Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

আষাঢ় ২৭ ১৪৩২, শনিবার ১২ জুলাই ২০২৫

ইরানে ‘আরও জোরালো’ হামলার হুমকি ইসরায়েলের

বহুমাত্রিক ডেস্ক

প্রকাশিত: ২২:২৪, ১১ জুলাই ২০২৫

প্রিন্ট:

ইরানে ‘আরও জোরালো’ হামলার হুমকি ইসরায়েলের

ফাইল ছবি

ইরানে আবার হামলা চালানোর হুমকি দিয়েছে ইসরায়েল। দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, এবার হামলায় আরও বেশি শক্তি প্রয়োগ করা হবে। বৃহস্পতিবার ইসরায়েলি বিমানবাহিনীর একটি অনুষ্ঠানে এ কথাগুলো বলেন তিনি। কাৎজ এমন সময়ে এ বক্তব্য দিলেন, যখন ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধবিরতি চলছে।

ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিবৃতি অনুযায়ী, বিমানবাহিনীর অনুষ্ঠানে কাৎজ বলেন, ‘আপনারা যদি ইসরায়েলকে হুমকি দেন বা ক্ষতি করার চেষ্টা করেন, তাহলে ইসরায়েলের লম্বা হাত তেহরান, তাবরিজ, ইসফাহান—যেকোনো জায়গায় আপনাদের কাছে পৌঁছে যাবে। আমাদের যদি ফিরতে বাধ্য করা হয়, তাহলে আরও শক্তি নিয়ে ফিরব।’

গত ১৩ জুন ইরানে আকস্মিক হামলা চালায় ইসরায়েল। এর পর থেকে দুই দেশের মধ্যে পাল্টাপাল্টি হামলা চলছিল। এরই মধ্যে ২১ জুন ইরানের তিনটি পরমাণু স্থাপনায় হামলা চালায় যুক্তরাষ্ট্র। উত্তপ্ত এই পরিস্থিতির মধ্যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় ২৪ জুন যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয় ইরান–ইসরায়েল। এর পর থেকে দুই দেশের মধ্যে আর হামলার ঘটনা ঘটেনি।

ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের মাথাব্যথা মূলত ইরানের পরমাণু প্রকল্পগুলো নিয়ে। প্রকল্পগুলো শান্তিপূর্ণ কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে বলে ইরান দাবি করলেও, যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের অভিযোগ পরমাণু অস্ত্র তৈরির দিকে এগোচ্ছে তেহরান। সম্প্রতি হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প বলেছিলেন, ইরান আবার পরমাণু অস্ত্র তৈরির দিকে এগোল, দেশটির নতুন করে হামলা চালাবে ওয়াশিংটন।

ইসরায়েল কাৎজের এমন হুঁশিয়ারির দিন বৃহস্পতিবারই ইরানের পরমাণু প্রকল্পগুলো নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম দ্য নিউইয়র্ক টাইমস। তাতে বলা হয়েছে, গত মাসে যুক্তরাষ্ট্রের বোমা হামলার পরও তেহরানের কাছে কিছু সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম রয়ে গেছে বলে ধারণা করছে ইসরায়েল। এসব ইউরেনিয়াম পরমাণু অস্ত্র তৈরিতে ব্যবহৃত হওয়ার আশঙ্কা করছে দেশটি।

২১ জুন ইরানের ফর্দো, ইসফাহান ও নাতাঞ্জ পরমাণু স্থাপনায় হামলা চালায় যুক্তরাষ্ট্র। ট্রাম্প শুরু থেকেই দাবি করে আসছেন, ওই হামলায় তিনটি পারমাণবিক স্থাপনাই ‘পুরোপুরি ধ্বংস’ হয়ে গেছে। এরই মধ্যে গত সপ্তাহে মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তরের মুখপাত্র শন পারনেল সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিকে এক থেকে দুই বছর পেছনে ঠেলে দিয়েছি।’

ইসরায়েলের সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, হামলায় ইরানের পরমাণু কেন্দ্রে থাকা ১৮ হাজার সেন্ট্রিফিউজের বেশির ভাগই ধ্বংস হয়ে গেছে। তবে ৬০ শতাংশ মাত্রায় সমৃদ্ধ সব ইউরেনিয়াম নষ্ট হয়নি। কিছু ইউরেনিয়াম এখনো ইরানি বিজ্ঞানীরা ব্যবহার করতে পারবেন। ইসরায়েলের এক কর্মকর্তা হুঁশিয়ার করে বলেন, কেউ যদি সেই ইউরেনিয়াম সংগ্রহের চেষ্টা করে, তবে ইসরায়েল আবার হামলা চালাবে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে নিউইয়র্ক টাইমসকে ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, ইসরায়েলের বিশ্বাস, ১০ মাস আগে হিজবুল্লাহ নেতা হাসান নাসরাল্লাহ নিহত হওয়ার পর ইরান জোরেশোরে পরমাণু বোমা বানানোর চেষ্টা চালাচ্ছে। এ–সংক্রান্ত প্রমাণ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা করা হয়। এরপর ১৩ জুন ইরানের ওপর হামলা চালানোর পরিকল্পনাকে এগিয়ে নেয় ইসরায়েল।

ইরানে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের হামলার জেরে জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার (আইএইএ) সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ হয় তেহরানের। এরই মধ্যে বৃহস্পতিবার সংস্থাটি পক্ষপাতদুষ্ট বলে অভিযোগ করেছেন ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান। তিনি বলেছেন, ইরানের পরমাণু প্রকল্পগুলো নিয়ে আইএইএ কাজ করতে চাইলে তাদের ‘দ্বিমুখী নীতি’ ত্যাগ করতে হবে।

ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, বৃহস্পতিবার ইউরোপীয় কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট আন্তোনিও কস্তার সঙ্গে ফোনালাপে এ কথা বলেন ইরানের প্রেসিডেন্ট। হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি আরও বলেন, ইরানের বিরুদ্ধে যদি আবারও আগ্রাসন চালানো হয়, তার জবাব আরও ‘দৃঢ়ভাবে’ দেবে তেহরান। এর আগে গত সপ্তাহে ইরানে আইএইএর কার্যক্রম স্থগিত করা নিয়ে একটি আইনে সই করেছিলেন পেজেশকিয়ান।