 
									
																	ঢাকা : সরকারের ডিজিটাল প্রযুক্তির ছোঁয়ায় বদলে গেছে ভোলার মানতা সম্প্রদায়ের ভাসমান জীবন। আধুনিক সোলার প্যানেলের বিদ্যুতের আলোয় পরিবর্তন এসেছে যাযাবর এ জনগোষ্ঠীর জীবনমানের। তারা এখন যেখানে যাচ্ছে, সেখানেই পাচ্ছে বিদ্যুতের আলো।
এর সুবাদে জীবন-জীবিকায়ও লেগেছে উন্নয়নের হাওয়া। নৌকার আঁধার দূর করা ছাড়াও টেলিভিশনে পাচ্ছে দেশ-বিদেশের খবর। পাচ্ছে বিনোদন। ব্যবহার করতে পারছে মোবাইল ফোন। স্থায়ী ঘর-বাড়ি না থাকলেও প্রযুক্তিগত দিক থেকে এখন আর পিছিয়ে নেই এরা। সময়ের আবর্তনে নৌকার ছাওনিতে সোলার প্যানেল এখন প্রতিটি মানতা পরিবারের একটি অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সরেজমিনে ভোলা সদর উপজেলার মেঘনা পাড়ের ধনিয়া স্লুইজ গেইট, কাচিয়া কাঠির মাথা ও রাজাপুর জোড়াখাল এলাকা ঘুরে জানাগেছে, প্রকৃতির উপর নির্ভর করে ৩০বছরের বেশি সময় ধরে ভাসমান নৌকায় জীবন যাপন করছে এখানকার ৩০০ এর বেশি মানতা পরিবার। মূল ভূমিতে এদের ঘর-বাড়ি নেই। আজ এঘাটে তো কাল ওঘাটে। নৌকার বহরের সরদারের নির্দেশে পথচলা। রঙ-বেরঙের ছইয়ে ছোট ছোট নৌকার ঘরে এদের সংসার। মূলত মাছ ধরাই এদের প্রধান পেশা। সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে সমাজ ব্যবস্থা পরিবর্তন হলেও এদের জীবনে আসেনি তেমন পরিবর্তন।
এখনো অধিকাংশ মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত এরা। অনেকটাই একঘোয়ে দারিদ্র জীবন। কিন্তু সূর্যের আলোয় সৌর বিদ্যুত প্রান্তিক এ সম্প্রদায়ের একঘেয়ে জীবন অনেকটা পাল্টে দিয়েছে। নৌকায় সৌর-বিদ্যুতের কল্যাণে তাদের রাতের আঁধার দূর হয়েছে। ঘুরছে ফ্যান। ডেক সেটে গান বাজছে। চলছে ছোট আকারে ডিজিটাল টেলিভিশন ও ল্যাপটপ। আর তাদের হাতে হাতে রয়েছে মোবাইল ফোন। একসময় তেলের কুপির আর হেরিকেনের আলোয় নির্ভরশীল এ জনগোষ্ঠী সৌর-বিদ্যুৎ ব্যবহার করে এখন তাদের বিনোদনের মাধ্যম ও আলোর প্রয়োজন মেটাচ্ছেন।
রাজাপুর জোড়া খালে নৌকায় বসবাসকারী মানতা সম্প্রদায়ের বাসিন্দা কামাল সর্দার জানান, একসময় তেল ফুরিয়ে গেলে অথবা ঝড় তুফানে এলে বাতাসে হেরিকেনের আলো নিভে যেত। বাধ্য হয়ে আমাদের অন্ধকারে থাকতে হতো। সৌর বিদ্যুৎ আসাতে যে কোন দুর্যোগপূর্ণ আবহাওযায় আমারা আলো জ্বালিয়ে রাখতে পারি। পাশাপাশি মোবাইলে চার্জ দেয়া, গরমে ফ্যান চালানো যায়। আবার কেউ টিভি ল্যাপটপে গান শুনে।
একই এলাকার অপর বাসিন্দা মিন্টু মোল্লা জানান, সৌর বিদ্যুৎ দিয়ে আমরা আইপিএস চালাই। আইপিএস দিয়ে ডিভিডি, সাউন্ড বক্স, ফ্যানসহ সব কিছু চালাই। উপরের মানুষ যেমন বিদ্যুৎ সুবিধা পায় আমরাও নৌকায় ঠিক একই রকম বিদ্যুৎ ব্যাবহার করছি।
ধনিয়া তুলাতলী স্লুইস গেইটে নৌকায় বসবাসকারী মানতা সম্প্রদায়ের বাসিন্দা ছিদ্দিক হাজী জানান, সোলার থাকায় এখন মোবাইল-ল্যাপটপে আমরা গান শুনি। সারাদিন নদীতে কাজ করে সন্ধ্যায় ল্যাপটপের মাধ্যমে বিভিন্ন মানুষের মোবাইলে গান লোড করে কিছু বাড়তি টাকা আয় হয় বলেও জানান তিনি।
এব্যাপারে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মাসুদ আলম সিদ্দিক বাসস’কে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রূপকল্প ২০২১ বাস্তবায়নের মূল উদ্দেশ্য হলো বাংলাদেশকে ডিজিটাল বাংলাদেশে পরিণত করা। ভাসমান নৌকায় বসবাসকারী মানতা সম্প্রদায় সৌর বিদ্যুৎ ব্যাবহার করে তারা সেখানে লাইট জ্বালাচ্ছে, ফ্যান চালাচ্ছে, এমনকি ল্যাপটপ পর্যন্ত ব্যাবহার করছে। তিনি বলেন, সারাদেশে তৃণমূল পর্যায়ে যে ডিজিটাল বাংলাদেশর ছোঁয়া লেগেছে এটি তার একটি উদাহরণ। এ জনগোষ্ঠীকে এগিয়ে নিতে সরকারের তরফ থেকে সব ধরনের সুযোগ সুবিধা দেয়ার কথা জানান তিনি।
বাসস





 
											 
											 
											 
											 
											 
											 
											