
ফাইল ছবি
দেশে বেকার জনগোষ্ঠীর সংখ্যা বেড়েছে। ২০২৪ সালের শেষে দেশে মোট বেকার জনগোষ্ঠীর সংখ্যা বেড়ে ২৬ লাখ ২০ হাজার হয়েছে বলে জানায় বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)। অন্যদিকে ২০২৩ সালে দেশে মোট বেকার ছিল ২৪ লাখ ৬০ হাজার জন। সেই হিসেবে এক বছরে বেকার বেড়েছে ১ লাখ ৬০ হাজার।
রোববার শ্রমশক্তি জরিপ-২০২৪ প্রকাশ করেছে বিবিএস। প্রকাশিত জরিপ অনুযায়ী, দেশে পুরুষ বেকারের সংখ্যা ১৮ লাখ, অন্যদিকে নারী ৮ লাখ ২০ হাজার। দেশে বেকারের হার বেড়ে ৩ দশমিক ৬৫ শতাংশ হয়েছে, গত বছর একই সময়ে যা ছিল ৩ দশমিক ৩৫ শতাংশ। দেশে পুরুষ বেকারের হার ৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ
এব নারী বেকারের হার ৩ দশমিক ৪৬ শতাংশ। ১৩তম আইসিএলএস অনুযায়ী এই তথ্য দেখা গেছে। এ ক্ষেত্রে যারা বিগত সাত দিন সময়ে কমপক্ষে ১ ঘণ্টা মজুরি বা মুনাফার বিনিময়ে অথবা খানার নিজস্ব ভোগের জন্য পণ্য উৎপাদনমূলক কাজ করেছেন, তারাই মূলত আইএলওর ১৩তম গাইডলাইন অনুযায়ী কর্মে নিয়োজিত হিসেবে বিবেচিত হবেন। যারা বিগত সাত দিন সময়ে কমপক্ষে ১ ঘণ্টা মজুরি বা মুনাফার বিনিময়ে কাজ করেছেন, তারাই মূলত আইএলওর ১৯তম গাইডলাইন অনুযায়ী কর্মে নিয়োজিত হিসেবে বিবেচিত।
সাধারণত যারা শুধুমাত্র নিজেদের ভোগের জন্য কাজ করেন তাদেরকে আইএলওর ১৩তম গাইডলাইন হিসেবে কর্মে নিয়োজিত ধরা হয়, আর যারা মজুরি বা মুনাফার জন্য কাজ করেন, তাদেরকে আইএলওর ১৯তম গাইডলাইন হিসেবে কর্মে নিয়োজিত ধরা হয়।
দেশে কর্মে নিয়োজিত বা শ্রমশক্তিতে অংশগ্রহণকারী মানুষের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। ফলে বেড়েছে বেকার মানুষের সংখ্যা। বছরের শুরুতে বেকার মানুষের সংখ্যা কম থাকলেও বছর শেষে ধারবাহিকভাবে বেড়েছে। এতে বছরের ব্যবধানে দেশে বেকার মানুষের সংখ্যা বেড়েছে ১ লাখ ৬০ হাজার। এই সময়ে কৃষি, সেবা এবং শিল্প সবখাতেই কমেছে কর্মে নিয়োজিত জনগোষ্ঠী। নারীর চেয়ে উল্লেখযোগ্য হারে পুরুষ বেকারের সংখ্যা বেড়েছে বেশি।
কমেছে কর্মক্ষম মানুষের সংখ্যা : দেশে বর্তমানে কর্মক্ষম মানুষের সংখ্যা কমে ৭ কোটি ১৭ লাখ ৩০ হাজার, ২০২৩ সালে যা ছিল ৭ কোটি ৩৪ লাখ ৫০ হাজার। ফলে কর্মক্ষম মানুষের সংখ্যা কমেছে ১৭ লাখ ২০ হাজার জন। পুরুষ ও নারী শ্রম শক্তি কমেছে। দেশে সব থেকে বেশি মানুষ কাজ করেন কৃষি খাতে। এর পরই রয়েছে সেবা ও শিল্প খাত। দেশে যুব শ্রম শক্তি ২ কোটি ২৬ লাখ, ২০২৩ সালে যা ছিল ২ কোটি ৬৭ লাখ। ফলে এক বছরে দেশে যুব শ্রম শক্তিও কমেছে।
আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) নিয়ম অনুসারে, বেকার জনগোষ্ঠী মূলত তারাই যারা গত সাত দিনের মধ্যে মজুরির বিনিময়ে এক ঘণ্টা কাজ করার সুযোগ পাননি এবং গত এক মাস ধরে কাজ খুঁজেছেন, কিন্তু মজুরির বিনিময়ে কোনো কাজ পাননি। তারা বেকার হিসেবে গণ্য হবেন। বিবিএস এই নিয়ম অনুসারেই বেকারের হিসাব দিয়ে থাকে। তবে বিবিএস এবার দুইভাবে শ্রম শক্তি জরিপ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
এ বিষয়ে বিবিএস জানিয়েছে, শ্রম শক্তির তৃতীয় প্রান্তিকের ফলাফলটি ১৩তম এবং ১৯তম আইসিএলএস (পরিসংখ্যানবিদদের আন্তর্জাতিক সম্মেলন) অনুযায়ী তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। আইএলও প্রণীত ১৩তম এবং ১৯তম আইসিএলএসে কর্মে নিয়োজিত প্রাক্কলনে পার্থক্য রয়েছে।
বিবিএস জানায়, শ্রমশক্তি জরিপে ১৫ বছর ও তদূর্ধ্ব বয়সী পুরুষ-মহিলা এবং শহর-পল্লী অঞ্চল অনুযায়ী জাতীয় পর্যায়ে শ্রম বাজারের সূচকসমূহ ত্রৈমাসিকভিত্তিতে প্রাক্কলন করা হয়। দেশব্যাপী ১ হাজার ২৮৪টি নির্বাচিত নমুনা এলাকায় দৈবচয়নের ভিত্তিতে ২৪টি করে সর্বমোট ৩০ হাজার ৮১৬টি খানা থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়। দেশের ৬৪টি জেলায় ১০৭ জন (মহিলা ৫৭ জন এবং পুরুষ ৫০ জন) প্রশিক্ষিত তথ্য সংগ্রহকারীর মাধ্যমে মাঠপর্যায়ে তথ্য সংগ্রহ করা হয়। এ জরিপের মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্য হতে শ্রমশক্তি, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার সূচকসমূহের অগ্রগতি, অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার অগ্রগতি নির্ণয়ক সূচক এবং সর্বোপরি জাতীয় শ্রমশক্তির সুষ্ঠু ব্যবহার ও কর্মসংস্থান এবং বেকারত্ব নিরসনে পরিকল্পনা প্রণয়ন সম্ভব হবে। এ ছাড়া লিঙ্গভিত্তিক কর্মসংস্থান, বেকারত্ব, শ্রম অভিবাসন ব্যয়, খাত এবং পেশাভেদে শ্রমশক্তি, প্রাতিষ্ঠানিক এবং অ-প্রাতিষ্ঠানিক কর্মসংস্থান, কর্মঘণ্টা এবং মজুরি সংক্রান্ত পরিসংখ্যান প্রস্তুত করা হয় এর মাধ্যমে। শ্রমবাজারের মৌসুমভিত্তিক তারতম্য সংশ্লিষ্ট তথ্যাদিও পাওয়া যায়।