 
									
																	ঢাকা : ২০৫০ সাল নাগাদ বিশ্বের জনসংখ্যা এক হাজার কোটিতে দাঁড়াবে বলে ধারনা করা হচ্ছে।সীমিত জমিতে যে পরিমাণে চাষ ইতিমধ্যেই হয়েছে আর তাতে পরিবেশের যে ধরনের ক্ষতি হয়ে গেছে, ভবিষ্যতে যতটুকু আর সম্পদ বাকি থাকবে তা দিয়ে বিশাল সেই জনসংখ্যার খাদ্যের যোগান কিভাবে হবে?
এই প্রশ্নটি বেশ ভাবনা তৈরি করেছে। যেমন ভিয়েতনামের কথাই ধরা যাক।সেখানে এখন চলছে ফসল লাগানোর মৌসুম। সেখানে গ্রামগুলোতে এখন যেদিকে দুচোখ যায় দেখা যাবে বিখ্যাত ভিয়েতনামিজ সেই হাতে বোনা ত্রিভুজ আকারের ঝাঁপি মাথায় দিয়ে কৃষকরা মাটিতে চারা গুঁজছেন।
দেশটির অর্থনীতি এবং খাদ্যের যোগানের জন্য ধান চাষ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। দেশটিতে কৃষকেরা বেশি ফলনের জন্য নাইট্রোজেন রয়েছে এমন সারের উপর খুব নির্ভরশীল। কিন্তু সেই নাইট্রোজেন পানিতে মিশে যাচ্ছে।
নদী আর সমুদ্র দূষণ হচ্ছে। বাষ্পীভূত হয়ে মিশে যাচ্ছে বায়ুমণ্ডলে।ভিয়েতনামের রাজধানী প্রাণচঞ্চল হ্যানয় শহর থেকে দুই ঘণ্টা গেলে তিয়েন হাই।ছোট এই শহরে রয়েছে আন্তর্জাতিক এক গবেষণা কেন্দ্র।
সরাসরি প্রকৃতি থেকে গাছে নাইট্রোজেন নিতে সহায়তা করে এমন একটি ব্যাকটেরিয়া দিয়ে এখানে ধান চাষ করে পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে সেটি কৃষকদের সারের উপর নির্ভরশীলতা কমাতে পারে কিনা।
যা ভবিষ্যতে দূষণ কমাতে সাহায্য করবে। এই গবেষণার নেতৃত্ব দিচ্ছেন ভিয়েতনামের ফিল্ড ক্রপ রিসার্চ ইন্সটিটিউটের ডঃ ফ্যাম থি থু হুয়ং।
তিনি ব্যাখ্যা করে বলছিলেন, "অন্য আরো অনেক ফসলের মতো ধান দরকারি নাইট্রোজেনের জন্য সারের উপর নির্ভরশীল। যার পঞ্চাশ শতাংশই বাষ্প হয়ে যাচ্ছে বা ধুয়ে যাচ্ছে। যা থেকে নাইট্রোজেন ডাই-অক্সাইড তৈরি হচ্ছে। যা গ্রীনহাউস গ্যাস হিসেবে কার্বন ডাই-অক্সাইডের চেয়ে তিন`শ গুন বেশি ক্ষতিকর"
ডঃ হুয়ং ঐ বিশেষ ব্যাকটেরিয়া মেশানো ১৫ দিন বয়সী ধানের চারা এবং ব্যাকটেরিয়া বিহীন চারা রোপণ করছেন এবং তার ফলনের ওপরে নজর রাখছেন। চারাগুলোর ওজন ঐ উচ্চতা পর্যবেক্ষণ করছেন।
এই ব্যাকটেরিয়া বিশেষ করে আখ গাছে পাওয়া যায়। যা আখ গাছকে সরাসরি প্রকৃতি থেকে তার দরকারি নাইট্রোজেন নিতে সহায়তা করে।
মৃত বলয়
এই নাইট্রোজেন প্রধান সারের ও কীটনাশক ব্যবহার শুরু হয়েছিলো ষাটের দশকে। যখন `সবুজ বিপ্লব` শুরু হয়েছিলো।সেই সময় এর ব্যবহার লক্ষ লক্ষ মানুষের খাদ্যের যোগান দিয়েছিলো।
কিন্তু এর মারাত্মক বেশি ব্যবহারে তা সমুদ্রে ও অন্যান্য পানিতে মিশে যেতে থাকে। এক পর্যায়ে এর গুণাবলী অকার্যকর হয়ে ওঠে। বাড়তি নাইট্রোজেন এক ধরনের শ্যাওলার জন্ম দেয়। যা পচে গিয়ে এতটাই বেশি অক্সিজেন ব্যবহার করে যে আশপাশের অন্যান্য জলজ জৈববৈচিত্রের জন্য তা শ্বাসরোধী হয়ে ওঠে।
