(প্রয়াত কৃষিবিদ ড. নিয়াজ পাশার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে)
শিশির ভেজানো গা,
দুবলা ঘাসের ডগা শীতল পরশ,
পাখির মত মুক্তডানা দু‘হাত দু’পাশ ছড়ানো
বুক চেতানো হাওর হাওয়ায়
ভেসে ভেসে দূরন্ত ছুটে চলা-
সেই নির্মল আনন্দ একদিন হঠাৎ
স্তব্ধ, নিঃশব্দ, ফ্যাকাশে-বিস্বাদ।
নিঃশ্বাসে তপ্ত সীসার ছ্যাঁকা,
নিয়াজউদ্দিন পাশা-‘বড় একা”।
জল-কাদা, ডোবায় দিনভর হাতরে হাতরে
মাছের ঝাপটা, বক, ডাহুক, চিল, মাছরাঙা
দলে দলে হাঁস, জলকেলী-
শাপলা-শালুক, হঠাৎ দেওয়ার গর্জে উঠা
বিজলীর চমকে উঠা ঝলকানি
কখন কোথায় জানি
সব হারানোর বুকছেঁড়া করুণ সুর
সানাইয়ের মত রাখাল বালকের
বাঁশি বেজে উঠে মৃত্যু যন্ত্রণায়
রন্ধ্রে রন্ধ্রে বিঁধে বিষমাখা তীর
জীর্ণ-শীর্ণ কৃষকপ্রাণ-নিঃস্বনীড়।
সবুজ ফসলের জমি
দিগন্তে আকাশ নীল
ছেঁড়া ছেঁড়া মেঘ-পরীর ওড়াউড়ি
রঙিন ঘুড়ি হারিয়ে ফেলে খেই,
সুতাকাটা বুড়ি, রুগ্ন হাতের আঙ্গুল
ডগায় সর সর বেরিয়ে আসা ধারালো নখ
আগলে দাাঁড়ায় নিয়াজের পথ-ভবিষ্যৎ।
যে জমিন দিয়েছে জীবন
দিয়েছে ফসল,
সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না
গেছে প্রাণ ত্রিশ লাখ
যে জমিন মায়ের সমান স্নেহময়ী,
তার বুকে বেসামাল জল
তলতল ফসল-শেষ সম্বল।
আর কতবার, আর কত দেনা শুধাবে কৃষক
স্বপ্নরা সব রবে অধরা?
আর কত খড়া, জীর্ণ ও জরা
করবে গণনা খনা?
বহুত্যাগী রোষে মনে মনে ফুঁসে ‘হাওর ভূমিপুত্র’-
কঠিন-শপথ পাহাড় ডিঙিয়ে ছুটে।
ধীরে ধীরে তাঁর আশার দুয়ারে
স্বপ্নপুরীর দূত,
সফলতা আর হাওরবাসীর
ডালায় সাজানো সুখ-
নিয়ে এসে দেখে,
সব দেনা শুধে, দেনায় ডুবিয়ে
কখন নীরবে নিয়াজপাশা
সবার থেকে অভিমান ভরে
ফিরায়ে নিয়েছে তাঁর
লুকানো আশার- ‘কৃষকপুত্র-মুখ’ ।
গাজীপুর, ১৫ এপ্রিল-২০১৭
বহুমাত্রিক.কম