাদের বসবাস সীমান্তের খুব কাছে। মিয়ানমারে গোলাগুলি হলে মনে হয়, সেটা এখানেই হচ্ছে।’
একই এলাকার বাসিন্দা নুর হোসেন (৩৫) বলেন, ‘গত বছরও এরকম পরিস্থিতিতে মানুষ মারা গিয়েছিল। আবারও গোলাগুলি শুরু হয়েছে। যদিও এটি মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ বিষয়, তবু আমাদের জীবন ঝুঁকির মধ্যে পড়ছে।’
উখিয়ার পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এম গফুর উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘রাতের সংঘর্ষের কারণে সারারাত প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং বিজিবি সতর্ক অবস্থায় ছিল। আমরা সীমান্তবাসীদের সতর্ক থাকতে বলেছি। পাশাপাশি সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে সীমান্ত নিরাপত্তা জোরদারের আহ্বান জানিয়েছি।’
বিজিবি জানিয়েছে, সংঘর্ষ পুরোপুরি মিয়ানমারের ভেতরে ঘটছে। বাংলাদেশের সীমান্তে এখনো কোনো নিরাপত্তা হুমকি নেই।
উখিয়াস্থ ৬৪ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন বলেন, ‘মিয়ানমারের ভেতরে বিভিন্ন সময়ে সংঘর্ষ ঘটে, তবে তা বাংলাদেশের অভ্যন্তরে নয়। এ ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলায় বিজিবি সর্বদা প্রস্তুত ও সতর্কভাবে দায়িত্ব পালন করছে। সীমান্তে নজরদারি ও টহল জোরদার করা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘মিয়ানমারের ভেতরে সশস্ত্র গোষ্ঠী বা কেউ অনুপ্রবেশের চেষ্টা করলে তা কঠোরভাবে প্রতিরোধ করা হবে। সীমান্তবর্তী জনগণকে আতঙ্কিত না হয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে এবং যেকোনো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বিজিবিকে জানাতে অনুরোধ করা হয়েছে।’
বর্তমানে বাংলাদেশ-মিয়ানমার প্রায় ২৭১ কিলোমিটার সীমান্তজুড়ে বিজিবির টহল ও নজরদারি আরও জোরদার করা হয়েছে।