Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

আষাঢ় ২৪ ১৪৩২, বুধবার ০৯ জুলাই ২০২৫

চীন থেকে শিগগিরই আসছে টিকা, প্রথম দফায় আসবে ৫ লাখ

বহুমাত্রিক.ডেস্ক

প্রকাশিত: ০৯:৫২, ১ মে ২০২১

আপডেট: ১২:১৪, ১ মে ২০২১

প্রিন্ট:

চীন থেকে শিগগিরই আসছে টিকা, প্রথম দফায় আসবে ৫ লাখ

করোনা নিয়ন্ত্রণে চীনের সিনোফার্ম উৎপাদিত ‘বিবিআইবিপি-সিওরভি’ টিকা শিগগিরিই দেশে আসছে। বাংলাদেশের চাহিদামতো সিরিঞ্জসহ বা সিরিঞ্জ ছাড়া প্রাথমিকভাবে ৫ লাখ ২ হাজার ৪শ ডোজ টিকা দেশে আসবে। উপযুক্ত বিমানের ব্যবস্থা হলে বেইজিং বিমানবন্দর থেকে যে কোনো দিন এগুলো দেশে আসবে। ২৯ এপ্রিল বৃহস্পতিবার অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) যুগ্ম সচিব ও শাখা প্রধান মো. শাহরিয়ার কাদের সিদ্দিকীকে উল্লেখ করে লেখা এক চিঠিতে এসব তথ্য জানান বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনা দূতাবাসের এক কর্মকর্তা।  

ওই চিঠিতে বলা হয়, বাংলাদেশের জন্য যে টিকা পাঠানোর জন্য বেইজিং বিমানবন্দর ব্যবহার করা হবে। বিশেষ বিমানে টিকাগুলো পাঠানো হবে বাংলাদেশে। তবে এখনো যথাযথ বিমানের ব্যবস্থা করা সম্ভব হয়নি।তাই নিদিষ্ট তারিখ ঘোষণা করা যাচ্ছে না। তবে দেশটির পক্ষ থেকে জানানো হয় খুব দ্রুত বিমানের ব্যবস্থা করে পাঠানোর তারিখ নিশ্চিত করা হবে।

এ টিকার বিষয়ে শহিদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের ভাইরোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. জাহিদুর রহমান বলেন, এটি পুরাতন প্রযুক্তির একটি ইনঅ্যাকটিভেটেড টিকা। ইপিআইর মাধ্যমে প্রতি বছর কোটি কোটি ডোজ ইনঅ্যাকটিভেটেড টিকা আমাদের দেশে ব্যবহার করা হয়।তাছাড়া এ টিকার প্রথম, দ্বিতীয় ধাপের ট্রায়ালে এর নিরাপত্তা এবং কার্যকারিতা প্রমাণিত হয়েছে। বিশ্বের ৫টি দেশে ৫৫ হাজার মানুষের ওপর এ টিকার তৃতীয় ট্রায়াল পরিচালিত হয়েছে। সবমিলে এ টিকা যথেষ্ট কার্যকর হবে বলে আশা করা যায়। 

চীনা দূতাবাসের ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, এ টিকা বাংলাদেশে পাঠানোর জন্য দুই ধরনের প্যাকেজ নির্দিষ্ট করা হয়েছে। এর মধ্যে একটি হলো- প্রতিটি প্যাকেজে তিনটি ডোজ প্যাক করা হবে এবং দ্বিতীয়টি হলো- প্রতিটি প্যাকেজে এক ডোজ করে প্যাক করা হবে।প্যাকেজের সাইজ ও ওজন প্যাকেটের গায়ে লেখা থাকবে। এমনকি প্যাকেজের মোট ভলিউমও সেখানে উল্লেখ থাকবে। যাতে বিমান থেকে নামিয়ে পরিবহণ ব্যবস্থায় স্থানান্তরের সময় এ বিষয়গুলো লক্ষ্য রাখা হয়। 

সেখানে আরও বলা হয়েছে, এ সংক্রান্ত (প্যাকেজিং) পরিপূর্ণ তথ্য উৎপাদন প্রতিষ্ঠান কর্তৃক উৎপাদন ও প্যাকেজিং সম্পন্ন করার পরেই নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। কারণ একটি প্যাকেজে তিন ডোজ প্যাকিংয়ের সুপারিশ করা হয়েছে। এটি শুধু তখনই জানা যাবে, যখন টিকাগুলো উৎপাদন ও সরবরাহ করা হয়। চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, যে টিকাগুলো পাঠানো হবে সেগুলোর সঙ্গে কোনো সিরিঞ্জ দেয়া হবে না। তবে সিরিঞ্জের প্রয়োজন হলে, তাদের লিখিত ভাবে চিঠিতে জানাতে বলা হয়েছে।

