Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

শ্রাবণ ২৬ ১৪৩২, সোমবার ১১ আগস্ট ২০২৫

জ্বর আদতে রোগের লক্ষণ

বহুমাত্রিক ডেস্ক

প্রকাশিত: ১১:০৯, ১৮ জানুয়ারি ২০২০

প্রিন্ট:

জ্বর আদতে রোগের লক্ষণ

ঢাকা : সামান্য ঠান্ডা লাগলেই জ্বর জ্বর ভাব আসে। আবার পেটে সংক্রমণ বা ফুসফুসে ইনফেকশন হলেও ধীরে ধীরে জাঁকিয়ে বসে জ্বর। ঋতু পরিবর্তন, ভাইরাল ইনফেকশন‌ বা অন্য বড় রোগের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া... জ্বরের কারণ হতে পারে অনেক কিছু।

তাই জ্বর আলাদা কোনও রোগ নয়, বরং একে লক্ষণ বলাই শ্রেয়।একজন সুস্থ মানুষের শরীরের সাধারণ তাপমাত্রা ৩৬-৩৭ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড কিংবা ৯৮-১০০ ডিগ্রি ফারেনহাইট। তাপমাত্রা এর চেয়ে বেশি হলে, গা ছ্যাঁকছ্যাঁক করতে শুরু করলে, তাকে জ্বর বলা যায়।

কিন্তু জ্বর কেন হয়? ভারতের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. সুবীরকুমার মণ্ডল বলছেন, ‘‘মানুষের শরীরের মধ্যে মেটাবলিজ়ম চলাকালীন যে ক্রিয়া-বিক্রিয়া চলতে থাকে, তা থেকেই বাড়তে পারে শরীরের তাপমাত্রা। সুস্থ মানুষের সাধারণ ও স্বাভাবিক তাপমাত্রার চাইতে যদি তা বেড়ে যায়, তখনই তাকে জ্বর বলা চলে। তবে এই ক্রিয়া-বিক্রিয়ার ফলে তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ার কারণ কিন্তু নানা কিছু হতে পারে।’’

সব মানুষের শরীরের তাপমাত্রাই এক হয় না। হয়তো কারও গায়ে হাত দিলে জ্বর জ্বর ভাব মনে হচ্ছে। পরে দেখা গেল, তাঁর শরীরের স্বাভাবিক তাপমাত্রাই সেটা। তাই কারও তাপমাত্রা বেড়েছে মানেই যে জ্বর, তা না-ও হতে পারে।

কী কী কারণে জ্বর হতে পারে?

কোনও ইনফেকশন, কাশতে কাশতে গলা চিরে যাওয়া, ফ্লু, চিকেন পক্স, নিউমোনিয়া, রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস, হিট স্ট্রোক, অ্যালকোহল উইথড্রয়াল, ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গি থেকে শুরু করে নানা কারণে জ্বর আসতে পারে। আবার অনেকক্ষণ প্রখর রোদে থাকার পরে সানবার্ন হলে, সমুদ্রতটে সময় কাটিয়ে সিলিকা ডাস্ট থেকে লাং ইনফেকশন হলেও জ্বর হওয়া অস্বাভাবিক নয়। জ্বরের পাশাপাশি অন্যান্য লক্ষণগুলি বিচার করে চিকিৎসকেরা বুঝতে পারেন সমস্যাটি কতটা গুরুতর।

 জ্বরেরও ভাগ

জ্বরের তীব্রতা কেমন, তা নির্ভর করে সাধারণত দু’টি বিষয়ের উপরে। একটি হল তাপমাত্রা ও অন্যটি সময়সীমা। শরীরের তাপমাত্রার পরিমাণের উপরে নির্ভর করে জ্বরকে সাধারণত চার ভাগে ভাগ করা যায়।

• লো গ্রেড (১০০.৫–১০২.১ ডিগ্রি ফারেনহাইট অথবা ৩৮.১–৩৯ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রা হলে)

• মডারেট (১০২.২–১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট অথবা ৩৯.১–৪০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রা হলে)

• হাই (১০৪.১–১০৬ ডিগ্রি ফারেনহাইট অথবা ৪০.১—৪১.১ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রা হলে)

• হাইপার (১০৬ ডিগ্রি ফারেনহাইট অথবা ৪১.১ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডের বেশি হলে)

আবার সময়সীমার উপরে নির্ভর করে জ্বরকে ভাগ করা যায় ক’টি ভাগে। জ্বর সাত দিনের কম স্থায়ী হলে তাকে বলা হয় অ্যাকিউট ফিভার। তা বেড়ে যদি ১৪ দিন অবধি থাকে, তখন তা পরিচিত সাব-অ্যাকিউট ফিভার নামে। আর জ্বর ১৪ দিনেরও বেশি স্থায়ী হলে, তাকে বলা হয় ক্রনিক বা পারসিস্ট্যান্স ফিভার।

 

কত জ্বর হলে চিন্তা করা দরকার?

