Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

বৈশাখ ১২ ১৪৩১, শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪

কীভাবে মানুষ মনে রাখবে প্রয়াত মহিউদ্দিন চৌধুরীকে

বহুমাত্রিক ডেস্ক

প্রকাশিত: ০৯:১৮, ১৬ ডিসেম্বর ২০১৭

আপডেট: ০০:০০, ৩১ ডিসেম্বর ১৯৯৯

প্রিন্ট:

কীভাবে মানুষ মনে রাখবে প্রয়াত মহিউদ্দিন চৌধুরীকে

ঢাকা : প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী একেবারে তৃণমূল থেকে উঠে এসে বাংলাদেশের রাজনীতিতে তার অবস্থান গড়ে তুলেছিলেন।

সদ্যপ্রয়াত বন্দরনগরী চট্টগ্রামের সাবেক মেয়র এবং আওয়ামী লীগের বর্ষীয়ান নেতা এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী এ কারণেই তিনি মানুষের আস্থা অর্জন করতে সফল হয়েছিলেন বলে বলছিলেন তাঁর রাজনৈতিক সহকর্মীরা।

মি: চৌধুরীর জানাজায় শুক্রবার হাজার হাজার মানুষ অংশ নিয়েছেন।

কিডনিসহ বিভিন্ন জটিলতায় দীর্ঘদিন ভোগার পর আজ ভোররাতে চট্টগ্রামের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা গেছেন।

ষাটের দশকে চট্টগ্রাম সিটি কলেজের ছাত্র থাকাকালীন সক্রিয় রাজনীতির সাথে জড়িয়ে পড়েন মহিউদ্দিন চৌধুরী। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র রাজনীতির মধ্যে দিয়ে যুক্ত হন ছাত্রলীগের সাথে।

তিনি ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন। সেসময় তিনি পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হাতে একবার গ্রেফতারও হয়েছিলেন। শেষপর্যন্ত সেখান থেকে পালিয়ে ভারতে গিয়ে প্রশিক্ষণ নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন।

তাঁর ঘনিষ্ঠজন ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা জামাল হোসেন বলেন তিনি দীর্ঘ রাজনৈতিক সংগ্রামের ভেতর দিয়ে এপর্যায়ে এসেছেন।

``তিনি শ্রমজীবি মানুষের সাথে রাজনীতি করেছেন। তিনি সিটি কলেজের ছাত্র থাকার সময় রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। শ্রমিক সংগঠন ও ছাত্র সংগঠনের সাথে জড়িত ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধে তিনি সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। মেয়র থাকাকালীন এবং মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তাঁর বেডরুম পর্যন্ত সর্বসাধারনের জন্য উন্মুক্ত ছিল। ৯৬-এ তিনি একবার গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। মুহুর্তের মধ্যে সারা চট্টগ্রামের মানুষ রাস্তায় নেমে পড়েছিল। প্রশাসন ভেঙে পড়েছিল।``

মুক্তিযুদ্ধের পর শ্রমিক রাজনীতির সাথে যুক্ত হন মহিউদ্দিন চৌধুরী। চট্টগ্রামের সাংবাদিক আবুল মোমেন বলেন রাজনীতির পাশাপাশি মহিউদ্দিন চৌধুরী বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময়ে মানুষের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন, যার মধ্যে দিয়ে তাঁর একটা বাড়তি পরিচয় গড়ে উঠেছিল।

``যখনই মানুষ দু:খ দুর্দশার মধ্যে পড়েছে, তিনি কখনো মানুষকে ফেলে যাননি। ১৯৯১ এর সাইক্লোনের সময় বাড়িঘর হারা মানুষকে শহরে তুলে এনে সেবা করেছেন। এটা তাঁর একটা টার্নিং পয়েন্ট।``

