সাগরে ভাসমান শহর ভেনিস। শহরের বড় খালগুলোতে আর প্রবেশ করবে না বড় ক্রুজ শিপ। এতে ক্ষতির মুখে পড়বে প্রবাসী বাংলাদেশিদের ২০০ শতাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।
ইতালীয় সরকার শুক্রবার ঘোষণা করেছে ভেনিস উপহ্রদের বড় খালে বড় জাহাজ প্রবেশ নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্তে ক্ষতিগ্রস্ত ক্রুজ শিপ সংস্থাগুলোকে ক্ষতিপূরণ হিসেবে ৫৭.৫ মিলিয়ন ইউরো দেবে।
নতুন নিয়ম গত আগস্টে মাস থেকে কার্যকর হয়েছে। কয়েক বছর সতর্কতা জারির পর গত আগস্টে তা কার্যকর হয়।ভেনিস শহরের প্রবেশ করে ভাসমান বিশাল জাহাজগুলো ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান ভেনিস লেগুন শহরের অপূরণীয় ক্ষতি করছে বলে ধারণা গবেষকদের।
ইউনেস্কো `বিপন্ন` অবস্থার হুমকিতে থাকা ভেনিসের কেন্দ্রে বড় ক্রুজ জাহাজ প্রবেশ নিষিদ্ধ করে।
ইতালির পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে একটি ভিন্ন রাস্তা পুনর্নির্ধারণ এবং ইতোমধ্যে ভ্রমণ বাতিল করায় যাত্রীদের অর্থ ফেরত দেওয়ায় জন্য ‘ক্ষতিগ্রস্ত শিপিং সংস্থাগুলোর জন্য ২০২১ সালে প্রায় ৩০ মিলিয়ন ইউরো বরাদ্দ করা হয়েছে।
বাকি ২৭.৫ মিলিয়ন ইউরোর মধ্যে এ বছরে আরও পাঁচ মিলিয়ন এবং বাকি ২০২২ সালে নতুন টার্মিনাল অপারেটর এবং সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে বলে জানান।
গত জুলাই মাসে ভেনিসের কেন্দ্রে বড় ক্রুজ জাহাজ নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত হয় জাতিসংঘের সাংস্কৃতিক সংস্থা ইউনেস্কোর এক বৈঠকে। যা আগস্ট মাসে কার্যকর হয়। ক্রুজ জাহাজগুলোকে ভেনিসের ঐতিহ্যবাহী স্থানগুলো রক্ষার যাতায়াত বন্ধের প্রস্তাব দেয় ইউনেস্কো ও ইতালীয় সরকার।
সরকারের পরিকল্পনার অধীনে, ভেনিস থেকে ক্রুজ জাহাজ সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করা হবে না। তবে বড় জাহাজগুলো আর সেন্ট মার্কস বেসিন, সেন্ট মার্কস খাল বা জোদেক্কা খাল দিয়ে যেতে পারবে না। এর পরিবর্তে, সেইগুলা মূলভূমির মারঘেরার বন্দরে ভিন্ন পথে স্থানান্তর করা হবে। কিন্তু পরিকল্পনার সমালোচকরা বলছে মার্ঘেরা - যা মূল ভূখণ্ডে অবস্থিত, যা পুরাতন যাত্রী টার্মিনালের বিপরীতে এখনও তা ভেনিস লেগুনের মধ্যেই রয়েছে।
পরিকল্পনার কিছু দিক অস্পষ্ট রয়ে গেছে, কারণ মার্ঘেরার অবকাঠামো এখনও তৈরি সম্পূর্ণ হয়নি। এদিকে সেন্ট মার্কস এবং জোদেক্কা খালের মধ্য দিয়ে এখনও ছোট ক্রুজ শিপগুলো যাতায়াতে অনুমোদন রয়েছে।
ক্রুজ জাহাজগুলো ভেনিসকে একটি বিশাল অর্থনৈতিক যোগান দেয়। কিন্তু শহরের বাসিন্দারা বলছেন, জাহাজগুলোর `ওভারট্যুরিজম` এর কারণে সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে শহরের। সেই সঙ্গে বড় জাহাজের তরঙ্গ শহরের ভিত্তিকে দুর্বল করে দেয় এবং ভেনিস উপহ্রদের ভঙ্গুর ভিওিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।
ভেনিস জুড়ে প্রায় দুই শতাধিক বাংলাদেশি মালিকানাধীন ছোট ও মাঝারি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। শহরে বড় ক্রুজশিপ প্রবেশ করতে না পারলে বাংলাদেশি প্রবাসীদের ব্যবসার আর্থিক ক্ষতি হবে অনেক। প্রতিটি বড় জাহাজে চড়ে পাঁচ থেকে সাত হাজার পর্যটকের আগমন ঘটে ভেনিসে। সপ্তাহান্তে দিনে ১০টি ক্রুজশিপও প্রবেশ করে ভেনিসে। তখন বাংলাদেশি মালিকানাধীন দোকানগুলোতে রমরমা ব্যবসা চলে। এখন ক্রুজশিপ চলাচল বন্ধ থাকলে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হবে স্থানীয় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সাথে সাথে প্রবাসী বাংলাদেশিরাও।