এ টিকা যখন পরিবহণের জন্য প্রস্তুত করা হবে তখন চীনের পক্ষ থেকে তারিখটি জানানো হবে। পরিবহণকালীন টিকাগুলোর কোল্ড চেইন প্যাকিং বাক্সে থাকবে। যেখানে এগুলো ২ থেকে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় ৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত রাখা যাবে। বৃহস্পতিবার চীনা কোম্পানি সিনোফার্মের তৈরি করোনাভাইরাসের টিকা জরুরি ব্যবহারের অনুমোদন দেয় বাংলাদেশ সরকার। অনুমোদনের পর এ বিষয়ে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মাহবুবুর রহমান বলেছেন, সিনোফার্ম যে টিকা উদ্ভাবন করেছে, আমরা সেটার ইমার্জেন্সি ইউজেজ অথরাইজেশন দিয়েছি।

সিনোফার্মের তৈরি করোনাভাইরাসের টিকার আনুষ্ঠানিক নাম বিবিআইবিপি-সিওআরভি (BBIBP-CorV)। এ টিকাও ২৮ দিনের ব্যবধানে দুই ডোজ করে নিতে হয়। পরীক্ষামূলক প্রয়োগে এ টিকা ৭৯ দশমিক ৩৪ শতাংশ কার্যকারিতা দেখিয়েছে বলে জানিয়েছে উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান।

ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, এ টিকা কেনা হবে সরকারি পর্যায়ে। চীন অনুদান হিসাবে ৫ লাখ ডোজ টিকা দিয়েছে। এগুলো আগামী এক থেকে দুই সপ্তাহের মধ্যে বাংলাদেশে আসবে। এ টিকার প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপের ট্রায়াল সম্পন্ন হয়েছে চীনে। তৃতীয় পর্যায়ের ট্রায়াল বিশ্বের পাঁচটি দেশের ৫৫ হাজার মানুষের ওপর হয়েছে। 

তিনি আরও জানিয়েছেন, ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের পাবলিক হেলথ ইমার্জেন্সি কমিটি এ টিকার সব নথিপত্র যাচাই করেছে। সার্বিক দিক বিবেচনা করে আমাদের যে কমিটি আছে, সেই কমিটি এ টিকার জরুরি ব্যবহারের অনুমোদন দেওয়ার জন্য সুপারিশ করেছে।সেই সুপারিশের ভিত্তিতে চীনের সিনোফার্মের এ টিকার জরুরি ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছি। তিনি বলেন, টিকা বাংলাদেশে আসার পর প্রথমে ১ হাজার মানুষের ওপর প্রয়োগ করে তাদের পর্যবেক্ষণ করা হবে।

আমরা দেখব এ টিকার সেফটি এবং অ্যাফিকেসি কেমন। এরপর গণটিকাদান কার্যক্রমে সিনোফার্মের টিকা ব্যবহার করা হবে।ঔষধ প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, শুধু আমদানি নয়, সিনোফার্মের টিকা দেশেই উৎপাদনের জন্য ইতোমধ্যে নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে সরকার। প্রযুক্তি হস্তান্তরের মাধ্যমে অথবা কাঁচামাল নিয়ে এসে বাংলাদেশের ওষুধ উৎপাদনকারী কোম্পানিতে টিকা উৎপাদন করা যাবে

বাংলাদেশের ইনসেপ্টা, পপুলার এবং হেলথকেয়ার ফার্মার টিকা উৎপাদনের সক্ষমতা আছে। তবে প্রাথমিকভাবে ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালসের সঙ্গে কথা হচ্ছে বলে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক জানান।তিনি বলেন, চীনের প্রতিনিধি আসবেন। তিনটি ফার্মাসিউটিক্যালসই দেখবেন, সক্ষমতা যাচাই করবেন। তারপরে একটা সমঝোতা হবে।

করোনাভাইরাস মহামারি মোকাবিলায় সরকার দেশের ১৩ কোটির বেশি মানুষকে টিকা দেওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছে। সেই লক্ষ্যে নভেম্বরে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের সঙ্গে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ৩ কোটি ডোজ টিকা কিনতে চুক্তি করে সরকার।তবে চুক্তি অনুযায়ী যথাসময়ে টিকা দিতে না পারায় বিকল্প হিসাবে বুধবার রাশিয়ার গামালিয়া ইনস্টিটিউট উদ্ভাবিত স্পুটনিক-ভি এবং বৃহস্পতিবার চীনের সিনোফার্ম উদ্ভাবিত বিবিআইবিপি-সিওআরভি জরুরি ব্যবহারে জন্য অনুমোদন দেয় সরকার।