Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

বৈশাখ ১০ ১৪৩১, বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪

ফুলে ফুলে ছেয়ে গেছে গদখালী

কাজী রকিবুল ইসলাম, নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২২:৪৮, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

প্রিন্ট:

ফুলে ফুলে ছেয়ে গেছে গদখালী

-গদখালীর ফুল বাগান থেকে তুলে রাখা হয়েছে বিক্রির জন্য

ফুলে ফুলে ছেয়ে গেছে ফুলের রাজধানী যশোরের গদখালী। বিশ্ব ভালোবাসা দিবস ও পয়লা ফাল্গুনকে সামনে রেখে যশোরের গদখালি ফুলের বাজার জমজমাট। সব ফুলেরই চাহিদা থাকলেও গোলাপ বাজিমাত করেছে। এবার গোলাপের পাইকারি দামে রেকর্ড ভেঙ্গেছে। চাহিদা থাকায় এদিন রেকর্ড পরিমাণ দামে গোলাপ বিক্রি হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাজারের ব্যবসায়ীরা। প্রতিটি গোলাপ ১৫ থেকে ২৫ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে। পাইকারি বাজারে গোলাপের এত দাম এর আগে কখনও উঠেনি।

শুধুমাত্র রোববার একদিনেই এক কোটি টাকার গোলাপ কেনাবেচা হয়েছে গদখালীর পাইকারি ফুলের বাজারে। পাশাপাশি গ্লাডিওলাস, জারবেরা ও রজনীগন্ধা ফুলের দামও চড়া। ব্যবসায়ীরা বলছেন, দিবস দুটি ঘিরে এই অ লের চাষিরা গত একসপ্তাহে প্রায় ৩০ কোটি টাকার ফুল বিক্রি করেছেন। এবার চড়ামূল্যে ফুল বিক্রি করতে পারায় গত দুই বছরের করোনা আর প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারবেন বলে ফুলচাষিরা আশাবাদী।

ভোর থেকেই সরব হয়ে ওঠে গদখালীর পাইকারি বাজার। বাইসাইকেল, মোটরসাইকেল, ভ্যান- যে যেভাবে পারছেন, নানান জাতের ফুল নিয়ে গদখালী পাইকারি ফুলের মোকামে হাজির হন। যশোর-বেনাপোল মহাসড়কের পাশে গদখালী বাজার ভোর সাড়ে ৫টা থেকে শুরু হয়। ৭টা নাগাদ হাট জমজমাট হয়ে ওঠে। উত্তরবঙ্গের বগুড়া, রাজশাহী, গোপালগঞ্জ, পাবনাসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে বেপারিরা ফুল কিনতে এ বাজারে আসেন। ফুলচাষি ও বেপারিদের পদচারনায় মুখর হয়ে উঠে গোটা প্রাঙ্গণ। ফুল কিনে বেপারিরা বাসের ছাদে, ইঞ্জিনচালিত আলমসাধু ও পিককাপে করে বিভিন্ন জেলায় পাঠিয়ে দেন। ১০টার মধ্যে হাটের কেনাবেচা শেষ হয়ে যায়।

দিবস দুটির আগে রবিবার ছিল সবচেয়ে বড় হাট। এই হাটে সবচেয়ে বেশি দেখা গেছে গোলাপ চাষি। ভালোবাসা দিবস ও বসন্ত বরণ উৎসবে গদখালীর গোলাপ সারাদেশে সৌরভ ছড়াবে। গদখালীর ফুলচাষি ও ফুল ব্যবসায়ি কল্যাণ সমিতি সূত্রে জানা গেছে, একদিনেই গদখালী বাজার ও গোলাপের খেত থেকে অন্তত ১০ লাখ গোলাপ সারাদেশে পাঠানো হয়েছে। অন্তত ৫০০ ফুলচাষি গোলাপ ফুল নিয়ে মোকামে আসেন।

