ছবি : বহুমাত্রিক.কম
গাজীপুর: গাজীপুরের শ্রীপুরে জৈনাবাজার-কাওরাইদ আঞ্চলিক সড়কের পাশ থেকে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের ও স্থানীয় আওয়ামীলীগের নেতাদের বিরুদ্ধে দরপত্র ছাড়াই শত শত গাছ কাটার অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি এই সড়ক উন্নয়নের দরপত্র আহ্বানের পর এই গাছ কাটা শুরু হয়। যা অব্যাহত রয়েছে এখনও।
স্থানীয় জনসাধারণের তথ্য অনুযায়ী, জৈনা বাজার-কাওরাইদ সড়কের দৈর্ঘ্য ১৭ কিলোমিটার। এর মধ্যে তেলিহাটি ইউনিয়নে রয়েছে ৪ কিলোমিটার ও কাওরাইদ ইউনিয়নে ১৩ কিলোমিটার। প্রায় ২৫ বছর আগে এই সড়ক নির্মাণের পর স্থানীয় ও সরকারি উদ্যোগে সড়ক সংলগ্ন জমির মালিকরা আকাশমনিসহ বিভিন্ন ফলদ গাছের চারা রোপণ করেন। রোপণের সময় মৌখিক শর্ত ছিল এসব গাছ বিক্রির টাকা থেকে একটি অংশ রক্ষণাবেক্ষণকারীদের দেয়া হবে। কিন্তু সম্প্রতি শ্রীপুর উপজেলা প্রকৌশল বিভাগের উদ্যোগে এসব বৃক্ষ নিধন করে রাতের আধারে বিক্রি করে দেয়া হচ্ছে।
আবদার গ্রামের হাজী হেলাল উদ্দিন জানান, বিগত ২৫ বছর আগে সরকার এই সড়কের পাশে আকাশমনি, কড়ইসহ বিভিন্ন ধরনের গাছপালা রোপণ করেছিল। সে সময় আমাদেরকে বলা হয়েছিল গাছপালাগুলো রক্ষণাবেক্ষণ করলে বিক্রির সময় একটা অংশ আমাদের দেয়া হবে। কিন্তু এখন শ্রীপুরের প্রকৌশল বিভাগের উদ্যোগে গাছ কেটে নেয়া হচ্ছে। সবাই বলছেন সরকার গাছ লাগিয়েছে সরকারই কেটে নিচ্ছে তোমাদের কি? আমাদের দাবিগুলো কেউ শুনছে না।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের শ্রীপুর উপজেলা প্রকৌশলী পদোন্নতি পেয়ে গত ১৪ মে শ্রীপুর থেকে বদলী হয়ে নির্বাহী প্রকৌশলী পদে মাদারীপুর জেলায় যোগদান করা সুজায়েত হোসেন জানান, জৈনা বাজার-কাওরাইদ সড়কটি বর্তমানে একটি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক। ভারী যানবাহন চলার কারণে এই সড়কের বিভিন্ন স্থানে বড় বড় গর্ত তৈরী হয়েছে। ফলে জনদুর্ভোগ কমানোর লক্ষ্যে সম্প্রতি এই সড়কটির ১৭ কিলোমিটার এলাকা পুনঃনির্মাণের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়। যার কাজ পায় শান্তা এন্টারপ্রাইজ নামের একটি প্রতিষ্ঠান। আগাম বর্ষার কথা বিবেচনা এবং গাছ কাটার অনুমতির বিষয়ে অনেক সময় লাগে বিধায় আমরা স্থানীয় ঠিকাদারকে গাছ কেটে নির্দিষ্ট একটি জায়গায় সংরক্ষণের বিষয়ে বলেছি। পরে এক সময় অনুমতি এনে এসব গাছের দরপত্র আহ্বান করা যাবে। তবে যেহেতু এখন একটি বৈধ ও অবৈধ বিষয়ের একটি প্রশ্ন সামনে এসেছে তাই গাছ কাটা বন্ধের আদেশ দেয়া হয়েছে। বিধি অনুযায়ী এখন বাকি কাজ করা হবে।
তবে সদ্য যোগদান করা শ্রীপুর উপজেলা প্রকৌশলী শরিফউজ্জামান জানান, দরপত্র ছাড়া সরকারিভাবে বৃক্ষ কাটার কোন ধরনের সুযোগ নেই। তবে যদি কেউ এটা করে থাকেন তাহলে অন্যায় করেছেন। তিনি সদ্য যোগদান করায় এ বিষয়টা সম্পর্কে অবহিত নন।
এ বিষয়ে বনবিভাগের শ্রীপুর উপজেলা রেঞ্জ কর্মকর্তা আনিসুল হক জানান, সড়কের পাশ থেকে সামাজিক বনায়ন বা ব্যক্তি মালিকানাধীন গাছ কাটতে হলে বনজদ্রব্য পরিবহন (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা ২০১১ অনুযায়ী বনবিভাগের অনুমতি নিতে হবে। এই সড়কের গাছ কাটার বিষয়ে বনবিভাগকে কেউ এখন পর্যন্ত অবহিত করেননি। কিভাবে স্থানীয় সড়ক ও প্রকৌশল বিভাগ গাছ কাটছেন তারাই এ বিষয়ে ভালো বলতে পারবেন।
এই সড়কের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান শান্তা এন্টারপ্রাইজের মালিক কাজল ভূঁইয়া জানান, আমরা দরপত্র প্রাপ্তির পর কাজ শুরুর উদ্যোগ নিয়েছি। এ সময় দেখি সড়কের পাশের গাছগুলো একটা সমস্যা হয়ে দাড়িয়েছে। জনদুর্ভোগের কথা বিবেচনা করে বর্ষার আগেই যাতে কাজ শুরু করা যায় সে জন্য উপজেলা প্রকৌশলী সুজায়েত হোসেনের উদ্যোগে গাছগুলো কেটে নির্দিষ্ট একটি জায়গায় সংরক্ষণ করছেন। উপজেলা প্রকৌশলী বলেছিলেন পরে এ কাটা গাছের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। তবে গাছগুলো কোথায় সংরক্ষণ করা আছে এ বিষয়ে তিনি কিছু বলতে পারেননি।
গাজীপুর স্থানীয় সরকার ও প্রকৌশল বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল বারেক জানান, আমি সদ্য যোগদান করেছি। সরকার সড়কের পাশ থেকে তার প্রয়োজনে গাছ কাটতে পারে। তবে তা একটা বিধির মধ্য দিয়ে কাটতে হবে। এখানে দরপত্র দিয়ে বিধি অনুযায়ী গাছ কাটা হয়েছি কিনা তা খোঁজ নিয়ে দেখতে হবে। যদি না হয় তাহলে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বহুমাত্রিক.কম