
ছবি- সংগৃহীত
মানুষ যতটুকু সত্যিকারের বাঁচে, বোধহয় রুদ্ধশ্বাসে নিজের স্বপ্নপূরণের পথ বেয়ে চলায়। বাকী পৃথিবীর সকল চাপ অতিক্রম করে।’ নিজের ফেসবুক পোস্টে তার নিজের করা প্রিয় উক্তি এটি। এমনটাই বিশ্বাস করেন তিনি যে, শত বাঁধা স্বত্বেও কারো চাপে স্বপ্নকে পরিত্যগ করা যাবেনা। চিত্রা পাড়ের মেয়ে। পেশায় শিক্ষক। কিন্তু পাহাড় তার প্রেম ও প্রেমিক।
মায়ের কাছে বড় হতে হতে শুনেছেন তার ছোটবেলা কেটেছে পাহাড়ের কোলে সাগরের কূলে।কিন্তু বাবার কাজের এবং পৈতৃক ভিটারসুত্রে চিত্রার পাড়ে চলে এলেও মায়ের মনে দাগ কেটে থাকা পাহাড় ছোট্ট মেয়েটির মনে সেই যে ছাপ ফেলল! বড় হতে হতে তা যেনো পেয়ে বসলো রত্নাকে। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মেয়েটি বিগত তিন বছরে আরো বেশি ঘণিষ্ঠ হয়েছেন পাহাড়ের।
২০১৬ থেকে সেই প্রেম যেন হৃদয়ের গভীরে গেঁথে বসে। বাংলাদেশের প্রথম পর্বতারোহন ক্লাব বিএমটিসির সাথে এভারেস্ট জয়ী এম এ মুহিতের নেতৃত্বে বাংলাদেশের পাহাড় কেওক্রাডং চূড়া ছুঁয়ে দেওয়ার সময় রত্নার নাম হয়ে যায় আয়রণ লেডি। জীবনের চারপাশের অজস্র বাঁধা তাকে নিয়মিত আঘাত দিতে থাকে। মাশরাফিকে আইডল মেনে সামনে এগিয়ে চলা রত্না কোনো বাঁধাকে বাঁধা মনে করেননা।
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের বীরবিক্রম বাবা এস আফজাল হোসেন। যোদ্ধা বাবার মেয়ে রত্না বিশ্বাস করেন, নতুন যুদ্ধে দেশকে আলোকিত করতে পারবেন অবিশ্বাস্য অনেক বাধা পেরিয়ে হলেও।
প্রীতলতার বিদ্যায়তন ইডেনে গণিতে মাস্টার্স রত্না আগস্ট থেকে শুরু করতে চান শুধু হিমালয় নয় বরং মহাদেশ থেকে মহাদেশ জুড়ে পাহাড় চূড়া ছুঁয়ে দেওয়ার নতুন মাত্রার অভিযাত্রা। রত্না বলেন, এই অভিযান বাংলাদেশের অর্জনের জায়গায় সংযোজন করবে নতুনত্ব। কেননা এমনটি ঘটলে তা কোনো বাংলাদেশীর জন্য এটিই হবে প্রথম কারো সাফল্য। আমি বিশ্বাস করি প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে এই গর্ব স্পর্শ করতে পারবো।আর তাই সবগুলো মহাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ চূড়া স্পর্শের অংক মেলানোর শপথ নিয়েছি।’
চলতি বছরের আগস্ট থেকে পাঁচ মহাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উচ্চতার পর্বতগুলোতে উড়াতে চান লাল সবুজের পতাকা। শুরু করতে চান ইউরোপের ডিকটাও পাহাড় চূড়া ছুঁয়ে দেওয়ার মাধ্যমে। ৫২০৫ মি. উচ্চতা এই রাশিয়ার পাহাড় চূড়ার। তার পর একে একে আফ্রিকা, ওশেনিয়া, অষ্ট্রেলিয়া এবং ল্যাটিন মহাদেশ দক্ষিণ আমেরিকার্ চূড়াগুলো।
অর্থ্যাৎ আফ্রিকার দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পর্বত চূড়া মাউন্ট কেনিয়া-ব্যাটেইন পিক(৫১৯৯) মি., ওশানিয়ার সুমান্ত্রি-নাগা পুলু (৪৮৭০মি.), অষ্ট্রেলিয়ার টাউনসেন্ড (২২০৯মি.) এবং দক্ষিণ আমেরিকার ওজোস ডেল সালাদো (৬৮৯৩মি.) ছূড়া ছুঁয়ে দিতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ এই আয়রন লেডি পর্বতারোহী শিক্ষক নারী।
শারীরিক সক্ষমতা তৈরীতে তিনি ২০১৬ থেকে এখন পর্যন্ত পর্বতারোহণের মৌলিক ও উচ্চতর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন এশিয়ার বিখ্যাত পর্বতারোহণ প্রশিক্ষণ দানকারী প্রতিষ্ঠান নেহেরু ইনস্টিটিউট অব মাউন্টিইনিয়ারিং, উত্তরকাশি, উত্তরাখন্ড ভারত থেকে। নিয়মিত শরীরচর্চা, পর্বতারোহন বিষয়ে পড়াশোনা ও সুযোগ পেলেই পাহাড়ের কোলে ছুটে যাওয়া তার ধ্যাণজ্ঞাণ।
দরকার প্রয়োজনীয় পৃষ্ঠপোষকতা। রত্নার বিশ্বাস তার আইডল মাশরাফি, যিনি তার এলাকার সংসদ সদস্যও-তিনি পাশে দাড়াবেন এই অভিযাত্রায়। এছাড়াও নারীর ক্ষমতায়নে কিংবা অগ্রযাত্রায় সবসময় পাশে থাকা পৃষ্ঠপোষক প্রতিষ্ঠানগুলো পাশে থাকবে বলে বিশ্বাস রত্নার।