পৃথিবী জুড়ে এখন এরকম ৫০০ টি এলাকা রয়েছে যাকে বলা হয় `ডেড যোন`। গত পঞ্চাশ বছরে এর পরিমাণ চারগুণ বেড়েছে।
কৃষকের কথা
ভিয়েতনামে বছরে তিনবার লক্ষ লক্ষ কৃষকেরা কোটি কোটি চারা বপন করছেন।বছরে তা থেকে ১৩ শ কোটি ডলার আয় হয়। ভাল ফলনের উপর নির্ভরশীল বুই থি সুয়টের পরিবার।
তিনি বলছেন, "সার ব্যবহারে পরিবেশের ক্ষতির কথা সম্পর্কে আমরা জানি। কিন্তু ফসলের তো সার দরকার হয়। আমরা কৃষক। আমাদের আর কোন উপায় নেই"
সুপার ব্যাকটেরিয়া সমাধান?
এখন প্রশ্ন হচ্ছে বিশ্বের অর্ধেক কৃষক ও ফসল যখন কৃত্রিম সারের উপর নির্ভরশীল তখন পরিবেশের আর ক্ষতি না করে পৃথিবীর বিশাল জনগোষ্ঠীর জন্য খাবারের যোগান কিভাবে নিশ্চিত করা সম্ভব?
ডঃ হুয়ং এর ব্যাকটেরিয়া চিকিৎসা নিয়ে পরীক্ষা হয়ত তার একটি সমাধান হতে পারে।এই অভিনব ব্যাকটেরিয়া সম্ভাবনা প্রথম বের করেন যুক্তরাজ্যের ক্রপ নাইট্রোজেন ফিক্সেশান সেন্টারের জীববিজ্ঞানী ডঃ টেড ককিং।
যা পরীক্ষাগারে সফল হয়েছে।ডঃ ককিং এর প্রচেষ্টা ছিল মাঠে কিভাবে এই পদ্ধতি সফল করার যায় সেদিকে।
২০১১ সালে তিনি কৃষি উদ্যোক্তা পিটার ব্লেজার্ডের সাথে মিলিত হয়ে কাজ শুরু করেন।তারা অ্যাযোটিক নামে একটি কোম্পানি গড়ে তোলেন যা ভিয়েতনামে ডঃ হুয়ং এর পরীক্ষার জন্য অর্থ সহায়তা দিচ্ছে।
মিঃ ব্লেজার্ডের আশা আগামী বসন্ত মৌসুম থেকে পাউডার অথবা তরল আকারে এই সুপার ব্যাকটেরিয়া বাজারে পাওয়া যাবে।তিনি বলছিলেন, "এখন আমরা যুক্তরাষ্ট্র ও ইওরোপে ভুট্টা ও সয়া শস্যের উপরে কাজ করছি। ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড ও ফিলিপিন্সে ধানের উপরে পরীক্ষা চালাচ্ছি। ভিয়েতনামে আমরা লক্ষ করছি নাইট্রোজেন সার ৫০ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। ধান উৎপাদনও ১৫ শতাংশ বেড়েছে"
কিন্তু সবাই খুশি নন
যুক্তরাজ্যের রথামস্টেড রিসার্চের অণুজীব বিজ্ঞানী ডঃ টিম মশলাইন।পৃথিবীর সব এলাকায় সকল প্রকার ফসলে এই সুপার ব্যাকটেরিয়া পদ্ধতি কাজে আসবে কিনা সেনিয়ে সন্দেহ পোষণ করছেন এই বিজ্ঞানী।
তাঁর মতে, "এই পৃথিবীটা বিশাল একটা যায়গা। এর বিভিন্ন এলাকায় রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন পরিবেশ, আবহাওয়া, মাটি ও ফসল। একটা ওষুধেই যদি সব অসুখ সেরে যেতো তাহলে খুবই দারুণ হতো"
কিন্তু সবাই খুশি নন
যুক্তরাজ্যের রথামস্টেড রিসার্চের অণুজীব বিজ্ঞানী ডঃ টিম মশলাইন।পৃথিবীর সব এলাকায় সকল প্রকার ফসলে এই সুপার ব্যাকটেরিয়া পদ্ধতি কাজে আসবে কিনা সেনিয়ে সন্দেহ পোষণ করছেন এই বিজ্ঞানী।
তাঁর মতে, "এই পৃথিবীটা বিশাল একটা যায়গা। এর বিভিন্ন এলাকায় রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন পরিবেশ, আবহাওয়া, মাটি ও ফসল। একটা ওষুধেই যদি সব অসুখ সেরে যেতো তাহলে খুবই দারুণ হতো"
বিবিসি বাংলা





 
											 
											 
											 
											 
											 
											 
											