শরীরের তাপমাত্রা কতটা বাড়লে তা চিন্তার কারণ, সেটা নির্ভর করে সেই ব্যক্তির উপরেই। ধরুন, কোনও বাচ্চার শরীরের তাপমাত্রা ১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট ও একজন প্রবীণ মানুষের তাপমাত্রা বেড়ে হয়েছে ১০১ ডিগ্রি ফারেনহাইট। নানা পরীক্ষানিরীক্ষা এবং রোগীর পূর্ববর্তী রোগের ইতিহাস বিচার করে দেখা গেল যে, প্রবীণ রোগীর তাপমাত্রা কম হওয়া সত্ত্বেও তা বেশি চিন্তার এবং রোগটি জটিল। ফলে মোটা দাগে বিচার করা সম্ভব নয় যে, শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে কত হলে তা নিয়ে চিন্তা করা দরকার। তবে সামান্য জ্বর হলেই যেমন আতঙ্কিত হওয়ার দরকার নেই, তেমনই তাকে আবার ফেলে রাখার মতো বোকামি করাও উচিত নয়। বরং জ্বর এলে, তাপমাত্রা বাড়তে থাকলে কিংবা রোজই একই সময়ে অল্প পরিমাণে তাপমাত্রা বেড়ে ঘুষঘুষে জ্বর আসতে শুরু করলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

 নির্ধারণ

জ্বরের লক্ষণ যেহেতু ভীষণ স্পষ্ট, তাই নির্ধারণ করাও কষ্টসাধ্য নয়। থার্মোমিটারে পারদের দাগ সাধারণের চাইতে উঁচুতে হলে জ্বর বোঝা যায়। তবে জ্বর মাপার আদর্শ উপায় হল, যখন রোগী শান্ত ভাবে বিছানায় শুয়ে রয়েছেন। যে কোনও রকম শারীরিক কাজকর্ম করলে শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়া স্বাভাবিক। আবার জ্বরকে যেহেতু লক্ষণ হিসেবেই গণ্য করা হয়, তাই চিকিৎসক জ্বরের গুরুত্ব বোঝার জন্য রক্ত পরীক্ষা, ইউরিন টেস্ট, এক্স রে ইত্যাদি করাতে পারেন।

 চিকিৎসা

যে কোনও রকমের জ্বর হলেই প্রাথমিক ভাবে প্যারাসিটামল খাওয়া শ্রেয়। এতে শরীরের তাপমাত্রা কমতে সাহায্য করে। কোনও ভাইরাস, ফাঙ্গাস কিংবা ব্যাকটিরিয়ার সঙ্গে লড়াই করার জন্য শরীরের তাপমাত্রা কমানোও জরুরি। তা সম্ভব প্যারাসিটামল থেকেই। প্রয়োজন বুঝে দিনে তিন-চার বার পর্যন্ত প্যারাসিটামল খাওয়া যেতে পারে।

আবার এনএসএআইডি অর্থাৎ নন-স্টেরয়ডাল অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি ড্রাগস নেওয়া যেতে পারে জ্বর কমাতে। অ্যাসপিরিন বা আইবুপ্রোফেন তাপমাত্রা কমাতে সাহায্য করে। শরীরের কোনও অংশে সংক্রমণ বা ইনফেকশন হলে অ্যান্টি বায়োটিক নেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে। তা অবশ্য চিকিৎসকই দেন। কিন্তু সাধারণ জ্বর হলেই দ্বিতীয় দিন থেকে অ্যান্টি-বায়োটিক খাওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। আবার ঠান্ডা লেগে কিংবা কোনও ভাইরাল ফিভার হলে শুধু অ্যান্টি-বায়োটিকে কাজ হয় না। সে ক্ষেত্রে চিকিৎসক রোগীর অবস্থা নিরীক্ষণ করে অন্য ওষুধ দেন।

 

জ্বর যখন অটো ইমিউন ডিজ়িজ়

অনেক সময়ে অ্যান্টি-বায়োটিক খেয়ে, জ্বর কমানোর সমস্ত সম্ভাব্য উপায় মেনে চলার পরেও দেখা গেল, জ্বর আসতেই থাকছে। কোনও ওষুধেই কমছে না। আবার নিজে থেকেই হয়তো স্বাভাবিক হয়ে যাচ্ছে তাপমাত্রা। ডা. মণ্ডল বলছেন, ‘‘অনেক সময়ে দেখা যায়, রোগীর শরীর নিজেই নিজের ভিতরে থাকা নানা ভাইরাস ও ব্যাকটিরিয়াকে শত্রু মনে করছে। তখন ক্রিয়া-বিক্রিয়া বাড়ছে। স্বাভাবিক ভাবে জ্বরও আসছে। আবার নিজে থেকেই তা থামছে, সেরে যাচ্ছে জ্বর। সে ক্ষেত্রে এ ধরনের জ্বরের ঠিক উৎসগত কারণটা বোঝা যায় না। তখন জ্বর অটো ইমিউন ডিজ়িজ় বলেই গণ্য হয়।’’

সচেতনতা

জ্বর যেহেতু লক্ষণ, ফলে আগে থেকে সচেতন হয়ে তা রোখার উপায় নেই। তবে স্বাস্থ্যসম্মত বিধিকরণ অর্থাৎ হাইজিন মেনে চলা উচিত। তাতে ব্যাকটিরিয়া, ভাইরাস, ফাঙ্গাসের আক্রমণ কিছুটা হলেও কম হয়। জ্বর হলে প্যারাসিটামলের পাশাপাশি প্রচুর পরিমাণে জল পান করাও দরকার। এ সময়ে শরীর ডিহাইড্রেটেড হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে মারাত্মক।

জ্বর হলে ডাইজেস্টিভ এনজ়াইমও কাজ করে কম। ফলে খাবার হজম হতে সময় লাগে। অনেক সময়ে মুখে স্বাদও থাকে না। তাই সহজপাচ্য খাবার খাওয়াই শ্রেয়।

জ্বর নানা রকম এবং এর বিস্তারও ব্যাপক। কখনও খুব সাধারণ কারণে জ্বর হতে পারে, কখনও বা এর পিছনে জড়িয়ে থাকে জটিল কোনও অসুখ। তাই জ্বর হলেই প্রথম থেকে এর প্রতি গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন।

-আনন্দবাজার পত্রিকা

Walton Refrigerator cables
Walton Refrigerator cables