সৈয়দপুর এলাকার ফুলচাষি আব্দুর কাদের বলেন, ৩০ বছর ধরে নানান জাতের ফুল চাষ করেছি। সবচেয়ে বেশি চাষ করেছি গোলাপ। সেই প্রথম থেকেই বসন্ত আর ভালোবাসা দিবসে গোলাপের দাম থাকে দ্বিগুণ। তবে গোলাপ কখনোই ১৫ টাকার বেশি হয়নি। এবার রেকর্ড ২৫ টাকা পর্যন্ত গোলাপ বিক্রি করেছি। আর চায়না গোলাপ ৪০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করেছি। এই দামে সব কৃষকই লাভবান হবে। গদখালি এলাকার ফুলচাষি ও ব্যবসায়ী সেলিম রেজা বলেন, বিশ্ব ভালোবাসা দিবসের আগে গদখালী বাজারে বরাবরই গোলাপের চাহিদা বেশি থাকে। কৃষকদেরও বাড়তি প্রস্তুতি থাকে। চলতি বছরের মধ্যে আজ এই বাজারে সবচেয়ে বেশি গোলাপ ফুল উঠেছে। দামও চড়া।

ক্যাপ ছাড়া প্রতিটি গোলাপ ২০ থেকে ২৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। পাইকারি বাজারে গোলাপের এত দাম এর আগে কখনও পাওয়া যায়নি। সালাম হোসেন বলেন, এ সময় গোলাপ ও জারবেরা ফুলের চাহিদা বেশি থাকে। তরুণীরা চুলের খোপায় পরার জন্যে জারবেরা ফুল পছন্দ করেন। এজন্য জারবেরাসহ অন্যান্য ফুলের চাহিদাও রয়েছে।
ফুলের বেপারি আল আমিন বলেন, ২৫ টাকা দরে প্রতিটি গোলাপ (ক্যাপ ছাড়া) বিক্রি করছেন। ক্যাপসহ গোলাপ বিক্রি করছেন ১৫ টাকা দরে। ৫ দিন আগেও গোলাপের পাইকারি দাম ছিল প্রায় অর্ধেক। আগামী দুদিন এমন চড়া দাম থাকবে। গতকাল প্রতিটা জারবেরা ১০ থেকে ১৫, রজনীগন্ধা ১২ টাকা, গ্লাডিওলাস ১৪ থেকে ১৮, জিপসি প্রতিমুঠো ৫০ ও কামিনী পাতা প্রতি মুঠো ২০ টাকা দরে পাইকারি বেচাবিক্রি হয়েছে। এছাড়া গাদা ফুল প্রতি হাজার ২০০ থেকে ৩০০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।

যশোর ফুল উৎপাদক ও বিপনন সমবায় সমিতির সভাপতি আব্দুর রহিম বলেন, বিশ্ব ভালোবাসা দিবস ও পয়লা ফাল্গুন ঘিরে গত ৫ দিনে ঝিকরগাছার গদখালী ফুল বাজার ও পানিসারা এলাকা থেকে অন্তত তিন কোটি টাকার গোলাপ ফুল সারাদেশে পাঠানো হয়েছে। এরমধ্যে রবিবার অন্তত কোটি টাকা মূল্যের প্রায় ১০ লাখ গোলাপ পাঠানো হয়েছে। এছাড়া দিবস দুটি ঘিরে এই অ লের চাষিরা গত এক সপ্তাহে প্রায় ৩০ কোটি টাকার ফুল বিক্রি করেছে। রেকর্ড দামে গোলাপ বিক্রি করতে পেরে খুশি এই অ লের গোলাপ চাষিরা। বিগত কয়েকটি দুর্যোগ কাটিয়ে উঠতে পারবে দাবি ফুলচাষি নেতার। যশোর জেলার ১২টি ইউনিয়নে ১২০০ থেকে ১৫০০ হেক্টর জমিতে ফুল চাষ হয়। এ অ লের ৬ হাজার চাষি ফুল উৎপাদন করেন। সারাদেশের চাহিদার প্রায় ৬৫ শতাংশ ফুল যশোরের গদখালি থেকে সরবরাহ করা হয়।

Walton Refrigerator Freezer
Walton Refrigerator Freezer