
ছবি: সংগৃহীত
মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী দাতুক সেরি আনোয়ার ইব্রাহিম বলেছেন, ‘বাংলাদেশ মালয়েশিয়ার এক মহান বন্ধু এবং দুই দেশের সম্পর্ক সময়ের সঙ্গে আরও গভীর হয়েছে।’তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস শান্তি ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠায় উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছেন এবং এখন বাণিজ্য, বিনিয়োগ, সংস্কৃতি ও শিক্ষার ক্ষেত্রে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা জোরদারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন।’
মঙ্গলবার পুত্রজায়ায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের পর যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী।
আনোয়ার ইব্রাহিম বলেন, অধ্যাপক ইউনূস দরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিত মানুষের জন্য নিরলসভাবে কাজ করে বিশ্বব্যাপী পরিচিতি অর্জন করেছেন। ক্ষুদ্রঋণ কর্মসূচি এবং মালয়েশিয়ার কেদাহ প্রদেশের আলবুখারি আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা কার্যক্রমে তার অবদান প্রশংসনীয়।বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারে তিনি শুরু থেকেই অঙ্গীকারবদ্ধ।
মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা সম্ভবত প্রথম সরকারি প্রতিনিধি দলগুলোর একটি হিসেবে ঢাকা সফর করেছিলাম, যাতে আমাদের বন্ধুত্বের প্রতি প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত হয়। বাংলাদেশ এক সম্ভাবনাময় দেশ, যা আমাদের মহান বন্ধু। বাংলাদেশের জনগণের শান্তি, অগ্রগতি ও উন্নয়ন নিশ্চিত করতে আমরা সহযোগিতা অব্যাহত রাখব।’
তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের শ্রমিকরা মালয়েশিয়ার উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছেন। এ কারণেই মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্র ও মানবসম্পদ মন্ত্রণালয় শ্রমিকদের জন্য বহুমুখী প্রবেশ ভিসা (মাল্টিপল এন্ট্রি ভিসা) সুবিধা অনুমোদন করেছে, যাতে তারা পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে পারে এবং কর্মক্ষেত্রে নিরাপদ বোধ করে।’
আটকেপড়া শ্রমিকদের সহায়তার প্রস্তাবকে অগ্রাধিকার দিয়ে গ্রহণ করা হয়েছে বলেও জানান আনোয়ার ইব্রাহিম। তিনি বলেন, ‘পেট্রোনাসের মাধ্যমে জ্বালানি খাত এবং অ্যাক্সিয়াটার মাধ্যমে টেলিযোগাযোগ খাতে বাংলাদেশের সঙ্গে মালয়েশিয়ার সহযোগিতা অব্যাহত রয়েছে। এখন আমরা এই সহযোগিতা হালাল শিল্প, এসটিইএম, গবেষণা ও সেমিকন্ডাক্টর খাতেও প্রসারিত করতে চাই।’
রোহিঙ্গা ইস্যুতে উদ্বেগ জানিয়ে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গা শরণার্থীকে আশ্রয় দেওয়ার দায়ভার বাংলাদেশ বহন করছে, যা প্রশংসনীয় হলেও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আরও সহায়তা প্রয়োজন। মিয়ানমারে শান্তি প্রতিষ্ঠা মালয়েশিয়ার জন্য একটি বড় অগ্রাধিকার, পাশাপাশি ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত ও শরণার্থীদের জন্য তাৎক্ষণিক মানবিক সহায়তাও জরুরি।’
তিনি বলেন, বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ নিউইয়র্ক, কলকাতা ও মালয়েশিয়ায় বহুপাক্ষিক ফোরামে গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ নিয়েছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন ও থাইল্যান্ডের সঙ্গে সমন্বয় করে শিগগিরই মিয়ানমার সফরে যাবেন, যাতে শান্তি প্রতিষ্ঠা ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের ওপর চলমান নির্যাতন বন্ধে সমাধান খোঁজা যায়।
বক্তব্যের শেষে আনোয়ার ইব্রাহিম বলেন, ‘আমার প্রিয় বন্ধু, আমার পরিবার এবং মালয়েশিয়ার জনগণের পক্ষ থেকে আপনার অবদানের জন্য ধন্যবাদ। আমরা আপনার মঙ্গল কামনা করি।’