
ফাইল ছবি
২৮ জুলাই, বিশ্ব হেপাটাইটিস দিবস। অন্য দেশের মতো বাংলাদেশেও এ দিবস পালিত হচ্ছে। এ বছরের প্রতিপাদ্য : ‘আসুন এটি ভেঙে ফেলি (লেটস ব্রেক ইট ডাউন)’।স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের ভাষ্য, বাংলাদেশে অনুমিত হেপাটাইটিস আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা প্রায় ৮৫ লাখ।
এর মধ্যে ৯০ শতাংশই জানে না তারা এই ভাইরাসে আক্রান্ত। অনেক ক্ষেত্রে আক্রান্ত ব্যক্তি তখনই জানতে পারে, যখন রক্তদান করতে যায় বা কোনো জটিল অসুস্থতার জন্য হাসপাতালে ভর্তি হয়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশের মোট জনসংখ্যার ২ থেকে ৫ শতাংশ হেপাটাইটিস-বি ও ১ শতাংশ হেপাটাইটিস-সি ভাইরাসে আক্রান্ত। লিভার সিরোসিসের ৩০ শতাংশ এবং লিভার ক্যান্সারের ১৭ শতাংশ হেপাটাইটিস-সি ভাইরাসজনিত।
বিশ্বব্যাপী ক্যান্সার তথ্য পরিসংখ্যান সংস্থা গ্লোবোক্যানের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রতিবছর লিভার ক্যান্সারে নতুন করে আক্রান্ত হয় প্রায় তিন হাজার ২২৮ জন। এর মধ্যে তিন হাজার ৬৯ জনের মৃত্যু হয়। এ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের ৬৬ শতাংশই হেপাটাইটিস-বি ভাইরাসে সংক্রমিত। বাকি অংশ আক্রান্ত হয় হেপাটাইটিস-সি ও অন্যান্য ভাইরাসজনিত কারণে।
দিবসটি উপলক্ষে এক বাণীতে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, স্বাস্থ্য খাতের টেকসই সংস্কারের মাধ্যমে জনগণের দোরগোড়ায় সুলভ ও মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার বদ্ধপরিকর। তিনি বলেন, ২০৩০ সালের মধ্যে হেপাটাইটিস নির্মূলের লক্ষ্যে সরকার নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। তবে এ লক্ষ্য অর্জনে সমন্বিত প্রচেষ্টার বিকল্প নেই।
বাংলাদেশে হেপাটাইটিস সংক্রমণের বিস্তার ও এর পেছনের কারণ অনুসন্ধানে ২০২২ সালে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল এবং নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) যৌথভাবে একটি গবেষণা করে। তাতে হেপাটাইটিস ও লিভার ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীদের ওপর করা ২২৫টি প্রবন্ধ বিশ্লেষণ করে ৩৩টি প্রবন্ধ চূড়ান্তভাবে মূল্যায়ন করা হয়।
গবেষণায় দেখা যায়, ২৫ বছরের বেশি বয়সীদের মধ্যে সংক্রমণের হার ১.২৫ গুণ বেশি। যদিও তরুণদের মধ্যে টিকাদানের আওতা বেশি ছিল, তার পরও শিশু ও তরুণদের মধ্যে সংক্রমণের উচ্চ হার দেখা গেছে। এর পেছনে রয়েছে—মায়ের কাছ থেকে সন্তানের মধ্যে সংক্রমণ, অনিরাপদ যৌন কার্যকলাপ এবং ইনজেকশনের মাধ্যমে মাদক গ্রহণ।
এ ছাড়া দীর্ঘমেয়াদি ডায়ালিসিস নেওয়া কিডনি রোগীদের মধ্যে হেপাটাইটিস সংক্রমণের হার সাধারণ জনগণের চেয়ে অনেক বেশি। গবেষণা অনুযায়ী, ডায়ালিসিস রোগীদের মধ্যে হেপাটাইটিস-সি ভাইরাসে সংক্রমণের হার ১০ থেকে ১৫ শতাংশ; যেখানে সাধারণ জনগণের মধ্যে এই হার ০.৫ থেকে ১ শতাংশ। অন্যদিকে হেপাটাইটিস-বি ভাইরাসে সংক্রমণের হার ডায়ালিসিস রোগীদের মধ্যে ২ থেকে ৬ শতাংশ এবং সাধারণ জনগোষ্ঠীর মধ্যে ৪ থেকে ৫ শতাংশ।
আক্রান্ত মায়ের নবজাতককে জন্মের ১২ ঘণ্টার মধ্যে হেপাটাইটিস-বি টিকা দেওয়া আবশ্যক। আক্রান্ত ব্যক্তির পরিবারের সদস্যদের রক্ত পরীক্ষা করাতে হবে। পরীক্ষা, টিকাদান ও সচেতনতার পাশাপাশি হেপাটাইটিস আক্রান্তদের ক্ষেত্রে কর্মক্ষেত্রে বৈষম্য দূর করতে হবে।