``দ্বিতীয় একটা ঘটনা হলো তিনি যখন চট্টগ্রাম শহরের মেয়র তখন ভূমিকম্পে শহরের একটি দালানের নিচে ৬-৭ জন চ্যাপ্টা হয়ে মারা যায়। তখন ডোমরা পর্যন্ত দুর্গন্ধের কারণে এগুলোর কাছে যেতে চাইছিল না। মহিউদ্দিন চৌধুরী অবলীলায় সেই লাশগুলো তুলে আনেন ও তাদের দাফনের ব্যবস্থা করেন। আন্দোলন সংগ্রামেও মুখোমুখি দাঁড়িয়ে তিনি লড়াই করেছেন। এজন্য মানুষের আস্থা অর্জন করেছিলেন তিনি,`` বলছিলেন আবুল মোমেন।

মহিউদ্দিন চৌধুরী শুধু চট্টগ্রামে নয় পুরো বাংলাদেশের মানুষের কাছে পরিচিত হয়ে ওঠেন ১৯৯৪ সালে, যখন তিনি প্রথমবারের মত চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র নির্বাচিত হন। সেসময় তাঁর সাথে ওয়ার্ড কমিশনার নির্বাচিত হয়েছিলেন মঞ্জুর আলম, যিনি পরবর্তীতে বিএনপিতে যোগ দিয়ে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র হয়েছিলেন। মঞ্জুর আলমের দৃষ্টিতে মহিউদ্দিন চৌধুরী রাজনীতির পাশাপাশি মেয়র হিসেবেও সাফল্য দেখিয়েছেন।

``ওঁনার মেধা দিয়ে কাঙ্খিত উন্নয়নের লক্ষ্যে উনি অনেককিছু করতে চেষ্টা করেছিলেন, কিছুটা সফলও হয়েছেন। বেসিক সেক্টরে, স্বাস্থ্য সেবাকে তিনি প্রাধান্য দিয়েছেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মাধ্যমে। একজন সফল মেয়র ছিলেন তিনি। আর গণমানুষের নেতা ছিলেন। যখনই সাধারণ মানুষের অধিকার হরণ হয়েছে, তিনি তাৎক্ষণিকভাবে তার প্রতিবাদ করেছেন।``

১৯৭৫ সালে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানকে প্রায় সপরিবারে হত্যার ঘটনা মহিউদ্দিন চৌধুরীর ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলেছিল বলে মনে করেন আবুল মোমেন । তিনি বলছেন সেই ঘটনার প্রতিবাদে মি: চৌধুরী সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টাও করেছিলেন।

আবুল মোমেন বলছেন মহিউদ্দিন চৌধুরী তার নিজের চিন্তা প্রকাশ করার জন্য অনেক সময় নিজের দলের সিদ্ধান্তের বিপক্ষেও গিয়েছেন এবং ফলে তাকে বিতর্কের মুখেও পড়তে হয়েছে।

``যখন একটা বিষয় তিনি উপলব্ধি করতেন যে এটা জনগনের কল্যাণের কাজ, তখন তিনি কাজটা হাতে তুলে নিতেন। কোন কাজ তাঁর দলের কেউ কেউ হয়তো পছন্দ করেনি, কিন্তু তিনি তার তোয়াক্কা করেননি। বৃহত্তর জনস্বার্থে তিনি কাজ করেছেন। এজন্য তার কোনো কোনো কাজ নিয়ে বিতর্ক হয়েছে, দলের সকলে তার সাথে একমত হননি। কিন্তু তিনি দলের বাইরে অনেক মানুষের সমর্থন পেয়েছেন। আবার অনেকসময় নাগরিক সমাজের কোনো কোনো ভূমিকার সাথে তাঁর ভূমিকার মিল হয়নি। তবে তিনি যেহেতু রাজনীতিবিদ, যখন তিনি বুঝেছেন যে এটা বেশীদূর টানা করা যাবে না, তখন সেটা বাদ দিয়েছেন। কিন্তু সবসময় জনস্বার্থকেই অগ্রাধিকার দিয়েছেন।

আওয়ামী লীগের নেতারা বলেছেন মহিউদ্দিন চৌধুরীর সমসাময়িক অনেক রাজনীতিবিদ মন্ত্রীত্ব কিংবা দলের সিনিয়র নেতার পদ পেলেও তিনি সবসময় নিজেকে চট্টগ্রামের রাজনীতির সাথেই যুক্ত রাখতে চেয়েছিলেন।

-বিবিসি বাংলা

Walton Refrigerator Freezer
Walton Refrigerator Freezer