Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

বৈশাখ ১২ ১৪৩১, শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪

রমনার বটমূলে বর্ষবরণ অনুষ্ঠান চলছে

বহুমাত্রিক ডেস্ক

প্রকাশিত: ০৯:৪০, ১৪ এপ্রিল ২০২৩

প্রিন্ট:

রমনার বটমূলে বর্ষবরণ অনুষ্ঠান চলছে

ছবি- সংগৃহীত

ভোর ৬টা ১৫ মিনিট। নতুন সূর্যের সোনালি আলোর ঝিলিক সবেমাত্র পড়তে শুরু করেছে রমনার বটমূলে, ঠিক তখনই সুরের মূর্ছনায় শুরু হয় বর্ষবরণের অনুষ্ঠান। বাংলা নববর্ষ ১৪৩০-কে স্বাগত জানিয়ে শুরুতেই পরিবেশন করা হয় আট মিনিটের ‘আহির ভৈরব সুরের সারেঙ্গি বাদন’।

শুক্রবার বর্ষবরণের (পহেলা বৈশাখ) অনুষ্ঠানের শুরুতেই সংগীত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছায়ানটের শিল্পীদের সুর মুহূর্তেই ছড়িয়ে দেয় মুগ্ধতা। এরপর শুরু হয় আবহমান বাংলার ঐতিহ্যবাহী পালাগান। এর ফাঁকে ফাঁকে চলছে শিল্পীদের একক কণ্ঠে গান ও আবৃত্তি।

ছায়ানট সূত্রে জানা যায়, বাংলা নববর্ষকে স্বাগত জানাতে চলতি বছর ১০টি সম্মিলিত গান, ১১টি একক গান, দুটি আবৃত্তি এবং সবশেষে জাতীয় সংগীতে সাজানো হয়েছে অনুষ্ঠানমালা। আর আয়োজনটিতে নতুন স্নিগ্ধ আলোয় স্নাত প্রকৃতি, মানবপ্রেম, দেশপ্রেম, আত্মবোধন আর জাগরণের সুরবাণীর বার্তা দেয়া হয়েছে। অনুষ্ঠানটি সরাসরি সম্প্রচার করছে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেল, বাংলাদেশ বেতারসহ বেসরকারি রেডিও চ্যানেলগুলো। পাশাপাশি ছায়ানটের ইউটিউব চ্যানেলেও সরাসরি দেখানো হচ্ছে অনুষ্ঠানটি।

এদিকে ভোর থেকেই রাজধানীসহ আশপাশের এলাকার মানুষ জড়ো হতে থাকেন রমনার বটমূলে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে মানুষের ভিড়। বর্ষবরণের অনুষ্ঠান ঘিরে রমনা পার্ক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ আশপাশের এলাকায় জোরদার করা হয়েছে নিরাপত্তা ব্যবস্থা। নিয়োগ করা হয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অতিরিক্ত সদস্য। এ ছাড়া সেখানে কাজ করছেন ছায়ানটকর্মী, স্বেচ্ছাসেবী, লাউড ওয়ার্কস ও থার্টিন্থ হুসার্স ওপেন রোভার গ্রুপের নির্বাচিত সদস্যরা।

উল্লেখ্য, রবীন্দ্র জন্মশতবার্ষিকীকে কেন্দ্র করে ১৯৬১ সালে পাকিস্তানি আমলের বৈরী পরিবেশে যাত্রা শুরু হয় ছায়ানটের। জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে বাঙালির নিজ সত্তা ও সংস্কৃতি আঁকড়ে ধরে বাঁচার অধিকার প্রতিষ্ঠাই ছিল ছায়ানটের মূল লক্ষ্য। তারই পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৬৭ সালে রমনার বটমূলে প্রথমবারের মতো বাংলা নববর্ষের প্রথম দিনে সংগীতানুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল ছায়ানট। পরবর্তী সময়ে সেই অনুষ্ঠান নববর্ষ বরণের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে ওঠে।

পহেলা বৈশাখের আগের দিন বাংলার চিরায়ত উৎসব চৈত্রসংক্রান্তি। এ দিনটিতে জীর্ণ পুরাতন সবকিছু ভেসে যাক, ‘মুছে যাক গ্লানি’ - এভাবে বিদায়ী সূর্যের কাছে আহ্বান জানায় বাঙালি। পরদিন সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় বাংলা নববর্ষের প্রথম দিন পহেলা বৈশাখ।

পহেলা বৈশাখ আমাদের সকল সংকীর্ণতা, কূপমণ্ডূকতা পরিহার করে উদারনৈতিক জীবনব্যবস্থা গড়তে উদ্বুদ্ধ করে। আমাদের মনের ভেতরের সকল ক্লেদ, জীর্ণতা দূর করে আমাদের নতুন উদ্যমে বাঁচার অনুপ্রেরণা দেয়। আমরা যে বাঙালি, বিশ্বের বুকে এক গর্বিত জাতি, পহেলা বৈশাখের বর্ষবরণে আমাদের মধ্যে এ স্বাজাত্যবোধ এবং বাঙালিয়ানা নতুন করে প্রাণ পায়, উজ্জীবিত হয়।

অন্যদিকে পহেলা বৈশাখ বাঙালির একটি সার্বজনীন লোক-উৎসব। দেশজুড়ে আনন্দঘন পরিবেশে বরণ করে নেয়া হয় নতুন বছরকে। মূলত কল্যাণ ও নতুন জীবনের প্রতীক হলো নববর্ষ। অতীতের ভুলত্রুটি ও ব্যর্থতার গ্লানি ভুলে নতুন করে সুখ-শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনায় উদ্‌যাপিত হয় নববর্ষ।

Walton Refrigerator Freezer
Walton Refrigerator Freezer