মৌলভীবাজার : নিজ দেশে ফেরত যাওয়ার সময় ১৯২১ সালে ২০ মে চাঁদপুর মেঘনা ঘাটে নিরীহ চা শ্রমিকদের উপর নির্বিচারে গুলি করে হত্যা করে মেঘনা নদীতে ফেলার ঘটনায় চা শ্রমিকরা মুল্লুক চলো বা হত্যা দিবস উপলক্ষে কমলগঞ্জে দুটি চা বাগানে শ্রমিক সমাবেশ করেছে।
চা শ্রমিক সমাবেশে দৈনিক মজুরি বৃদ্ধি, ভূমির অধিকারসহ বিভিন্ন দাবি উত্তোলন করেন শ্রমিক নেতৃবৃন্দ। রোববার সকাল ১১টায় চা বাগান পঞ্চায়েত ও শ্রমিকদের আয়োজনে প্রথম শ্রমিক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয় মৃর্তিঙ্গা চা বাগান নাচঘর প্রাঙ্গনে এবং বিকাল ৪টায় শমশেরনগর চা বাগান পঞ্চায়েত ও চা শ্রমিক, ছাত্র-যুবকদের আয়োজনে দ্বিতীয় সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয় শমশেরনগর চা বাগান নাচঘর প্রাঙ্গনে।
সকাল ১১টায় মৃর্তিঙ্গা চা বাগান পঞ্চায়েত সভাপতি নিরঞ্জন তন্ত বাই-এর সভাপতিত্বে চা শ্রমিক সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারন সম্পাদক রাম ভজন কৈরী। বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন চা শ্রমিক নেতা ও কালিঘাট ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান পরাগ বাড়ই, পরেশ কালেঞ্জী, ইউপি সদস্য ধনা বাউরী, কুল চন্দ্র তাঁতী ও ছাত্র যুবক নেতা প্রদীপ মুন্ডা।
বক্তারা বলেন, ব্রিটিশ সরকার ১৮৩৪ সালে ভারতের বিভিন্ন রাজ্য থেকে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষজকে নানা প্রলোভন দেখিয়ে বাংলাদেশে (তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে) এনে ব্রিটিশরা এ অঞ্চলে চায়ের আবাদ শুরু করে। এসব মানুষজন পাহাড়ি এলাকায় চায়ের গোড়া পত্তন করতে গিয়ে চা বাগান মালিক ও ম্যানেজারদের হাতে নানাভাবে নির্যাতন ও নিপিড়নের শিকার হলে ১৯২১ সালে শুরু করে মুল্লোক চলো (নিজের আবাস ভূমি ভারতে) আন্দোলন। এ কর্মসূচী হিসাবে চা শ্রমিকরা পায়ে হেটে চাঁদপুর মেঘনা ঘাটে গিয়ে নৌপথে ভারতে ফেরার সময় তৎকালীন ব্রিটিশ সরকারের গুর্খা রেজিমেন্টের নির্বিচারে গুলিতে অসংখ্য চা শ্রমিক মারা যায়। অনেক চা শ্রমিককে পেট কেটে মেঘনা নদীতে ভাসিয়ে দেয়। তখন থেকে প্রতি বছর ২০ মে চা শ্রমিক হত্যা দিবস হিসাবে পালন করা হয়।
শ্রমিক নেতারা বলেন, সারাদিন ঝুঁকির মাঝে কঠোর পরিশ্রম করে একজন চা শ্রমিক দৈনিক মজুরি পাচ্ছে মাত্র ৮৫ টাকা। তাতে একজন শ্রমিকের সংসার চলে না। তাই অবিলম্বে নতুন মজুরি চুক্তি করে তা কার্যকর করতে হবে। চা শ্রমিকরা যে ভূমিতে বাস করছে সে ভূমিতে স্থায়ীভাবে বসবাসের অধিকার দিতে হবে। শ্রমিক বস্তির জরাজীর্ণ ঘরগুলি মেরামত করে দিতে হবে। সরকারী চাকুরি ও উচ্চ শিক্ষায় চা শ্রমিক সন্তানদের কোটা দিতে হবে।
বিকালে শমশেরনগর চা বাগান পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি নিপেন্দ্র বাউরীর সভাপতিত্বে ও মোহন রবিদাসের সঞ্চালনায় স্থানীয় নাচঘর প্রাঙ্গনে চা শ্রমিক সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন শমশেরনগর ইউনয়িন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. জুয়েল আহমদ। বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন ইউপি সদস্য ইয়াকুব আলী, এম এ আহাদ, গোপাল মাদ্রাজী ও নিলু গোয়ালা।
বহুমাত্রিক.কম