Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

বৈশাখ ১২ ১৪৩১, শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪

মৌলভীবাজারে প্রবাসীরা চরম দুর্ভোগে : শেষ হচ্ছে ভিসার মেয়াদ

নূরুল মোহাইমীন মিল্টন, নিজস্ব প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ২১:০০, ২ সেপ্টেম্বর ২০২০

প্রিন্ট:

মৌলভীবাজারে প্রবাসীরা চরম দুর্ভোগে : শেষ হচ্ছে ভিসার মেয়াদ

ফাইল ছবি

প্রবাসী অধ্যূষিত মৌলভীবাজারে মধ্যপ্রাচ্য ফেরত প্রবাসীরা চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। বাড়তি টাকা দিয়ে টিকেট করার পরও বারবার বাতিল হচ্ছে ফ্লাইট। ফলে আর্থিকভাবে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার অভিযোগ তুলেছেন প্রবাসীরা।

প্রবাসীদের মধ্যে কারো ভিসার মেয়াদ, কারো টিকেটের মেয়াদ, কারো একামার মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে পড়ায় তারা ভোগান্তি ও ঋণগ্রস্ত হওয়ায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। প্রবাসের কর্মস্থলে ফিরে যেতে সরকারের সহায়তা দাবী করে ইতিপূর্বে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রী বরাবরে আবেদনসহ স্থানীয়ভাবে সংবাদ সম্মেলনও করেছেন।

মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ থেকে আসা প্রবাসীরা অর্থাভাব, দুর্ভোগ ও কষ্টে দিনাতিপাত করছেন। জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার পতনঊষার ইউনিয়নের এসব প্রবাসীরা প্রয়োজনীয় আইনী সহায়তা চেয়ে গত ৭ জুলাই কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় মন্ত্রী বরাবরে আবেদন করেন এবং ১১ জুলাই সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে সরকারের সহায়তা দাবি করেন। তবে এখন পর্যন্ত কোন ধরণের সহায়তা পাচ্ছেন না বলে তারা অভিযোগ তুলেছেন।

প্রবাসী সোহেল আহমদ বলেন, আমরা পরিবারের আট, দশ জন সদস্যের হাল ধরলেও আমাদের সমস্যা নিয়ে কাউকে বলতেও পারছি না, সইতেও পারছি না। দেশে আটকাপড়া প্রবাসী শ্রমিক হিসেবে মানবিক দিক বিবেচনা করে দেশে থাকাকালীন সময়ে প্রণোদনা ও সহজ শর্তে ব্যাংক ঋণ প্রদান এবং সরকারি উদ্যোগে প্রবাসে ফেরত যাওয়ার প্রয়োজনীয় সহায়তার দাবি জানান।

আবুধাবি থেকে আসা পতনঊষার ইউনিয়নের আহমেদ আলী অভিযোগ করে বলেন, গত ১০ জানুয়ারী ২ মাসের জন্য আবুদাবি থেকে দেশে আসি। দু’মাস পর গত ১৯ মার্চ প্রবাসে ফেরত যাওয়ার জন্য ৩৮ হাজার টাকায় টিকিটও করি। পরে করোনা মহামারির জন্য টিকিট বাতিল হয়। দ্বিতীয় দফায় সিলেটে গিয়ে করোনা রিপোর্ট সংগ্রহ করে ৭৫ হাজার টাকা খরচ করে গত ১৯ আগষ্টের টিকিট করি। এরপর সে টিকিটও বাতিল হয়ে যায়। আহমেদ আলী বলেন, দেশে আসার পর থেকে টাকা পয়সা সব শেষ হয়ে ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়ছি। তারপর বারবার খরচ করেও প্রবাসের কর্মস্থলে যেতে পারছি না। ৩ হাজার ৫শ’ টাকার করোনা রিপোর্ট সংগ্রহ করতে তিন দিনে সিলেটে আসা যাওয়া সবমিলিয়ে খরচ হয়েছে ১০ হাজার টাকা। তাছাড়া দুই দফা অনলাইনেও আবেদন করেছি। কোন কাজ হচ্ছে না। এখন নি:স্ব হয়ে পড়ার উপক্রম হয়ে পড়ছি।

ওমান থেকে আসা উপজেলার পতনউষার ইউনিয়নের সালেহ আহমদ বলেন, চিকিৎসার জন্য গত ৩১ মার্চ একমাসের ছুটি নিয়ে দেশে আসি। এরপর করোনার কারণে আটকা পড়ি। পুনরায় ওমানের কর্মস্থলে যাওয়ার চেষ্টা করেও যেতে পারছি না। অথচ ৩ সেপ্টেম্বর ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে পড়ছে। পরিবার পরিজন নিয়ে কিভাবে চলবো তা ভেবে পাচ্ছি না। তিনি আরও বলেন, আমরা প্রবাসে ফেরত যেতে কিংবা সরকারী প্রণোদনা পেতে জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসসহ বিভিন্ন স্থানে ধর্ণা দিয়েও কোন ধরণের সুরাহা পাচ্ছি না। কাতার থেকে আসা শমশেরনগরের প্রবাসী এমলাক মিয়া বলেন, আমরাও জেলা প্রশাসক বরাবরে লিখিত অভিযোগ দিয়েও কোন সাড়া পাইনি।

প্রবাসীরা বলেন, পরিবার-পরিজন ও সংসারের হাল ধরতে বিভিন্ন সময়ে আমরা কাতার, আরব-আমিরাত, বাহরাইন, ওমান, কুয়েত, সোদিআরব, মালয়েশিয়া সহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে শ্রমিক হিসেবে গমন করি। দীর্ঘদিন ধরে এসব দেশ সমুহে কাজ করে উপার্জিত আয়ের একটি বড় অংশ দেশে পাঠিয়ে পরিবার ও সংসারের ভরনপোষন চালিয়ে যাচ্ছি। ছুটিতে এসে করোনা মহামারীর কারণে অর্ধসহ¯্রাধিক প্রবাসী বর্তমানে নানা জটিলতায় প্রবাসের কর্মস্থল দেশ সমুহে ফিরে যেতে পারছি না।

কারো ভিসার মেয়াদ উত্তীর্ণ, কারো টিকেটের মেয়াদ উত্তীর্ণ, কারো একামার মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে পড়ছে। এই সময় পর্যন্ত আমরা ব্যাপক ঋণগ্রস্থ হওয়ায় চরম দুর্ভোগের মধ্যে দিনাতিপাত করছি। বিভিন্ন ট্রেভেলস এজেন্সির সাথে যোগাযোগ করলেও তারা সঠিক কোন তথ্যাদি পাচ্ছেন না। ফিরত টিকেট থাকার পরও এসব প্রতিষ্ঠান প্রচুর টাকা দাবি করছে বলে অভিযোগ করেন।

এ ব্যাপারে মৌলভীবাজার জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসের সহকারী পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন বলেন, প্রবাসীদের একটি ফরম পুরণ করে উর্দ্বতন অফিসে প্রেরণ করা হচ্ছে। এছাড়া আপাতত তাদের জন্য আর কোন নির্দেশনা আসেনি।

বহুমাত্রিক.কম

Walton Refrigerator Freezer
Walton Refrigerator Freezer