
যশোর : বৃহস্পতিবার যশোরে শুরু হয়েছে তাবলীগ জামায়াতের তিন দিনের আঞ্চলিক জোড় ইজতেমা। যশোর শহরতলীর উপশহর মাঠ ও তৎসংলগ্ন মাঠে এ জোড় ইজতেমায় উলামা মাশায়েখ ও তাবলীগের পুরাতন সাথীরা ছাড়াও বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানের শীর্ষ মুরব্বীরা অংশ নিয়েছেন।
ইজতেমার আদলে আয়োজিত এ জোড় ইজতেমায় যশোরসহ তার আশপাশ এলাকার লাখো ধর্মপ্রাণ মুসল্লীরা অংশ নিচ্ছেন বলে আয়োজকরা জানিয়েছেন।
জোড় ইজতেমার মাঠের জিম্মাদার মাওলানা নাসির উল্লাহ জানান, ইতোমধ্যে ইজতেমার মাঠ প্রস্তুত করা হয়েছে। গত এক মাস ধরে তাবলীগের সাথীরা ছাড়াও উপশহর এলাকায় শত শত ধর্মপ্রাণ মুসল্লী স্বেচ্ছায় কাজ করছেন। তিনি জানা, ইতোমধ্যে উপশহর কলেজ মাঠসহ আশপাশ এলাকাজুড়ে বিশাল প্যান্ডেল তৈরি করা হয়েছে। তাবলীগের এ জোড় ইজতেমায় যারা অংশ নিচ্ছেন তাদের জন্য প্যান্ডেলের আশপাশে সুপেয় পানি ও টয়লেটের সুব্যবস্থা রাখা হয়েছে। আজ বৃহস্পতি, শুক্র ও শনিবার আয়োজিত এ জোড়ে যশোর ও তার আশপাশের বিভিন্ন জেলার উলামা ও তাবলীগের পুরাতন সাথীরা অংশ নেবেন।
মাওলানা নাসিরুল্লাহ বলেন, তিন দিনের এ জোড় ইজতেমায় বাংলাদেশ ছাড়া ভারত-পাকিস্তানের মোট ২০ জন শীর্ষ মুরব্বী অংশ নেবেন। বুধবারের রাতের মধ্যে তারা ইজতেমা মাঠে এসে পৌছেছেন। শীর্ষ এই ২০ জন মুরব্বীর মধ্যে একজন বৃহস্পতিবার ফজরের নামাজের পর আম বয়ানের মাধ্যমে জোড় ইজতেমা শুরু করবেন। তিনি বলেন, ইজতেমাকে সুস্থভাবে সম্পন্ন করতে জেলা পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে সার্বিক সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন। ৬০০ পোশাকধারী পুলিশসহ সাদা পোশাকের বিপুল সংখ্যক পুলিশ সদস্য নিরাপত্তায় নিয়োজিত থাকবেন বলে পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। জেলা ও পুলিশ প্রশাসনের শীর্ষ কর্মর্তারা প্রতিনিয়ত যোগাযোগ রাখছেন বলে তিনি জানান।
আয়োজকরা জানান, বুধবার থেকে উলামা ও পুরাতন সাথীরা ছাড়াও সারাদেশের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক জামাত ইজতেমা মাঠে উপস্থিত হতে শুরু করেছে। এসব সাথীদের থাকা-খাওয়া নিরবিচ্ছিন্ন ও নিরাপদ করতে সব প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। ইজতেমায় বিদেশী মেহমানদের থাকার আলাদা জায়গা রাখা হয়েছে। জোড় ইজতেমা মাঠে শুক্রবার জুমার দিনে বড় জামাত অনুষ্ঠিত হবে। ৭ নভেম্বর শনিবার আখেরি মোনাজাতের মাধ্যমে তিনদিনের এ জোড় ইজতেমা শেষ হবে। আখেরি মোনাজাতে লক্ষাধিক ধর্মপ্রাণ নর-নারী অংশ নেবেন বলে আয়োজকরা জানান। আখেরি মোনাজাত শেষে ৬০০টি তাবলিগের বিভিন্ন চিল্লার জামাত সারাদেশে দাওয়াতী কাজে বের হবেন।
আয়োজকরা আরো জানান, ইজতেমার জন্যে প্রায় ৭লাখ বর্গফুট জায়গা প্রস্তুত করা হচ্ছে। গোটা মাঠ ত্রিপল ও চট দিয়ে ঢেকে দেয়া হয়েছে। এখানে দুই হাজার টয়লেট ও শ’খানেক টিউবওয়েল স্থাপন করা হয়েছে।
খুলনা বিভাগের দশ জেলা, ফরিদপুর, রাজবাড়ী, গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর, শরিয়তপুর, রাজশাহী, চাপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ, নাটোর ও পাবনা জেলা থেকে মুরুব্বিরা ইজতেমায় আসবেন। আশা করা যায়, প্রায় দু’লাখ মানুষের সমাগম ঘটবে ইজতেমায়।
উপশহর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এহসানুর রহমান লিটু জানান, উপশহর মাঠে জোড় ইজতেমায় আমাদের পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতা দেয়া হচ্ছে। উপশহর ইউনিয়ন বাসীর পক্ষ থেকে ১ হাজারেরও বেশি স্বেচ্ছাসেবক সার্বিকভাবে দায়িত্বপালন করবেন। তিনি আরো জানান, তাবলীগের এ জোড় চলাকালীন তিন দিন যাতে কোনপ্রকার দ্রব্যমূল্যের দাম বৃদ্ধি না করে সে জন্য আশপাশের বাজারের ব্যবসায়ীদের জানিয়ে দেয়া হয়েছে। কোনো ব্যবসায়ী অতিরিক্ত দাম বাড়ালে তাৎক্ষনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমাদের আস্বস্থ করা হয়েছে।
যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তৌহিদুল ইসলাম জানান, যশোরে ইজতেমা হচ্ছে বেশ কয়েকটা ভেন্যুতে। আমরা প্রত্যেক ভেন্যুর ভেতরে ও বাইরে উভয় ক্ষেত্রে নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করছি। সেক্ষেত্রে নরমাল ফোর্স ও সিভিল ড্রেসে ফোর্স থাকবে। সে কারণে সাতক্ষীরা ও ঝিনাইদহ থেকে ফোর্স আনা হচ্ছে। এছাড়া ইজতেমাস্থলের পাশে স্কুলে পুলিশের একটি কন্ট্রোল রুম থাকবে।
বহুমাত্রিক.কম